প্রতিনিধি ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫ , ৪:২৬:১২ প্রিন্ট সংস্করণ
সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলার প্রত্যন্ত চরাঞ্চল নাটুয়ারপাড়া। চরের এই কোল ঘেঁষে বয়ে চলা প্রমত্তা যমুনায় জটলা বাধা অনেকগুলো নৌকা। এই নৌকাতেই বসেছে পাটের হাট। নদীপথে ক্রেতা- বিক্রেতাদের যাতায়াত সুবিধার কারণে ভাসমান এ হাট সরগরম হয়ে ওঠে ভোর থেকেই। চলে সকাল থেকে প্রায় সাড়ে এগারোটা পর্যন্ত। শত বছর ধরে বসছে নাটুয়ারপাড়ার ব্যতিক্রমী এ হাটটি। দূরদূরান্ত থেকে নৌকা যোগে এ ভাসমান পাটের হাটে পাট কেনা বেচা করতে আসেন ক্রেতা-বিক্রেতারা। নৌকার পাশাপাশি নদীপাড়েও প্রচুর পাট কেনা বেচা হয়।
গত বুধবার সরেজমিন ওই ভাসমান পাটের হাটে গিয়ে দেখা গেছে, কাজিপুর সহ পার্শ্ববর্তী জামালপুরের সরিষাবাড়ি, মাদারগঞ্জ, টাঙ্গাইলের ভূয়াপুর, বগুড়ার ধুনট, শেরপুর, সারিয়াকান্দির ক্রেতা বিক্রেতারা ভাসমান এই হাটে পাট কেনা-বেচা করতে এসেছেন নৌকা যোগে। তীর থেকে ১শ গজ ফাঁকে নোঙর ফেলে নৌকা থামিয়ে অর্ধশতাধিক নৌকায় কেনা বেচা হচ্ছে পাট। নৌকাতেই হাঁকডাক চলছে। বিক্রেতাদের কাছ থেকে পাট কিনে অন্য নৌকায় উঠিয়ে নিচ্ছেন ব্যাপারিরা। নৌকার পাশাপাশি চরাঞ্চলের একমাত্র পরিবহন ঘোড়ার গাড়িতেও পাট বোঝাই করে স্থানীয় কৃষকরা পাট বিক্রি করতে আসেন।
বগুড়ার সারিয়াকান্দি থেকে আবুল কালাম নাটুয়ারপাড়ার ভাসমান এ পাটের হাটে পাট বিক্রি করতে এসেছেন । তিনি জানান, ‘চার বিঘা জমিতে পাটের আবাদ করেছিলেন। এইবছর ভালো দাম পাচ্ছেন।
চন্দনবাইশার চাষি শাহজাহান আলী বলেন, ‘পাট কাটা ও ধোয়া কামলার দাম বেশী। তবে পাটের দাম মন মতো হওয়ায় খরচের বিষয় আর চিন্তা করতে হচ্ছে না। পাট কাটার পর পানির অভাবে জাঁক দিতে দেরি হয়েছিল।
জামালপুরের ব্যাপারি সোনার উদ্দিন বলেন, নৌপথে যাতায়াত খরচ কম তাই এখানে আসছি, প্রতি বছরই আসি। আজকে ৩’শ মণ পাট কিনছি। এগুলো আবার নৌকাতেই নিয়ে যাবো।’
সারিয়াকান্দির ব্যাপারি আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘প্রতি বছরই এ হাটে পাট কিনতে আসি। এখানে দাম কিছুটা কম পাওয়া যায়। যাতায়াত খরচাও কম।’
হাটের ইজারাদার আব্দুল লতিফ সরকার বলেন, ‘দূরদূরান্ত থেকে আসা ব্যাপারীরা প্রয়োজনে এখানে থাকতেও পারবেন। আগস্ট থেকে শুরু হয়ে অক্টোবরের শেষ পর্যন্ত এখানে পাটের হাট বসে। প্রতি হাটে ৬ থেকে ৭ হাজার মণ পর্যন্ত পাট বেচা-কেনা হয়। নিরাপত্তার কোন ঘাটতি নেই এখানে। নগদ টাকায় বেচাকেনা হয় এ হাটে। তবে বৃষ্টির কারণে একটু সমস্যা হচ্ছে বেচা-কেনায়।’
কাজিপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম বলেন,’ এবছর উপজেলায় ৪ হাজার ২৫০ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছে। প্রতি হেক্টরে প্রায় দেড় মেট্রিকটন পাট উৎপাদন হয়েছে। পোকামাকড়ের উপদ্রব কম হওয়ায় পাটের বাম্পার ফলন হয়েছে। কৃষক দামও বেশি পাচ্ছেন।’

















