বাংলাদেশ

অনিরাপদ কর্মপরিবেশে প্রতিদিন মারা যায় সাড়ে ৭ হাজার মানুষ

  প্রতিনিধি ২০ মে ২০২৩ , ৫:০০:২৭ প্রিন্ট সংস্করণ

ভোরের দর্পণ ডেস্ক :

রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর থেকে দেশে কর্মপরিবেশের বেশ কিছুটা উন্নয়ন হয়েছে। তারপরও দেশে অনেক অপ্রতিষ্ঠানিক খাতে ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছে শ্রমিকরা। এ কারণে কর্মক্ষেত্রে শ্রমিকের স্বাস্থ্য ও পেশাগত নিরাপত্তায় আরো কাজ করতে হবে বলে মনে করেন বক্তারা।

শনিবার (২০ মে) রাজধানীর খামারবাড়িতে কৃষিবিদ ইনিস্টিটিউশন অডিটোরিয়ামে (কেআইবি) ‘সবার জন্য স্বাস্থ্য ও পেশাগত নিরাপত্তা’ শীর্ষক ভবিষ্যত প্রজন্ম সম্মেলনে বক্তারা এ কথা বলেন।

তারা বলেন, বিশ্বে প্রতিদিন সাড়ে সাত হাজার মানুষ কর্মপরিবেশের অনিরাপদতার কারণে মারা যায়। এরমধ্যে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোর শ্রমিকদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য।

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও), কানাডা এবং নেদারল্যান্ডসের সহযোগিতায় অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে ভলান্টারি সার্ভিসেস ওভারসিজ (ভিএসও) বাংলাদেশ।

সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন যুব উন্নয়ন অধিদফতরের মহাপরিচালক মো: আজহারুল ইসলাম খান। এতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ভিএসও বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর খবিরুল হক কামাল। অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি ছিলেন শ্রম আদালতের চেয়ারম্যান শেখ মেরিনা সুলতানা। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতরের মহাপরিদর্শক নাসির উদ্দিন আহমেদ, আইএলও বাংলাদেশের প্রোগ্রাম ম্যানেজার নীরান রামজুথান, আজকের পত্রিকার সম্পাদক গোলাম রহমান এবং বিজিএমইএর সহসভাপতি শহীদুল্লাহ আজিম। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন ভিএসও বাংলাদশের প্রজেক্ট ম্যানেজার মো: শফিকুর রহমান।

যুব উন্নয়ন অধিদফতরের মহাপরিচালক আজহারুল ইসলাম খান বলেন, দেশের যুবকরা এখন সবচেয়ে বড় শ্রমশক্তি। নিরাপদ কর্মপরিবেশ তৈরিতে তারা সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখতে পারে। সরকারও তাদের সাথে নিয়ে কর্মক্ষেত্রে স্বাস্থ্য ও পেশাগত নিরাপত্তায় কাজ করছে। এছাড়া আমাদের টেসকসই উন্নয়ন লক্ষ্যে যেতে নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিতের বিকল্প নেই। আমরা নিজেদের সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করতে চাই।

আইএলও বাংলাদেশের প্রোগ্রাম ম্যানেজার নীরান রামজুথান বলেন, আইএলওর হিসেবে সারা বিশ্বে প্রতিদিন সাড়ে ৭ হাজার মানুষ কর্মপরিবেশের অনিরাপদতার কারণে মারা যায়। এরমধ্যে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোর শ্রমিকদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য। আমরা দেখছি, বাংলাদেশে এখনো তরুণ ও যুবক শ্রেণি, যাদের বয়স ১৫ থেকে ২২ বছর তারা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

তিনি বলেন, এটা ঠিক যে শিশুশ্রম প্রতিরোধে বাংলাদেশ অনেক এগিয়েছে। রানা প্লাজার দুর্ঘটনার পরে সার্বিক নিরাপত্তায়ও বেশ উন্নয়ন হয়েছে। তারপরও বেশ কিছু অপ্রাতিষ্ঠানিকখাতে প্রচুর কাজ বাকি রয়েছে। কারণ প্রতিটি শ্রমিকের নিরাপদভাবে ঘরে ফেরার অধিকার এখনো সুনিশ্চিত হয়নি।

শ্রম আদালতের চেয়ারম্যান শেখ মেরিনা সুলতানা বলেন, কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনা প্রতিরোধে সরকার আন্তরিকভাবে কাজ করছে। দেশে অনেক আইন রয়েছে শ্রমিক ও তাদের উন্নত কর্মপরিবেশের জন্য। তাদের এ অধিকারগুলো আইন দ্বারা প্রতিষ্ঠিত। যদিও এগুলোর সঠিক ব্যস্তবায়ন এখনো সম্ভব হয়নি। কারণ আইনগুলো জানা ও সচেনতার অভাব রয়েছে মালিক ও শ্রমিক উভয়পক্ষের মধ্যেই।
অনুষ্ঠানে ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য কর্মক্ষেত্রে পেশাগত ঝুঁকি, নিরাপত্তা সম্পর্কিত শর্তগুলোকে চিহ্নিত করে অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। যেখানে সারা দেশ থেকে অসংখ্য যুব স্বেচ্ছাসেবক ও কর্মীরা তাদের পেশায় ঝুঁকিগুলো সম্পর্কে মতামত জানান। পাশাপাশি তাদের কর্মক্ষেত্রের নিরাপত্তা নিশ্চিতের উপায়গুলো নিয়েও আলোচনা করা হয়।

এছাড়া অনুষ্ঠানে শ্রমিকের কর্মক্ষেত্র, স্বাস্থ্য ও সবুজ কারখানা নিয়ে দুটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। একইসাথে এসব বিষয়ে বিভিন্ন কুইজ প্রতিযোগিতার আয়োজন ছিল। সেখানে বিজয়ীদের পুরস্কার প্রদান করা হয়।

উল্লেখ্য, ভিএসও বাংলাদেশ ১৯৭৪ সাল থেকে এ দেশে কাজ করছে। এ আর্ন্তজাতিক সংস্থাটি মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন, অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষা ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করা, শ্রমিকের নিরাপদ কর্মক্ষেত্র তৈরি এবং সুস্বাস্থ্য নিশ্চিতে কাজ করে যাচ্ছে। সংস্থাটি সারা দেশে সক্রিয়ভাবে কাজ করছে কর্মক্ষেত্রে নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিতের জন্য।

আরও খবর

Sponsered content