রংপুর

উলিপুরে তিস্তার চরাঞ্চলে আলু চাষের উৎসব 

  প্রতিনিধি ১ ডিসেম্বর ২০২৪ , ৩:৫৫:৪১ প্রিন্ট সংস্করণ

উলিপুরে তিস্তার চরাঞ্চলে আলু চাষের উৎসব 

কুড়িগ্রামের উলিপুরে তিস্তার চরাঞ্চলে আলু চাষে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকেরা। আলু চাষে লাভবান হওয়ায় ও দাম ভালো পাওয়ায় চরাঞ্চলের কৃষকরা আলু চাষে ঝুঁকে পড়েছেন। ফলে চরের মাঠ আলু চাষকে ঘিরে দেখা দিয়েছে প্রাণচাঞ্চল্য। চরাঞ্চল গুলোতে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত শত শত নারী ও পুরুষ শ্রমিকেরা আলু চাষে ব্যাস্ত হয়ে পড়েছেন। তবে বেশীর ভাগ জমিতে নারী শ্রমিকেরা আলু রোপণের কাজ করছেন। দম ফেলানোর সময় নেই তাদের।

জানা গেছে, উপজেলার তিস্তা নদীর তীরবর্তী থেতরাই ও বজরা ইউনিয়নের বিভিন্ন চরাঞ্চলে ব্রি-৭১, ব্রি-৭৫, ব্রি-৮৭ ও বীনা-৭ জাতের ধানসহ স্বল্পমেয়াদী আগাম জাতের আমন ধান লাগানো হয়েছিল। বর্তমানে ধান কাটা ও মাড়াই প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এ সকল জমিতে আলু চাষের জন্য উপযোগী করে তোলা হচ্ছে। আলু চাষ করা হচ্ছে।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরে ১টি পৌরসভা সহ ১৩টি ইউনিয়নে আলু চাষের লক্ষ্য মাত্রা প্রায় ৭’শ ২০ হেক্টর। অর্জিত হয়েছিল প্রায় ১ হাজার ৫ হেক্টর। এ পর্যন্ত অর্জিত হয়েছে ৯ শত ৬৫ হেক্টর। যা চলমান রয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্য মাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৬ হাজার ৩শত ৩০.৭৫ মেট্রিক টন। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে আলু চাষিদের বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ দেয়া অব্যহত রয়েছে।

সরেজমিন উপজেলার তিস্তার চর বেষ্টিত এলাকা গুলোর মধ্যে গোড়াইপিয়ার চর, আম্নিয়াসের চর, জুয়ান সতরার চর, দরিকিশোরপুর চর, টিপমা চর, শুকদেবকুন্ড চর, বজরা চর, সাতালস্কারের চর সহ আরও অনেক এলাকা ঘুরে দেখা যায়, আলু চাষ ও নিড়ানিতে ব্যাস্ত সময় পার করছেন আলু চাষিরা। তারা আগাম আলু চাষ করে ভালো দামে বাজারে বিক্রি করার আশায় আলু চাষে ব্যাস্ত হয়ে পড়েছেন। আলু চাষ করার পর শরিষা, গম, পিয়াজ সহ বিভিন্ন ধরনের শস্য চাষ করবেন।

কৃষকেরা জানান, চলতি বছরে দু’দফায় বন্যায় কৃষিতে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন তিস্তার নিকটবর্তী গ্রামের কৃষকরা। ফলে বন্যার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে তারা আগাম আলু চাষের প্রস্তুুতি নিয়েছেন। তবে এবার তুলনামূলক আলুর বীজ, সার ও কীটনাশক এর মূল্য বেশি হওয়ায় আলু চাষে হিমশিম খেতে হচ্ছে। তবে আলুর বাজার দর তুলুনামূলক বেশি থাকায় আগাম জাতের আলু চাষে ঝুঁকে পড়েছেন তারা।

