প্রতিনিধি ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ , ৫:২৯:৩৯ প্রিন্ট সংস্করণ
চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলার হাশিমপুর আশ্রয়ণ প্রকল্প সড়কজুড়ে কাদা আর কাদা। দেখে মনে হয় সড়ক নয়, যেন চাষের জমি। রাস্তাটির এমনই বেহাল দশা যে, কোনো গাড়ি চলাচল করতে পারে না। গাড়ি নিয়ে চলাচল তো দূরের কথা, পায়ে হেঁটে চলাচলেরও কোনো অবস্থা নেই। এতে ওই সড়ক দিয়ে নিয়মিত যাতায়াতকারী মানুষের চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। দ্রুততম সময়ে কাঁচা সড়কটি পাকা করার দাবি জানিয়েছেন আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দারা।
জানা যায়, হাশিমপুর ইউনিয়নের সাত নম্বর ওয়ার্ডে আশ্রয়ণ প্রকল্পের অবস্থান। দুই শতাধিক পরিবার বসবাস করেন ওই আশ্রয়ণ কেন্দ্রে। আশ্রয়ণ প্রকল্পে যাওয়ার জন্য চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের বাগিচাহাট এলাকা থেকে শুরু হয়ে হাশিমপুর রেলস্টেশন পর্যন্ত এক কিলোমিটার অংশ পিচঢালা সড়ক থাকলেও রেলস্টেশন থেকে মাঝুর দোকান পর্যন্ত দুই কিলোমিটার অংশ ব্রিক সলিং থাকলেও প্রায় দুই শতাধিক স্থানে খানাখন্দভরা সড়কটিতে। আবার মাঝুর দোকান থেকে আশ্রয়ণ প্রকল্প পর্যন্ত এক কিলোমিটার অংশ কাঁচা। বর্ষাকালজুড়ে কাঁচা অংশটি কাদা-জলে বেহাল থাকে। কাদা মাড়িয়ে প্রতিনিয়ত চলাচল করতে হচ্ছে আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দাদের।
ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা ছাড়া অন্য যানবাহন চলাচল করে না এই অংশটিতে। গাড়ির চাকা কাদায় দেবে গেলে যাত্রী-চালকরা সবাই মিলে ঠেলা-ধাক্কা দিয়ে অনেক কষ্টে রাস্তা অতিক্রম করেন। আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দারা বলছেন, নিজেদের বসত ভিটা না থাকায় আশ্রয়ণ প্রকল্পে জমিসহ ঘর বরাদ্দ পেয়েছি। এতে ঘরের শান্তি পাইছি, তবে রাস্তার কষ্ট ঘরের শান্তি ভোগ করতে দিচ্ছে না। দ্রুততম সময়ে কাঁচা সড়কটি পাকা করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সদয় সুদৃষ্টি কামনা করছেন আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দারা।
আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা অটোরিকশা চালক তাহের বলেন, “আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দাদের সুবিধার্থে আমার ঘরে চাউল সহ নিত্যপ্রয়োজনীয় কিছু দ্রব্য বেচাকেনা করি। কাঁচা রাস্তার কারনে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে রিকশা রেখে এসব জিনিস কাঁধে করে আশ্রয়ণ প্রকল্পে নিয়ে যেতে হয়। অন্যান্য মালামাল কোনোমতে নিতে পারলেও চালের বস্তা বহন করে নিতে খুবই কষ্ট হয়।”
পারভিন নামে আরেক বাসিন্দা বলেন, “সরকার নাকি সারা দেশে অনেক উন্নয়ন কাজ করতেছে। এই রাস্তাটার দিকে একটু তাকাইলে ভালো হতো। আমরা এই রাস্তায় চলাচল করি, আমরাই বুঝি এই কাঁচা রাস্তায় চলাচল করা কত কষ্টের।”
মামুন নামের এক ট্রলি চালক বলেন, “খালি গাড়ি নিয়েও আমার ঘর পর্যন্ত আসতে পারি না কর্দমাক্ত রাস্তার কারনে। কিছুদিন আগে খালি গাড়ি নিয়ে বাগিচাহাট যাচ্ছিলাম। কাঁচা রাস্তার গর্তে পরে গাড়ি ভাঙছে। এই গাড়ি মেরামত করতে তিন হাজার টাকা ঋণ করেছি। দিন আনি দিন খাই, বার বার যদি এমন হয় তবে কেমনে এত টাকা খরচ করবো। এজন্য গাড়ি মেরামত করার পর ঘর থেকে এক কিলোমিটার দূরে গাড়ি রেখে ঘরে আসি। রাতে গাড়িটি চুরি হয়ে যায় কিনা এই আতংকে অনেক সময় রাতে ঠিকমতো ঘুমাতেও পারি না। এই রাস্তাটা দ্রুত পাকা করা হোক।”
এবিষয়ে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মোহাম্মদ আলমগীর জানান, “রাস্তাটি কেবলমাত্র আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দারা ব্যবহার করেন না। স্থানীয় লোকজনের চলাচলের জন্যও একমাত্র রাস্তা এটি। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে রাস্তাটি সংস্কারের জন্য ইতিপূর্বে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মহোদয় উদ্যোগ নিয়েছেন। এ রাস্তা সংস্কারে চাহিদাপত্র দেওয়া হয়েছে। যেহেতু নতুন অর্থবছর শুরু হয়েছে, আশা করি প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ হলে দ্রুতই রাস্তাটি সংস্কার কাজ শুরু করতে পারবো।”