প্রতিনিধি ১৫ জুলাই ২০২০ , ১১:২৬:৫৯ প্রিন্ট সংস্করণ
বিশ্বজুড়ে দেশে দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ আবার বাড়তে থাকায় নতুন করে বিধিনিষেধের বেড়াজালে বন্দি জীবনে ফিরছে মানুষ।
করোনাভাইরাসের থাবা এখনও বহুদূর পর্যন্ত বিস্তৃত এবং এটি ছড়াচ্ছেও ব্যাপকহারে। ফলে ভাইরাসটিতে এরই মধ্যে বিপর্যস্ত হওয়া দেশগুলোকেও আবার ফিরে যেতে হচ্ছে লকডাউনে।
করোনাভাইরাসে নাকাল হওয়া স্পেনের পাশাপাশি ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, ইরান, অস্ট্রেলিয়া, কলম্বিয়া, মরোক্কোসহ আরও অনেক দেশের বহু অঞ্চলে, শহরে নগরে বিধিনিষেধ ফিরে আসছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।
অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন ও ইংল্যান্ডের লেস্টার শহরসহ বিশ্বের কয়েকটি দেশের বেশকিছু নগরীতে ফের সংক্রমণ বাড়তে থাকায় দ্বিতীয়বারের মতো সেসব জায়গায় লকডাউন দেওয়া হয়েছে। হংকংয়ে সামাজিক দূরত্ব বিধি পালনে ফের কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে, বন্ধ করা হয়েছে সব স্কুল।
বিশ্বজুড়ে মাত্র পাঁচ দিনে ১০ লাখেরও বেশি রোগী শনাক্তের মধ্যে দিয়ে করোনাভাইরাস আক্রান্তের সংখ্যা এক কোটি ৩০ লাখ ছাড়িয়েছে সোমবারেই।
করোনাভাইরাস সংক্রমণে জানুয়ারির শুরুর দিকে প্রথম মৃত্যুর পর মাত্র সাড়ে ছয় মাসের মধ্যে বিশ্বজুড়ে মৃত্যুর সংখ্যা পাঁচ লাখ ৭২ হাজার ছাড়িয়ে গেছে।
রোগটি এখন সবচেয়ে দ্রুত ছড়াচ্ছে লাতিন আমেরিকায়। আর দুই আমেরিকা মহাদেশে বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে, অর্ধেকের বেশি মৃত্যুর ঘটনাও সেখানে ঘটেছে।
৩৩ লাখ ৬৩ হাজার ৫৬ জন আক্রান্ত নিয়ে এবং এক লাখ ৩৫ হাজার ৬০৫ মৃত্যু নিয়ে উভয়ক্ষেত্রে বিশ্বে শীর্ষে আছে যুক্তরাষ্ট্র। এরপর আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যায় দ্বিতীয় স্থানে থাকা ব্রাজিলে এবং পাশাপাশি ভারতেও কোভিড-১৯ রোগীর সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে।
স্পেন
স্পেনের উত্তর-পূর্ব কাতালুনিয়ার একটি নগরীর প্রায় ১৬০,০০০ অধিবাসীকে কর্তৃপক্ষের নির্দেশে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিনে রাখা হচ্ছে।
স্পেনের আরও দুটি অঞ্চলে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ধরা পড়ার পর ৭০ হাজার অধিবাসীকে কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে।
১০ জনের বেশি মানুষের সমাগমে জারি হয়েছে নিষেধাজ্ঞা। আর কেবল প্রয়োজন ছাড়া কারো দেশের বাইরে যাওয়া কিংবা দেশটিতে কারো প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র
যুক্তরাষ্ট্রের ৫০ টি রাজ্যের মধ্যে প্রায় ৪০ টিতেই করোনাভাইরাস সংক্রমণ গত দু’সপ্তাহে দ্রুত বেড়েছে।
এর মধ্যে ক্যালিফোর্নিয়া ছাড়াও আছে ফ্লোরিডা, অ্যারিজোনা এবং টেক্সাস। ফলে রাজ্যগুলোতে আবার বিধিনিষেধ আরোপ হচ্ছে।
দেশটির সবচেয়ে জনবহুল রাজ্য ক্যালিফোর্নিয়ায় ব্যবসা-বাণিজ্য এবং জনসমাগম এলাকাগুলোতে কড়া বিধিনিষেধ আরোপ হয়েছে সোমবার।
