উলিপুর (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি ৬ অক্টোবর ২০২৫ , ৩:৪৬:১৭ প্রিন্ট সংস্করণ
কুড়িগ্রামের উলিপুরে কেজিপ্রতি মরিচের দাম ৪০০ টাকায় বিক্রি হলেও আজ সোমবার (৬ অক্টোবর) কমিয়ে কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকায়। এতে করে স্বস্তিতে পড়েছেন ক্রেতারা। তবে বিক্রেতারা জানান, শারদীয় দুর্গাপূজার উৎসব উপলক্ষে সপ্তাহের বেশি সময় দেশের বাহির থেকে মরিচ আমদানি বন্ধ থাকায় কেজি প্রতি দাম বেড়েছিল ৩০০ থেকে ৩২০ টাকা পর্যন্ত। আবার আমদানি স্বাভাবিক ভাবে বেড়ে যাওয়ায় মরিচের বাজার হাতের লাগালে রয়েছে। অন্যান্য সবজির দাম কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া পেঁয়াজ, বেগুন, পটোল ও ধনে পাতার দাম বেশি থাকলেও অন্যান্য সবজির দাম কমেছে।
উলিপুর পৌর বাজারের আড়তদার মরিচ কেজি প্রতি বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা, খুচরায় বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকা। দেশি পেঁয়াজ বিক্রি করছেন ৬৫ টাকা, খুচরা বিক্রেতা তা বিক্রি করছেন ৭০ টাকা, বেগুন ৬০ টাকা খুচরায় বিক্রি করছেন ৭০ টাকা ও ধনেপাতা ২০০ টাকা খুচরায় তা বিক্রি করছেন ২৫০ টাকা। নানা ভাবে পেঁয়াজ, মরিচ, বেগুন ও পটোলের দাম বেড়ে যাওয়ায় সাধারণ মানুষ নেই স্বস্তিতে। তবে স্থানীয় ভাবে আমদানি না থাকায় সবজির দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে জানান বিক্রেতারা।
সরেজমিন সোমবার (৬ অক্টোবর) দুপুরে উলিপুর সবজি বাজারে গিয়ে দেখা যায়, কৃষকরা পাইকারদের কাছে বেগুন প্রতি কেজি বিক্রি করছেন ৬০ টাকা তা খুচরায় বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকা, আলু দেশি ২৪ টাকা খুচরায় ২৮ টাকা, আলু হলান্ড ১৪ টাকা খুচরায় ২০ টাকা, শসা ২৮ টাকা খুচরায় ৩৫ টাকা, কাঁচা মরিচ ১২০ টাকা খুচরায় ১৫০ টাকা, করলা ৫৬ টাকা খুচরায় ৭০ টাকা, দেশি পিয়াজ ৬৫ টাকা খুচরায় ৭০ টাকা, পেঁপে ১৭ টাকা খুচরায় ২৫ টাকা, পটল ৫৬ টাকা খুচরায় ৭০ টাকা, রসুন ৬০ টাকা খুচরায় ৮০ টাকা, আদা ১২০ টাকা খুচরায় ১৪০ টাকা, শুকনা মরিচ ৩০০ টাকা খুচরায় ৩৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে, ঢেড়স ৬০ টাকা খুচরায় ৭৫ টাকা, ঝিঙা ৪০ টাকা খুচরা ৪৫ টাকা, কদোয়া ৩০ টাকা খুচরা ৩৫ টাকা, বরবটি ৬০ টাকা খুচরা ৭৫ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৪০ টাকা খুচরা ৫০ টাকা, চাল কুমড়া ছোট বড় ভেদে ২৫ থেকে ৩০ টাকা খুচরায় ২০ থেকে ৩৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
শাক-সবজির বাজার দর এমন নিম্নমুখী ও ঊর্ধ্বগামী হওয়ায় কিছু সংখ্যক ক্রেতা সন্তোষ প্রকাশ করলেও নিম্ন আয়ের মানুষ তা অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