উপজেলার থেতরাই ইউনিয়নের গোড়াইপিয়ার জুয়ান সতরা চরে আলু চাষি নুর ইসলাম (৪২) জানান, এবারে ১০ একর জমিতে আলুর চাষ করেছেন। তার মধ্যে ২ একর জমিতে আগাম জাতের আলু রোপণ করা প্রায় শেষের পথে। আগাম জাতের আলু প্রায় ৬০ দিনের মধ্যে হয়ে থাকে। এবারে আলুর বীজ সহ সার ও কীটনাশক এর মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় একর প্রতি খরচ হবে প্রায় ১লক্ষ ৫০ থেকে ১লক্ষ ৮০ হাজার টাকা। আবহাওয়া অনুকুল থাকলে ফলন ভালো হলে একর প্রতি আলুর আশা করছেন প্রায় ২’শ ৭০ মণ। বাজারে ১২’শ টাকা মণ থাকলে প্রায় ৩ লক্ষ ২০ হাজার টাকা হয়। যা খরচের থেকে দ্বিগুন লাভ করা সম্ভব।

বিভিন্ন চর এলাকার আলু চাষি বাবলু মিয়া, শাহাজাহান আলী, মোকছেদুল ইসলাম, নুর ইসলাম, মাহাম্মদ আলী, শফিকুর রহমান ও এমদাদুল হক সহ আরও অনেকে জানান, আমরা চরে বসবাস করি। প্রতি বছর বন্যায় ফসলাদি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে। ক্ষতি পুষিয়ে এখানকার কৃষকদের আলু চাষে অনেক আগ্রহ হয়েছে। এখানকার মাটিতে সকল আবাদ হয়। তবে আলু, বাদাম, মরিচ, পেঁয়াজ এই ফসলগুলা ভালো হয়। এখন চরে আলু ও বাদাম চাষ চলছে। এ ছাড়া আগাম আলু আগেই উঠানো যাবে। তখন বাজারে ভাল দামও পাওয়া যাবে।

চরাঞ্চলে আলু লাগানোর কাজে আসা মহিলা শ্রমিক চায়না বেগম (৩৮), সুখিরন (৪০) ও ছমিরন (৩৫) সহ আরও অনেকে জানান, তিস্তার চরাঞ্চলে আলু লাগানোর কাজ চলছে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কাজ করে মজুরি পাই ৩০০ টাকা। যা দিয়ে সংসার পরিচালনা করা যায় না। আলু চাষিরা অনেক লাভবান হন। আমাদের মজুরি বাড়ানোর চিন্তা কেউ করেনা। 

উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোস্তফা কামাল বলেন, তিস্তার চরে আমার ব্লকে আগাম আলু চাষে ব্যাস্ত সময় পার করছেন চাষিরা। আগাম আলু চাষে ফলন ও দামে ভালো থাকায় আলু চাষিরা অনেক লাভবান হন। সার্বক্ষণিক আলু চাষিদের বিভিন্ন ধরনের রোগবালাই পোকামাকড় নিধন সম্পর্কে পরামর্শ দেয়া অব্যহত রয়েছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ও কৃষিবিদ মোশারফ হোসেন বলেন, এখন যে জমিতে কৃষকেরা আলু লাগাচ্ছেন, তা ৬৫-৭০ দিনের মধ্যে তুলে বাজারে বিক্রি করতে পারবেন। মৌসুমের শুরুতে নতুন আলুর চাহিদা থাকায় এমনিতেই বাজারে দাম চড়া থাকে। চরাঞ্চলের বালুমিশ্রিত পালি মাটিতে আগাম আলুর ফলন ভালোই হয়। তাই কৃষকেরা আগাম আলু চাষে ঝুঁকে পড়েছেন। মাঠপর্যায়ে কৃষকদের পরামর্শ প্রদানে আমরা তৎপর রয়েছি।

আরও খবর

Sponsered content