অবিলম্বে সব ধরনের রেস্টুরেন্ট, বার, চিড়িয়াখানা, চার্চ, জিম, জাদুঘরসহ বিনোদনকেন্দ্র এমনকী সেলুনও বন্ধ রাখার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
অস্ট্রেলিয়া
অস্ট্রেলিয়া গত মে মাস থেকে সামাজিক দূরত্ববিধি শিথিল করাসহ অন্যান্য বিধিনিষেধ তুলে নিতে শুরু করার কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই আবার করোনাভাইরাসের প্রকোপ বাড়তে শুরু করে।
জুনের শেষদিকে ভিক্টোরিয়া রাজ্যের রাজধানী মেলবোর্নে কোভিড-১৯ রোগীর সংখ্যা বেড়ে ১শ’ ছাড়িয়ে যায়। ফলে শহরটিতে আবার কঠোর লকডাউন জারি করতে হয়।
মেলবোর্নে এরপরও সংক্রমণ বাড়তে থাকায় গত ৬ জুলাই তা ঠেকাতে ভিক্টোরিয়া এবং নিউ সাউথ ওয়েলসের মধ্যবর্তী সীমান্ত অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে অস্ট্রেলিয়া।
ভারত
ভারতে করোনাভাইরাস সংক্রমণ বাড়তে থাকার মধ্যে তা রুখতে গোটা রাজ্যেই ফের একবার লকডাউনের পথে হেঁটেছে বিহার সরকার৷
আগামী ১৬ থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত বিহারে আবার পূর্ণ লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। তবে এর মধ্যে চালু থাকবে জরুরি সব পরিষেবা।
এছাড়া, বেঙ্গালুরুতেও সংক্রমণ আচমকা বেড়ে যাওয়ায় ফের পূর্ণ লকডাউন জারি করেছে কর্নাটক রাজ্য সরকার। কর্নাটকের কালাবুরাগিতে ফের জারি হয়েছে কড়া লকডাউন। ১৪ থেকে ২২ জুলাই পর্যন্ত জারি থাকবে এ লকডাউন।
ইরান
দেশটিতে করোনাভাইরাস মহামারীর শুরুর দিকে ফ্রেব্রয়ারিতে লকডাউন জারি করা হয়েছিল। এরপর দৈনিক সংক্রমণ কমতে শুরু করায় দেশটি লকডাউন থেকে বেরিয়ে আসতে শুরু করেছিল।
কিন্তু বিধিনিষেধ শিথিল হতেই আবার ভাইরাস সংক্রমণ বাড়তে শুরু করেছে। সম্প্রতি ইরানে করোনাভাইরাসে মৃত্যু লাফিয়ে বাড়ার খবর পাওয়া গেছে।
জুনের মাঝামাঝি সময়ে দেশটিতে দুই মাসের মধ্যে প্রথমবারের মত মৃতের সংখ্যা ১শ পার হয়ে যায়। ওই সময় সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ আনতে না পারলে আবার কড়া বিধিনিষেধ আরোপের পথে হাঁটবেন বলে জানিয়েছিলেন ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি।
কিন্তু মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় জর্জরিত ইরান অর্থনীতিতে লকডাউনের চাপ আর নিতে পারছে না জানিয়ে এ মাসে রুহানি লকডাউনের পরিবর্তে বরং জনগণকে সামাজিক দূরত্বসহ সব স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানান।
মরোক্কো
মরোক্কো সোমবার উত্তরের একটি নগরীতে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে এ নগরীকে বিচ্ছিন্ন করে রাখার ঘোষণা দিয়েছে।
নগরীটি থেকে অন্যখানে যাওয়া কিংবা অন্যখান থেকে সেখানে প্রবেশ নিষিদ্ধ করাসহ বন্ধ করা হয়েছে সরকারি পরিবহন, সড়ক এমনকী রেল সংযোগও।
তাছাড়া, নাগরিকদের ঘরেই থাকা এবং কোনও প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না বেরোনোরও নির্দেশ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
কলম্বিয়া
কলম্বিয়াজুড়ে লকডাউনের বিধিনিষেধ শিথিল হতে থাকলেও রাজধানী বোগটা এবং আরো দুটি নগরীতে করোনাভাইরাস সংক্রমণ বাড়ার কারণে সেখানে জারি রয়েছে লকডাউন। বোগটার মেয়র গত মাসেই শহরে পূর্ণ লকডাউন ঘোষণা করেছেন।