উপজেলার থেতরাই ইউনিয়নের সাতদগাহ ফকিরপাড়া গ্রামের পটোল চাষি আবু তাহের বলেন, এবারে ৭০ শতক জমিতে পটোলের চাষ করেছেন। আজ পৌর সবজির বাজারে প্রায় ৫ মণ পটোল পাইকেরিতে বিক্রি করে ১১ হাজার ২০০ টাকা পেয়েছেন। তিনি আরও বলেন, এ পর্যন্ত পটোল বিক্রি করে আয় হয়েছে প্রায় ৩ লাখ টাকা। আরও ৩ মাস পটোল বিক্রি হবে। তাতে আরও আয় হবে ৯০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা। মোট আয়ের আশা করছেন ৪ লাখ টাকা।
পৌর বাজারের খুচরা সবজি বিক্রেতা মিজানুর রহমান (৪৫), জানান, গত কয়েকদিন থেকে মরিচের দাম বৃদ্ধিতে ছিলো। কাচা বাজারের আরদ থেকে বেশি দামে নিয়ে এসে বেশি দামে বিক্রি করতে হয়েছে। এতে করে মরিচ বেচা-কেনা অনেক কম হয়েছে। প্রয়োজনের চাহিদার তুলনায় কম কিনেছেন ক্রতারা। তিনি আরও বলেন, সবজি সহ অন্যান্য জিনিসপত্রের দাম বেড়ে গেলে ক্রেতা কমে যায়। ক্রেতা কমে গেলে আয় কম হয় যা দিয়ে সংসার পরিচালনা করাই কঠিন হয়ে যায়। এতে করে প্রতিদিনেই ঘাটতি থেকেই যায়।
তবকপুর ইউনিয়নের রেলগেট বাজারের খুচরায় সবজিত বিক্রেতা লিটন মিয়া বলেন, গত কয়েকদিনের মরিচের বাজারে খুব ঝাঁজ ছিলো। এতে করে আমরা বেশি মরিচ বিক্রি করতে পারিনি। ক্রয়কৃত মরিচ বাজারে বিক্রি করতে না পেয়ে পঁচে নষ্ট হয়ে গেছে। তাতে লাভের বদলে লোকশান হয়েছে।
পৌর বাজারে সবজি নিতে আসা ক্রেতা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, অনেক ধরনের সবজির দাম বৃদ্ধি রয়েছে। কাঁচা বাজার কিছু কিছু মানুষের হাতের নাগালে থাকলেও নিম্ন আয়ের মানুষের হাতের লাগালে নেই।
খুচরা বাজারে সবজি নিতে আসা গৃহবধূ নাজমা আক্তার, জাহানারা ও মুক্তা বেগম বলেন, গত সপ্তাহের চেয়ে আজ আজ মরিচের বাজার অনেক কমে গেছে। গত পরশু দিন মরিচ কেজি প্রতি বিক্রি হয়েছে ৪০০ টাকা আজ তা কমিয়ে কেজি প্রতি বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা। এছাড়া বেগুন, পটোল, ধনেপাতার দাম অনেক বৃদ্ধি রয়েছে।
সবজি বাজারের কাচা মরিচের আড়তদার এমদাদুল হক বলেন, গত কয়েকদিন থেকে কাচা মরিচের দাম চড়া ছিলো। যা আজ ১২০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। দাম বৃদ্ধির কারণ তিনি বলেন, দুর্গাপূজায় মোকাম গুলোতে সপ্তাহের বেশিদিন ধরে আমদানি বন্ধ ছিলো। এছাড়া স্থানীয় ভাবে যে মরিচ বাজারে আসে তা দিয়ে চাহিদা পুরন করা সম্ভব হয়না। যে কারণেই মরিচের বাজার বেশি ছিলো। এখন দেশের বাহির থেকে রপ্তানি শুর হয়েছে তাই মরিচের অনেক দাম কমেছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ও কৃষিবিদ মোশারফ হোসেন বলেন, স্থানীয় ভাবে মরিচের আমদানি না থাকায় কাচা মরিচের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। স্থানীয় ভাবে মরিচ সহ অন্যান্য সবজির আমদানি শুরু হলে দাম কমে আসবে। এছাড়া স্থানীয় ভাবে যে সকল সবজি চাষ হয় তাতে চাহিদা পূরণ করা সম্ভব নয়। কৃষকদের বেশি বেশি করে সবজি চাষের পরামর্শ দেয়া অব্যাহত রয়েছে বলে জানান তিনি।

















