দেশজুড়ে

আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর পাঠদানের মাধ্যমেই গড়ে তুলতে হবে শিশুদের

  অন্‌জন দাশ ২৭ আগস্ট ২০২৩ , ৭:২৩:১৫ প্রিন্ট সংস্করণ

আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর পাঠদানের মাধ্যমেই গড়ে তুলতে হবে শিশুদের

আগামীর স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবায়নে স্মার্ট নাগরিক তৈরি প্রথম শর্ত। এজন্য দেশের প্রতিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে স্মার্ট বিদ্যালয়ে রূপান্তর করতে হবে। প্রাথমিক বিদ্যালয়সমূহে গতানুগতিক শিক্ষাদান পদ্ধতি পরিহার করে আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর পাঠদানের মাধ্যমে গড়ে তুলতে হবে আজকের শিশুদের। সত্যিকারের সোনার বাংলা গড়ে তোলার জন্য যথাযথ সংস্কারের মাধ্যমে যেমনটি স্বাধীনতার পর যুদ্ধবিধ্বস্ত অবকাঠামো ও অর্থনীতি নিয়ে ভংগুর শিক্ষাব্যবস্থাকে ঢেলে সাজিয়েছিলেন জাতির পিতা বংগবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তারই ধারাবাহিকতায় জাতির পিতার শিক্ষাদর্শন অনুসরণ করে তাঁরই সুযোগ্য কন্যা, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের  মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এদেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন দৃঢ়ভাবে।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আধুনিক ভবন নির্মাণ, মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম, আধুনিক কম্পিউটার ল্যাব, স্মার্ট বোর্ড স্থাপন, ডিজিটাল ল্যাব ইত্যাদি স্থাপন করার যুগান্তকারী উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। এ ধরনের উদ্যোগ দেশের প্রতিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নেয়া গেলে শিক্ষার প্রাথমিক স্তরেই শিশুদের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি নির্ভর জ্ঞানচর্চায় মজবুত ভিত্তি তৈরি হবে যা স্মার্ট নাগরিক বিনির্মাণে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।

শিশু মানেই নতুন আলোর আগামী এবং আজকের শিশুরাই জাতির ভবিষ্যৎ। শিশুরা শুদ্ধ, সুন্দর, ও নির্মলতার প্রতিচ্ছবি। শৈশবে যেভাবে সবার নতুন নতুন বিষয় সম্পর্কে কৌতুহল থাকে, বয়স বাড়ার সাথে সাথে পারিপার্শ্বিকতার চাপে নতুন কিছু শেখার প্রতি সমস্ত আগ্রহই যেন ক্রমে ম্লান হয়ে আসে। প্রকৃতপক্ষে পরিণত বয়সে যেকোন পরিবর্তনই কেউ সহজে মেনে নিতে পারে না। অথচ বিশ্ব খুব দ্রুত গতিতে পরিবর্তিত হচ্ছে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির নিত্য নতুন সংযোজনকে সাদরে গ্রহণ এবং ব্যবহার করেই উন্নত রাষ্ট্রগুলো পৌঁছে গেছে সফলতার স্বর্ণচূড়ায় আর সেই দৌঁড়ে আমরা এখনো অনেকটাই পিছিয়ে আছি। তাই এখনই সময়, মৌলিক পদ্ধতিতে পাঠদানের পাশাপাশি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সর্বোত্তম ব্যবহার করে আমাদের শিশুদের ভবিষ্যত পৃথিবীর সাথে তাল মিলিয়ে চলতে যোগ্য করে তোলা। এবং এই পাঠ প্রাথমিক শিক্ষা থেকেই শুরু হোক। কারণ প্রাথমিক শিক্ষাই হলো জাতি বিনির্মাণের মূলভিত্তি। একটু খেয়াল করলে দেখা যায়, শিশুরা অবসর পেলেই মোবাইল কিম্বা ইলেকট্রনিক গেজেটে তাদের সময়গুলো আনন্দে কাটায়। অনলাইনে কেউবা গেইম খেলে, আবার কেউবা গান শুনে, মুভি দেখে, গল্প পড়ে, রঙ্গিন রঙ্গিন ছবি দেখে সময় কাটায়। কারণ প্রযুক্তি তাদেরকৌতুহল, আগ্রহ ও আনন্দের অবারিত পৃথিবী মেলে দিয়েছে। তারাও তাই সুযোগ পেলেই ওখান থেকে সুখ খুঁজে নিতে চায়। তাদের এই আগ্রহকে সঠিক পন্থায় ব্যবহার করে, অনলাইনে ক্লাস কিম্বা স্মার্টবোর্ড অথবা মাল্টিমিডিয়া ব্যবহার করে প্রজেক্টরে বড় স্ক্রিনের মাধ্যমে পাঠদান করা গেলে নিঃসন্দেহে পাঠের প্রতি তাদের আগ্রহ ও কৌতুহল বাড়বে। বইয়ের পড়ার পাশাপাশি যদি স্মার্ট বোর্ড এবং মাল্টিমিডিয়ার মাধ্যমে পাঠের বিষয়ের সামঞ্জস্যপূর্ণ অডিও, স্থিরচিত্র এবং ভিডিও প্রদর্শনের মাধ্যমে তাদের শেখানো যায়, তাহলে তারা আনন্দের সাথে পাঠের বিষয়বস্তু খুব দ্রুত হৃদয়ংগম করতে পারবে।

