আন্তর্জাতিক

এবার এক দিনেই হত্যার শিকার ৭০৪ ফিলিস্তিনি

  প্রতিনিধি ২৫ অক্টোবর ২০২৩ , ৪:০৩:৩০ প্রিন্ট সংস্করণ

এবার এক দিনেই হত্যার শিকার ৭০৪ ফিলিস্তিনি

ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি বর্বরতা দিন দিনই বাড়ছে। গাজায় আগ্রাসনের ১৬তম দিন গত সোমবার দিনভর ও রাতে অন্তত ৪০০ স্থানে হামলা চালায় তেল আবিব। এতে এক দিনেই নারী-শিশুসহ ৭০৪ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এ নিয়ে গাজায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৭৯১-তে। এ ছাড়া অধিকৃত পশ্চিম তীরে নিহত হয়েছেন আরও ৯৬ ফিলিস্তিনি।

এদিকে, মানুষ হত্যায় ইসরায়েলের ফ্রি লাইসেন্স থাকা উচিত নয় উল্লেখ করে দেশটিকে থামাতে বিশ্বনেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে কাতার।

এরই মধ্যে গতকাল মঙ্গলবার মুসল্লিদের জন্য আল-আকসা মসজিদ বন্ধ করে দিয়েছে ইসরায়েল। অন্যদিকে হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে আন্তর্জাতিক জোট গঠনের আহ্বান জানিয়েছে ফ্রান্স। আর ইসরায়েল বলেছে, এ যুদ্ধ বেশ দীর্ঘ হবে। খবর আলজাজিরার।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর মুখপাত্র ড্যানিয়েল হাগারি বলেছেন, মসজিদসহ ৪০০টির বেশি লক্ষ্যবস্তুতে বোমা হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। হাগারির দাবি, হামাসের কার্যক্রম পরিচালনার সদরদপ্তরে হামলা চালানো হয়েছে। এতে গোষ্ঠীটির অন্তত তিন ডেপুটি কমান্ডার নিহত হয়েছেন।

রান্না করতে পারছে না গাজাবাসী

জাতিসংঘ জানিয়েছে, গাজার বাসিন্দারা প্রয়োজনীয় ত্রাণসামগ্রী পাচ্ছেন না। যা পেয়েছেন, তাও রান্না করতে পারছেন না পানি ও গ্যাস না পাওয়ায়। শনিবার থেকে মাত্র ৫৪টি ট্রাকের ত্রাণসামগ্রী গাজায় প্রবেশ করেছে। অথচ প্রতিদিন ৫০০ ট্রাক প্রবেশ করত আগে। জেনারেটরের জন্য জরুরি জ্বালানি সরবরাহ করা হয়নি। চাল ও মসুর ডাল বিতরণ করা হলেও পানি ও গ্যাসের অভাবে তাও রান্না করতে পারছেন না তারা। অবরুদ্ধ গাজায় জ্বালানি পাঠানোর অনুমতি না দেওয়া এবং পানি সরবরাহ চালু না করায় ইসরায়েলের নিন্দা করেছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)। একই সঙ্গে ফিলিস্তিনিদের ওপর যুদ্ধাপরাধ করা হচ্ছে বলেও জানায় সংস্থাটি।

গাজার স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে বলে জানিয়েছেন এ উপত্যকার মেয়র। আর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) বলছে, ইসরায়েলি বিমান হামলার কারণে গাজার স্বাস্থ্যসেবার প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ বন্ধ হয়ে গেছে। গাজার ৩৫টি হাসপাতালের মধ্যে ১২টি, এবং ৭২টি স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রের মধ্যে ৪৬টি বন্ধ করে দিতে হয়েছে।

হত্যার ফ্রি লাইসেন্স বন্ধের আহ্বান কাতারের

গাজার যুদ্ধে ইসরায়েলকে সংযত করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি। তিনি বলেন, ইসরায়েলকে নিঃশর্ত সবুজ সংকেত এবং হত্যার বিনামূল্যে লাইসেন্স দেওয়া উচিত নয়। দখলদারিত্ব, অবরোধ ও বসতি স্থাপনের বিষয় উপেক্ষা করে ইসরায়েলকে ছাড় দেওয়ার সুযোগ নেই।

