প্রতিনিধি ২২ এপ্রিল ২০২০ , ৭:০০:০২ প্রিন্ট সংস্করণ
এমদাদুল হক, শ্রীপুর (গাজীপুর) : করোনা ভাইরাসের কারণে ধান কাটা নিয়ে বিপাকে পড়া কৃষকদের পাশের দাঁড়িয়েছে গাজীপুর জেলা ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবকলীগ। করোনা পরিস্থিতিতে ধান কাটার শ্রমিক না পাওয়ায় বর্তমানে ছাত্রলীগ ও সেচ্ছাসেবক লীগের স্থানীয় নেতাকর্মীরাই এখন কৃষকদের ভরসা। কৃষকের ধান কাটা, বাড়ি নেয়া ও মাড়াই সবই করছেন ওই দুই সংগঠনের নেতাকর্মীরা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুযায়ী অসহায় কৃষকদের পাশে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয় গাজীপুরের ওই দুই সংগঠন।
বুধবার গাজীপুর জেলা ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক জাহিদুল আলম রবিনের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের ২০জন নেতাকর্মী উপজেলার গাজীপুর ইউনিয়নের বাঁশবাড়ি গ্রামের কৃৃষক হামিদ মিয়ার এক বিঘা জমির ধান কেটে দেন। তারা মাঠ থেকে ধান কেটে কৃষকের বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে দিয়েছেন। এছাড়াও সকল প্রকার সাহায্য করারও প্রতিশ্রæতি দিয়েছন।
কৃষক হামিদ মিয়া বলেন, ছাত্রলীগের এই সাহায্য তাদের জন্য অনেকটা আশার আলো দেখিয়েছে। সবাই যদি এভাবে অসহায় কৃষকদের পাশে দাঁড়ায় তাহলে কৃষকেরা ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পাবে। এমন কঠিন সময়ে তাদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য গাজীপুর জেলা ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীদের অভিনন্দন জানিয়েছেন।
শ্রীপুর উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল হাসান জানান, বুধবার সকাল ৮টার দিকে ছাত্রলীগের ২০ জন নেতা কর্মী মাওনা থেকে মোটর সাইকেল নিয়ে উপজেলার পশ্চিম সীমান্তবর্তী বাঁশবাড়ি গ্রামে গিয়ে কৃষক হামিদ মিয়ার এক বিঘা জমির ধান কেটে ওই কৃষকের বাড়ি পৌঁছে দেন।
এদিকে, একই দিনে পাকা ধান নিয়ে বিপাকে পড়া মাওনা ইউনিয়নের উত্তরপাড়া গ্রামের কৃষক নূরুল ইসলাম, ওয়াদুদ ও আল–আমীনের ফোন পেয়ে তাদের ৫ বিঘা জমির ধান কেটে তাদের বাড়ি পৌঁছে দিয়েছে গাজীপুর জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের নেতাকর্মীরা। বুধববার সকাল থেকে ১২০ জনের কর্মী নিয়ে উপজেলার ওই ইউনিয়নের কৃষকদের জমির ধান কাটেন তারা।
গাজীপুর জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি মোশারফ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, করোনাভাইরাসের এ দুর্যোগময় মুহুর্তে মাঠের পাকা ধান কাটার শ্রমিক না পাওয়ায় সমস্যায় পড়েন ওই কৃষকেরা। মঙ্গলবার বিকেলে স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবকলীগের একজন কর্মীর মাধ্যমে কৃষকেরা জানান তাদের জমিতে পাকা ধান পড়ে আছে, কিন্তু কোনো শ্রমিক পাচ্ছেন না।
ওই তিনজন কৃষকের সমস্যার কথা শুনে আমিসহ জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের ১২০ জন নেতাকর্মীদেরকে নিয়ে বুধবার সকাল ৭টায় ওই কৃষকদের পাকা ধানের জমিতে যাই। পরে আমরা সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে মাঠের পাকা ধান কেটে কৃষকের বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে আসি। তাদের এ কার্যক্রম কৃষকেরা ধান ঘরে না তোলা পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে বলেও জানান তিনি।
এ বিষয়ে কৃষক নূরুল ইসলাম ও ওয়াদুদ বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে ধান কাটার জন্য কোনো শ্রমিক পাচ্ছিলাম না। মাঠে পাকা ধানগুলো নষ্ট হওয়ার পথে। ধান নিয়ে বিপদে আছি শুনে গাজীপুর জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি মোশারফ হোসেন ভূঁইয়া তাদের দলীয় কর্মীদের নিয়ে এসে আমাদের ৫ কাঠা জমির ধান কেটে বাড়ি পর্যন্ত পৌছে দিয়েছেন। তারা যদি ধান কেটে না দিত তাহলে এ ধানগুলো মাঠেই নষ্ট হয়ে যেত।
কৃষক আল–আমীন বলেন, ধান কাটার সময় সাধারণত ৪’শ থেকে ৫’শ টাকা রোজে (দৈনিক ভিত্তিতে) শ্রমিক পাওয়া যেত। করোনা ভাইরাসের কারণে এক হাজার টাকা দিয়েও ধান কাটার শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। তাই পাকা ধান নিয়ে চিন্তিত ছিলাম। আমাদের এ সংকটের কথা শুনে বিনা পারিশ্রমিকে স্বেচ্ছাশ্রমে স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবকলীগের নেতাকর্মীরা ধান কেটে বাড়ি নিয়ে তা মাড়াই করে দিয়েছে।