 তথ্যপ্রযুক্তির সর্বোত্তম ব্যবহার করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর “ডিজিটাল বাংলাদেশ” আজ সারা বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল। বাংলাদেশে প্রত্যেকের হাতে এখন অ্যান্ড্রয়েড মুঠোফোন, জেলা, উপজেলা ওইউনিয়ন পর্যায়ে ইন্টারনেট–সেবা চালু করা হয়েছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, বাণিজ্য প্রভৃতিতে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার সেবাদান ও সেবাপ্রাপ্তিকে সহজলভ্য করে তুলেছে। স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি, পড়াশোনা, চাকরির আবেদন, মোবাইল মানি ট্রান্সফার, ব্যাংকিং, জন্ম-মৃত্যুর নিবন্ধন থেকে শুরু করে বিদ্যুৎ, গ্যাস, ফোন বিলসহ বিভিন্ন পরিষেবার বিল পরিশোধ, ব্যবসা-বাণিজ্য অতি সহজেই করা যাচ্ছে ডিজিটাল পদ্ধতিতে।  

 উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে মানবসম্পদ ও দক্ষ জনশক্তি উন্নয়ন খুবই জরুরি। আর এই দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়নে প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থার সামগ্রিকউন্নয়ন অপরিহার্য। মৌলিক শিক্ষার পাশাপাশি শিশুদের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষায় আগ্রহী করে তুলতেহবে। । সেই কারণে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির স্বতস্ফূর্ত ব্যবহারে শিক্ষার্থীকে আকৃষ্ট করে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার উপর গুরুত্ব দিতে হবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় কিম্বা স্থানীয় পর্যায়ে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের দায়িত্বে এই কার্যক্রম গ্রহণ করা যেতে পারে। প্রতিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রতিটি ক্লাসরুমে স্মার্টবোর্ড, কম্পিউটার, প্রযেক্টর, সাউন্ডবক্স ও মাল্টিমিডিয়ার মাধ্যমে ক্লাস নেয়ার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। গতানুগতিক শিক্ষার পাশাপাশি শিশুদের শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ করার লক্ষ্যে প্রতিটি স্কুলে ছবি আঁকা, সংগীত, নৃত্য, আবৃত্তি, অভিনয়, উপস্থিত বক্তব্য, বিতর্ক ইত্যাদি বিষয়ে শিখানোর ব্যবস্থা থাকতে হবে। প্রতিটি বিদ্যালয়ে স্মার্ট মিনি মিউজিয়াম, স্মার্ট সায়েন্স জোন স্থাপন করা যেতে পারে। এছাড়াও শিশুদের সুন্দর মনের অধিকারী করে বড় করে তোলার জন্য প্রতিটি বিদ্যালয়ে ফুলের বাগান তৈরি এবং খেলাধূলা করার জন্য খেলার মাঠ ও মিনি পার্ক তৈরি করা যেতে পারে। এসব সময়োপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণ করে স্মার্ট নাগরিক তৈরিতে প্রশাসনের সাথে সাথে এগিয়ে আসতে হবে শিক্ষক, অভিভাবক, ম্যানেজিং কমিটি, স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি, জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ, শিক্ষানুরাগী সুশীল সমাজকে। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় বাস্তবায়ন সম্ভব স্মার্ট বাংলাদেশ বিনিমার্ণের লক্ষ্যে স্মার্ট দক্ষ জনসম্পদ তৈরি করা।

