প্রতিনিধি ১ জুন ২০২৪ , ৩:২২:০০ প্রিন্ট সংস্করণ
ষষ্ঠ উপজেলা নির্বাচনের চতুর্থ ধাপে চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ৫ জুন। প্রতীক বরাদ্দের পর থেকেই প্রার্থীদের মধ্যে চলছে ব্যাপক প্রচার প্রচারণা। এ উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে চারজন প্রার্থী মাঠে থাকলেও মূল লড়াই হবে দুইজনের মধ্যে। তাদের মধ্যে একজন নবীন আর অন্যজন প্রবীণ। বিগত তিনবার উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েও খুব কম ভোটের ব্যবধানে বার বার হেরে যাওয়া চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের শ্রমবিষয়ক সম্পাদক খোরশেদ আলম লড়ছেন দোয়াত কলম প্রতীক নিয়ে আর গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিপুল ভোটে ভাইস-চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েও নানা জটিলতায় চেয়ারে বসতে না পারা বাঁশখালী উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মো. এমরানুল হক ইমরান চেয়ারম্যান পদে মাঠে লড়েছেন আনারস প্রতীক নিয়ে।
নবীন আর প্রবীণের এই লড়াইয়ে প্রচারণায় দুজনেই সমানতালে রয়েছেন। এছাড়াও বাঁশখালীর সাবেক পৌর মেয়র শেখ ফখরুদ্দীন চৌধুরী লড়েছেন ঘোড়া প্রতীক নিয়ে। অপর প্রার্থী চট্টগ্রাম সিটি কলেজের সাবেক জিএস, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী যুবলীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক জাহিদুল হক চৌধুরী মার্শাল মোটর সাইকেল প্রতীক নিয়ে মাঠে প্রথম দিকে সরব থাকলেও এখন প্রচার প্রচারণায় কিছুটা পিছিয়ে রয়েছেন তিনি।
এবারের নির্বাচনে দলীয় প্রতীক না থাকায় ভোটাররা কিছুটা চাপমুক্ত রয়েছেন। তবে প্রবীণ প্রার্থী খোরশেদ আলম বর্তমানে ভাল অবস্থানে রয়েছেন বলে গুঞ্জন রয়েছে। যে কারণে প্রতিপক্ষের প্রার্থীরা কিছুটা হলেও চাপ অনুভব করছেন বলে জানা গেছে। বাঁশখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের একটি বড় অংশ এবং আওয়ামী ঘরণার বাঁশখালীর বর্তমান ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যানের বৃহত্তম অংশ খোরশেদ আলমের পক্ষে কাজ করছেন। বাঁশখালী পৌরসভার মেয়র এ্যড. তোফায়েল বিন হোসাইনসহ অনেকেই প্রকাশ্যে মাঠে নেমেছেন তার পক্ষে।
অন্যদিকে মো. এমরানুল হকের পক্ষে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি, সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের সাবেক প্রেসিডেন্ট রিয়াজ উদ্দিন সুমন, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের যুগ্ন-সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল মাহমুদ চৌধুরী ও ছাত্রলীগের তার সহযোদ্ধারা মাঠে নেমেছে প্রকাশ্যে। এছাড়াও বাঁশখালী উপজেলা আওয়ামী-যুবলীগের একটি অংশ মো. ইমরানুল হকের পক্ষে কিছুটা গোপনে মাঠে কাজ করছে। সদ্যো সমাপ্ত হওয়া উপজেলা নির্বাচনে তরুণ ভোটারের উপস্থিত ছিল দেখার মতো। তরুণ প্রজন্মের একটি বিশাল অংশ মাঠে কাজ করছে এমরানুল হকে পক্ষে। তিনিও রয়েছেন সুবিধাজনক অবস্থানে। এসব কারণে নির্বাচনে তাই হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের সম্ভাবনা দেখছেন ভোটাররা।
ভোটারদের অনেকেই জানান, এবারের নির্বাচনে জাতীয় প্রতীক নৌকা মার্কা নেই। আমরা যে প্রার্থীকে পছন্দ করবো তাকেই ভোট দিতে পারবো। তাছাড়া গতবারের মতো ভোট দেওয়ার জন্য কোনো চাপ নেই। আমরা কেন্দ্রে গিয়ে যাকে পছন্দ হয় তাকেই ভোট দিয়ে আসবো।
এদিকে ভাইস-চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৭ জন প্রার্থী। এর মধ্যে তালা প্রতীকের আকতার হোসেন ও বই প্রতীকের মো. হোছাইন এরমধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলে জানা গেছে। আলোচনায় আছে আরেক প্রার্থী টিয়া প্রতীকের মো. আরিফুর রহমান সুজন। এ পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন চশমা প্রতীকে মো. আরিফুজ্জামান আরিফ, মাইক প্রতীকে মো. ওসমান গণী, টিউবওয়েল প্রতীকে ইমরুল হক চৌধুরী ফাহিম, উড়োজাহাজ প্রতীকের এম.এ মালেক মানিক।
অপরদিকে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ফুটবল প্রতীকে নুরী মন আক্তার নুরীর সাথে বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) কলসি প্রতীকের রেহেনা আকতার কাজমী এরমধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলে জানা গেছে। এ পদে আরেকজন প্রতিদ্বন্দ্বি ইয়ামুন নাহার প্রজাপতি প্রতীকে মাঠে লড়েছেন।
নির্বাচনের মাঠে ব্যাপক প্রচার প্রচারণা চলছে। এখনো পর্যন্ত প্রতিপক্ষের মধ্যে তেমন কোনো দ্বন্দ্ব সংঘাত হয়নি। নির্বাচন সুষ্ঠু করতে মাঠে রয়েছেন রিটানিং অফিসার নিযুক্ত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্বপ্রাপ্ত অতিরিক্ত জেলা নির্বাচন অফিসার এ.কে.এম গোলাম মোর্শেদ খান বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু করতে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা মেনে আমরা শতভাগ ভালো নির্বাচন করার ব্যাপারে বদ্ধপরিকর।
প্রসঙ্গত, এ উপজেলায় তিনটি পদে মোট ১৪ জন প্রার্থী মাঠে লড়েছেন। আগামী ৫ জুন সকাল ৮টা হতে বিকাল ৪টা পর্যন্ত বাঁশখালী উপজেলার একটি পৌরসভা ও ১৪টি ইউনিয়নের ১১৫টি ভোট কেন্দ্রের ৮৫৬টি ভোট কক্ষে ব্যালট পেপারের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। বাঁশখালীতে মোট ভোটার সংখ্যা ৩লক্ষ ৭৬হাজার ৯শত ৪জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ২লক্ষ ২হাজার ৩শত ২১জন, মহিলা ভোটার ১লক্ষ ৭৪হাজার ৫শত ৮১জন, তৃতীয় লিঙ্গের (হিজরা) ৪জন।