আন্তর্জাতিক

উইঘুর বন্দীশিবিরে ভয়াবহ নির্যাতনের বর্ণনা দিলেন চীনা কর্মকর্তা

  প্রতিনিধি ৫ অক্টোবর ২০২১ , ৪:১০:৩৯ প্রিন্ট সংস্করণ

ভোরের দর্পণ ডেস্ক:

এক রাতে হঠাৎ করেই শত শত পুলিশ কর্মকর্তা ঘরে ঘরে গিয়ে উইঘুর সম্প্রদায়ের লোকদের তাদের বাড়ি থেকে টেনে নিয়ে যায়, হাতকড়া পরিয়ে দেয়, বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলে গুলি করা হবে, এমন হুমকিও দেয়- এভাবেই উইঘুরে মুসলিম নির্যাতন শুরুর বর্ণনা দিয়েছেন বর্তমানে ইউরোপে নির্বাসনে থাকা এক চীনা পুলিশ কর্মকর্তা। তার পরিবারের নিরাপত্তার সুবিধার্থে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন ওই পুলিশ কর্মকর্তার পরিচয় প্রকাশ না করে, তাকে জিয়ান নামে অভিহিত করেছে।

সিএনএনকে দেওয়া তিন ঘণ্টার এক সাক্ষাৎকারে জিয়ান বলেন,  সে রাতে তাদের ওপর নির্দেশ ছিল- যদি এই এলাকায় শত শত লোক থাকে, তাহলে সেই শত শত লোককেই গ্রেপ্তার করতে হবে। সাক্ষাৎকারে জিয়ান কীভাবে উইঘুরদের উপর নিয়মতান্ত্রিক নির্যাতন করা হচ্ছে তাঁর বিশদ বর্ণনা দিয়েছেন।

তিনি উইঘুরের ডিটেনশান ক্যাম্পে কাজ করাকালীন তার ওপর নির্দেশ ছিল বন্দীদের এমন ভাবে মারতে যাতে তারা ব্যথায় আর উঠে দাঁড়াতে না পারে, তাদের সারা শরীরে যেন কালশিটে পড়ে যায়। জিজ্ঞাসাবাদের সময় সব বন্দীকে প্রচণ্ডভাবে মারা হতো উল্লেখ করে তিনি আরও জানান, এই নির্যাতন থেকে পুরুষ, মহিলা এমনকি ১৪ বছরের কোনো শিশুও বাদ যেত না।

 

নির্যাতনের বেশ ভয়াবহ কিছু বর্ণনা দিয়েছেন জিয়ান। তিনি জানিয়েছেন, নির্যাতকারী কারা রক্ষীরা একেকজন একেক ধরনের নির্যাতন পদ্ধতি ব্যবহার করেন। কেউ কেউ লোহার বার বা তালা যুক্ত লোহার শিকল ব্যবহার করেন নির্যাতনের জন্য। আবার অনেকে ধাতু বা কাঠের ‘টাইগার চেয়ার’ ও ব্যবহার করেন, যা এক ধরনের নির্যাতনের উপকরণ। মানুষকে সিলিং থেকে ঝুলিয়ে রাখা, যৌন নির্যাতন করা, বৈদ্যুতিক শক দেওয়া সেখানকার নিয়মিত ব্যাপার বলেও জানান তিনি। সেখানকার কয়েদিদের প্রায়ই কয়েক দিন জেগে থাকতে বাধ্য হয় এবং খাবার ও পানি দেওয়া হয় না বলেও জানান জিয়ান।

এসব বন্দীদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদী অপরাধের অভিযোগ আনা হলেও তারা সবাই সাধারণ নাগরিক উল্লেখ করে জিয়ান আরও বলেন, যে শত শত বন্দীকে তিনি গ্রেপ্তারের সঙ্গে জড়িত ছিলেন তাদের মধ্যে কেউই অপরাধ করেননি।

জিয়ান বলেন, পুলিশের আটক কেন্দ্রগুলোতে নির্যাতন তখনই বন্ধ করা হতো যখন তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো স্বীকার করে নিত। এরপর তাদের পাঠানো হতো কারাগারের রক্ষীদের দ্বারা পরিচালিত একটি অন্তরীণ ক্যাম্পে।

তবে জিয়ানের এইসব স্বীকারোক্তি সিএনএন পুরোপুরিভাবে নিশ্চিত করতে পারেনি, যদিও তার অনেক বক্তব্য উইঘুর ক্যাম্প থেকে পালিয়ে আসা অনেক বন্দীর কথার সঙ্গে মিলে যায়। সিএনএন এসব অভিযোগের ব্যাপারে চীন সরকারের কাছে বিস্তারিত প্রশ্ন জমা দিয়েছে, যদিও চীন এখন পর্যন্ত এ ব্যাপারে কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায়নি।

আরও খবর

Sponsered content