স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়নের পথে প্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে তা থেকে উত্তরণের পথ খুঁজে নিতে হবে। দেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষার্থীরা গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলের গরিব ও নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। যাদের অনেকের অভিভাবকরা অশিক্ষিত, অনেকের অভিভাবকের হাতেই নেই এন্ড্রয়েড ফোন। গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুৎ বিভ্রাট, দরিদ্রতা, ইন্টারনেটের চড়াদাম, শিক্ষার্থীদের এন্ড্রয়েড ফোন না থাকা, নেটের গতিহীনতা ইত্যাদি অনেক সমস্যা আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর পাঠদানের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা হিসেবে বিদ্যমান। তাই, সরকারি এবং স্থানীয়ভাবে বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে এসব সমস্যা সমাধান করেই আমাদের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিজ্ঞান সম্পন্ন শিক্ষার্থী তৈরি করতে হবে। । কারণ দেশের সকল শিক্ষার্থীকে আধুনিক পাঠদানের সমান সুযোগ সৃষ্টি করা না গেলে শিক্ষা ক্ষেত্রে বৈষম্য তৈরী হবে। যা জাতি হিসেবে মোটেই কাম্য নয়। এছাড়াও, প্রযুক্তির যেসব নেতিবাচক দিক যেমন cyberbullying, child pornography, harassment এর মতো বিভিন্ন সামাজিক অপরাধ সম্পর্কেও আগামী প্রজন্মকে সতর্ক ও সচেতন করে সবকিছুর ইতিবাচক ব্যবহারে আগ্রহী করে তুলতে হবে। মাল্টিমিডিয়ার ব্যবহার, কন্টেন্ট তৈরি, ইন্টারনেট ব্রাউজিং, কম্পিউটার পরিচালনা সর্বোপরি প্রযুক্তির ব্যবহারে দক্ষ ও পারদর্শী করে গড়ে তুলতে হবে।

 মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বর্তমান যুগে পরিবর্তিত বিশ্ব পরিস্থিতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার লক্ষ্যে নিজেদের প্রস্তুত করার জন্য শিক্ষার্থীদের আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর শিক্ষা প্রদানের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে হলে শিক্ষার্থীদের যুগোপযোগী মানসম্মত শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে। গুণগত শিক্ষার পূর্বশর্ত হচ্ছে শ্রেণি কার্যক্রমকে বাস্তবমুখী করে শিক্ষার্থীর আনন্দময় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা এবং তাদের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি নির্ভর বুদ্ধিভিত্তিক জ্ঞান, মানবীয় গুণাবলীর বিকাশ এবং প্রায়োগিক দক্ষতা বৃদ্ধি করা। বিশ্বায়নের যুগে টিকে

থাকতে বিশ্বমানের নাগরিক হিসেবে আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে গড়ে তুলতে হলে প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকেই শিশুদের শিল্প সংস্কৃতির চর্চার পাশাপাশি আধুনিক জ্ঞান বিজ্ঞান চর্চা অব্যাহত রাখতে হবে। তাই জাতির বৃহত্তর স্বার্থে বঙ্গবন্ধুর শিক্ষা দর্শনকে কাজে লাগিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মানব উন্নয়নে যে পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে, সেটি বাস্তবায়নে উপজেলা, জেলা প্রশাসনসহ শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে এবিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে  হবে। প্রাথমিক পর্যায় থেকে মৌলিক শিক্ষার পাশাপাশি শিল্প সংস্কৃতি, ইতিহাস ঐতিহ্য, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষা বিস্তারের মাধ্যমে আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর পাঠদান নিশ্চিত করার মাধ্যমে উন্নত সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ সম্ভবপর হয়ে উঠবে।

আরও খবর

Sponsered content