প্রতিনিধি ২ অক্টোবর ২০২৪ , ৪:১০:৪৭ প্রিন্ট সংস্করণ
কুড়িগ্রামের উলিপুরে প্রতিমা তৈরি ও রংতুলিতে ব্যাস্ত হয়ে পড়েছেন মৃৎশিল্পিরা। দম ফেলার ফুরসত নেই তাদের। বাঙালি সনাতন ধর্মাবলম্বী হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় উৎসব শারদীয় দুর্গাপুজা। আর কিছু দিন পরেই শুরু হতে যাচ্ছে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা।
এ উপলক্ষে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার মন্দিরগুলোতে শুরু হয়েছে প্রতিমা তৈরীর কাজ। আর তাই ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রতিমা তৈরি করেতে।এরইমধ্যে ঢাকের বাদ্য আর প্রতিমা তৈরিতে কারিগরদের ব্যস্ততা জানান দিচ্ছে দেবী দুর্গার আগমনী বার্তা। বেণীমাধব শীলের ফুলপঞ্জিকা অনুযায়ী, দুর্গাপুজা ২০২৪-এর নির্ঘণ্ট। এবার মহালয়া পড়েছে আজ বুধবার (২ অক্টোবর), আর ৯ অক্টোবর মহাষষ্ঠীর মধ্যে দিয়ে শুরু হবে শারদীয় দুর্গোৎসব।
এবছর ৯ অক্টোবর মহালয়ার মধ্য দিয়ে শুরু হবে দেবীপক্ষ। ৯ অক্টোবর মহাষষ্ঠীতে দেবী বোধনের মধ্য দিয়ে দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে। আর আগামী ১৩ অক্টোবর বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শারদীয় দুর্গোৎসব সমাপ্তি হবে। সারাদেশের ন্যায় প্রতিমা তৈরিতে কাজ শুরু করেছেন উপজেলার মৃৎশিল্পীরাও। আসন্ন এই উৎসবকে ঘিরে দেবী দুর্গাকে বরণ করে নেয়ার জন্য চলছে মণ্ডপে মণ্ডপে নানা ধরনের প্রস্তুতি। এখন শারদীয় উৎসবে মেতে ওঠার অপেক্ষায় সনাতন সম্প্রদায়ের মানুষেরা। পঞ্জিকা মতে এ বছর দশভুজার আগমন ও গমন দুই-ই দোলায় এবং দেবীদুর্গা দোলায় আগমন করে পালকিতে চড়ে কৈলাশে ফিরে যাবেন।
আর এই উৎসবকে কেন্দ্র করে প্রতিমা শিল্পীরা কল্পনায় দেবী দুর্গার অনিন্দ্য সুন্দর রূপ দিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রতিমা শিল্পীরা। নিখুঁত হাতের কারুকার্য দিয়ে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত অক্লান্ত পরিশ্রম করে তৈরি করছেন প্রতিমা। পূজার সময় ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গেই ব্যস্ত হয়ে পড়ছেন এই প্রতিমা শিল্পীরা। উপজেলার বিভিন্ন মণ্ডপ ঘুরে দেখা যায়, মণ্ডপে মণ্ডপে চলছে নানান প্রস্তুতি, আবার অনেক মণ্ডপে এখনো শুরু হয়নি প্রতিমা তৈরির কাজ।
প্রাথমিক পর্যায়ে প্রস্তুতি হিসেবে মণ্ডপ গুলোতে দুর্গা প্রতিমার খড় ও মাটির কাজ শুরু করেছেন। এরপর পরবর্তী পর্যায়ে মূর্তিতে রং-তুলির আঁচড়ের কাজ চলবে। অন্যদিকে সাজসজ্জা, আলোকসজ্জা, প্যান্ডেল তৈরি ও ডেকারেশনসহ অন্যান্য কাজগুলোও ধীরে ধীরে এগিয়ে চলছে। দুর্গা প্রতিমা ছাড়াও মণ্ডপের জন্য তৈরি করা হচ্ছে লক্ষী সরস্বতী, কার্তিক, গণেশ, অসুর, সিংহ, মহিষ, পেঁচা, হাঁস, সর্প সহ প্রায় ১২টি প্রতিমা।
উপজেলার গুনাইগাছ ইউনিয়নের জুম্মাহাট কাঁঠালবাড়ি এলাকার প্রতিমা কারিগর শ্রী পুলিন চন্দ্র মহন্ত বলেন, প্রাথমিক পর্যায়ে খড় ও মাটির কাজ শেষ করেছি, এখন মাটির ফিনিশিং ও রংতুলির কাজ হচ্ছে। আর এসব প্রতিমা তৈরীতে আমাদের দম ফেলার ফুসরত নেই। দেবী মা দুর্গা তার সাথে বিদ্যার দেবী স্বরসতী, ধন সম্পদের দেবী লক্ষী এবং দেব সেনাপতি কার্তিক ও গনেশসহ নানা দেব-দেবীর প্রতিমার রূপকে ফুটিয়ে তুলবো নিপুন হাতের ছোঁয়ায়। তিনি আরও বলেন, এবছর ৮টি মন্দিরে প্রতিমা তৈরীর কাজ ধরেছি। ভিন্ন ভিন্ন চুক্তিতে ৪ জন মিলে প্রতিমা তৈরি করছি।
প্রতিটি প্রতিমা প্রতি সর্বোচ্চ ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত মজুরি নেয়া হচ্ছে। গত বছরের তুলনায় এবছর প্রতিমা কমে গেছে। এছাড়া দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি বাজারে চাহিদার তুলায় মজুরি কম পেলেও কাজ করতেই হবে। তাই পূজা শুরুর দিন পর্যন্ত রঙ এর কাজ করতে হবে। তবে চাহিদার তুলায় আমরা মজুরি কম পাচ্ছি। সেই সাথে দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির বাজারে পরিশ্রমের পর প্রতিমা তৈরি করে যে মজুরি পাই তা দিয়ে জীবন যাপন করা কষ্টকর হয়ে পড়ছে।
অনেকেই এ পেশা ছেড়ে চলেও গেছে। টিকে থাকার জন্যই প্রতিমা তৈরির পাশাপাশি কৃষি কাজও করতে হয়।উপজেলার সর্বজনীন দুর্গাপূজা কমিটির সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য সৌমেন্দ্র প্রসাদ পান্ডে গবা বলেন, উপজেলায় এবারে ১১৮ টি মন্ডপে শারদীয় দুর্গাপুজা অনুষ্ঠিত হবার কথা। আরও বেশি হতে পারে। মন্দির গুলোতে সবধরনের প্রস্তুতি নেওয়া শুরু হয়েছে। তাছাড়া সার্বক্ষণিক নিরাপত্তার ব্যাপারে অন্যান্য বছরে মতো এবারও প্রশাসনিক সহযোগিতার আশ্বাস পেয়েছি। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আলোকসজ্জাসহ নানাভাবে সাজানো হবে মণ্ডপ গুলোতে। এখন ঢাকের তালে পূজা শুরু হওয়ার অপেক্ষা মাত্র।
উলিপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবু বক্কর সিদ্দিক জানান, শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে ব্যাপক ভাবে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। যাতে করে কোনো প্রকার অপ্রিতিকর ঘটনা না ঘটে। এ জন্য প্রতিটি ইউনিয়নে সার্বক্ষণিক দুইজন করে মোবাই টিম থাকবে। এছাড়া উৎসব চলাকালীন সময়ে প্রশাসনিক সর্বাত্মক নজরদারি রয়েছে বলে জানান তিনি।

















