রংপুর

কার্তিকেও রাজারহাটে তিস্তার গর্ভে বিলীন হচ্ছে বসতভিটা ও ফসলি জমি

  প্রতিনিধি ২০ অক্টোবর ২০২০ , ৩:০১:২৩ প্রিন্ট সংস্করণ

আব্দুল হাকিম সবুজ, রাজারহাট (কুড়িগ্রাম) :

কার্তিক মাসেও রাজারহাটে তিস্তা নদীতে ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে। রাক্ষুসি তিস্তার করাল গ্রাসে উপজেলার বিদ্যানন্দ ইউনিয়নে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে শতশত একর ফসলি জমি ও বসতভিটা। হুমকির সম্মুখিন বাজার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ, মন্দিরসহ বিভিন্ন স্থাপনা।

আতঙ্কে রাত কাটাচ্ছে তীরবর্তী মানুষ। এ অবস্থায় ভুক্তভোগীরা ভাঙন প্রতিরোধে স্থায়ী সমাধানের দাবি জানিয়েছেন। সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের রামহরি, পাড়ামৌলা, কালির মেলা, চতুরা, গাবুর হেলান, রতি, তৈয়বখাঁ, বিদানন্দসহ ৮টি গ্রামের বিভিন্ন স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। চলতি মৌসুমে শতাধিক পরিবারের বসতভিটা ও ফসলি জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে।

প্রতিদিন বিলীন হচ্ছে ঘরবাড়ি, ভিটেমাটি, গাছপালা ও ফসলি জমি। অব্যাহত ভাঙনে হুমকির সম্মুখিন রামহরি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, তৈয়বখাঁ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, জামে মসজিদ, মন্দির, কালির মেলা থেকে বিজলি বাজার পাকা রাস্তাসহ গ্রামের বাড়িঘর।

ভাঙন আতঙ্কে অনেকে গ্রাম ছেড়ে চলে যাচ্ছেন অন্যান্য স্থানে। চলতি মৌসুমে শুধু রামহরি গ্রামেই নদী ভাঙনে ভিটেমাটি হারিয়েছে ২০টি পরিবার। ওই গ্রামের ঐতিহ্যবাহি পরিবার ওহাব ধনীর। সর্বশেষ এবারে তাদের আধাপাকা বাড়িটি নদী গর্ভে চলে যাওয়ার পর সর্বশান্ত হয়ে তারা স্বপরিবারে কাজের সন্ধানে পাড়ি জমিয়েছেন ঢাকা শহরে। এখনও নদী গর্ভে বিলীন হওয়া বাড়িটির ভগ্নাংশ পরে রয়েছে। প্রতি বছর বন্যার পানি কমতে শুরু করলে প্রকট হয় নদী ভাঙন।

রামহরি গ্রামের আব্দুল কাদের (৬৫) বলেন, আমার বয়সে তেরবার নদী ভাঙছে, এখন বাড়ি করার মতন জায়গা নাই। অন্যের জায়গায় একনা ঠাঁই নিয়া আছি। একই গ্রামের তোফাজ্জল হোসেন বলেন, চ্যাংরা বয়স থাকি নদী ভাঙন দেখি আসছি, ভাঙতে ভাঙতে মোর সব শ্যাষ। এল্যা টাকাও নাই, বাড়ি করার জায়গাও নাই। তৈয়বখাঁ গ্রামের বিমল চন্দ্র বলেন, নদীর উপরা ৩ টা ঘর নিয়া আছনো, তাও নদীত গেইছে। বেটা-বেটি বিয়ার লাইক হইছে, বাড়িঘর নাই বিয়া দিবার পাও না।

ওই গ্রামের আব্দুল গণি (৬২), হক্কানি (৫৫), আব্দুল ওয়াহাব সহ স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, আমরা ত্রাণ চাই না, সরকার যেন নদী ভাঙন রক্ষায় স্থায়ী ব্যবস্থা করেন।
উপজেলার বিদ্যানন্দ ইউনিয়ন চেয়ারম্যান তাইজুল ইসলাম জানান, এক যুগে নদী ভাঙনে বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের মানচিত্র বদলে গেছে। এভাবে ভাঙন অব্যাহত থাকলে এক সময় বিদ্যানন্দ ইউনিয়নকে হয়তো খুঁজে পাওয় যাবে না।

কুড়িগ্রাম পাউবোর উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মাহমুদ হাসান জানান, এখন শরৎ কাল। এ মহুর্তে নদী ভাঙন প্রতিরোধে জরুরী কিছু করার নেই।

আরও খবর

Sponsered content