আল-আকসায় মুসল্লিদের নামাজ বন্ধ

এদিকে, আল-আকসা মসজিদ বন্ধ করে দিয়েছে ইসরায়েলি পুলিশ। পবিত্র স্থানটির দায়িত্বে থাকা ইসলামিক ওয়াক্‌ফ বিভাগ জানিয়েছে, হঠাৎ ইসরায়েলি পুলিশ অধিকৃত পূর্ব জেরুজালেমের আল-আকসা মসজিদ বন্ধ করে দেওয়ায় মুসল্লিরা মসজিদ প্রাঙ্গণে প্রবেশ করতে পারছেন না। তবে নিয়ম লঙ্ঘন করে ইহুদি উপাসকদের প্রবেশে কোনো বাধা দিচ্ছে না ইসরায়েলি পুলিশ।

ইসরায়েলে ছুটে গেলেন মাখোঁ

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকের পর এবার ইসরায়েলে ছুটে গেলেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ। গতকাল সফরকালে তিনি বলেন, ইসলামিক স্টেট বা আইএসআইএলের বিরুদ্ধে লড়াই করা আন্তর্জাতিক জোটের হামাসের বিরুদ্ধেও লড়াই করা উচিত। এই যুদ্ধে ইসরায়েল একা নয় বলেও মন্তব্য করেন ফরাসি নেতা। নিজ দেশের ৯ জন জিম্মি হয়েছে উল্লেখ করে মাখোঁ বলেন, লড়াইটা হতে হবে করুণাছাড়া, কিন্তু নিয়মছাড়া নয়। গাজায় বড় স্থল আক্রমণের বিষয়ে সতর্ক করে ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, হামাসকে পুরোপুরি ধ্বংস না করা পর্যন্ত এ যুদ্ধ চলবে। তিনি বলেন, বেসামরিক হতাহতের জন্য হামাস দায়ী। তবে আমরা তাদের এড়ানোর সর্বাত্মক চেষ্টা করব।

শিকাগোতে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভকারীদের ওপর মরিচ স্প্রে

ইসরায়েলি বর্বরতার বিরুদ্ধে বিশ্বজুড়ে বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রে ফিলিস্তিনের পক্ষে মিছিলকারীদের ওপর ফাঁকা গুলি ও মরিচ স্প্রে করার ঘটনা ঘটেছে। শিকাগোতে ইসরায়েলের পক্ষে হাজারখানেক মানুষের সংহতি অনুষ্ঠানের কাছে এ ঘটনা ঘটে। অনুষ্ঠানটির পাশ দিয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে মিছিল যাওয়ার সময় এক ব্যক্তি ফাঁকা গুলি চালায়। অন্যজন মরিচ স্প্রে করে। এ ঘটনায় দুইজনকে গ্রেপ্তার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এদিকে লেবানন-ইসরায়েল সীমান্তে সংঘাত অব্যাহত রয়েছে।

চাপ বাড়ছে আরব নেতাদের ওপর

ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে আরব নেতাদের ওপর চাপ বাড়ছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। কিন্তু এসব দেশ ইসরায়েলের পরম মিত্র যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক চুক্তিতে আবদ্ধ থাকায় বড় কোনো ভূমিকা নিতে পারছে না। কাতারের জর্জটাউন ইউনিভার্সিটির সহযোগী অধ্যাপক আবদুল্লাহ আল-আরিয়ান বলেছেন, আরব বিশ্বে তাদের নেতাদের এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে ব্যাপক বিক্ষোভ চলছে। কিন্তু এসব দেশ থেকে কোনো ইসরায়েলি কূটনীতিককে দেশে ফেরত পাঠানো হয়নি। ১৬ বছর ধরে গাজায় যে অবরোধ, তা তুলে নেওয়ার আহ্বানও করা হয়নি।

আরও খবর

Sponsered content