উপ-সম্পাদকীয়

কৃষিবিদদের প্রণোদনা অধোরায় থেকে যাবে!!! 

  প্রতিনিধি ২৬ এপ্রিল ২০২০ , ৯:০৮:০৮ প্রিন্ট সংস্করণ

ড. মো. ওমর আলী : কৃষিবিদরা গবেষণা ও সম্প্রসারণসহ কৃষির বিভিন্ন সেক্টরে কৃষির মান উন্নয়ন ও খাদ্য এবং পুষ্টি চাহিদা পূরণে বরাবরই  নিরলসভাবে কাজ করে আসছে। কিন্তু তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের কৃষিক্ষেত্রে তেমন সহযোগিতা না পাওয়ায় কৃষিবিদের ইচ্ছা থাকলেও  কাঙ্খিত উন্নয়ন করতে পারতো না। কিন্তু স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে ভঙ্গুর দেশে খাদ্যসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রেই অভাব অনটন দেখা দেয়।  তখন বঙ্গবন্ধু তাঁর দূরদর্শিতা থেকে এটা বুঝতে পারলেন এদেশের উন্নয়নের জন্য প্রথমত দরকার খাদ্যের অভাব দূর করা। তা হতে হবে এদেশেই খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে। তখন তিনি তাঁর মেধা ও প্রজ্ঞার মাধ্যমে উপলব্ধি  করলেন যে কৃষিকে উন্নয়ন করতে  হলে কৃষিতে উৎপাদন সামগ্রী সরবরাহের পাশাপাশি কৃষি পেশায় নিয়োজিতদের মান সম্মান বৃদ্ধি করা দরকার যা কৃষিকে এগিয়ে  নিয়ে যাবে কাঙ্খিত সীমায় পৌঁছাতে। আর ঐসময়েই বর্তমান মাননীয় কৃষি মন্ত্রী মহোদয় ড. মোঃ  আব্দুর  রাজ্জাক, এমপি ছিলেন  বাকসুর সাধারণ সম্পাদক যার নেতৃত্বে কৃষি সেক্টরের সকলের চাওয়া আর বঙ্গবন্ধুর সর্বোপরি নিজস্ব সদিচ্ছার ফলেই ১৯৭৩ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহে এক বিশাল জনসভায় কৃষিবিদদের প্রথম শ্রেণীর পদ মর্যাদা ঘোষণা  করেন এবং তিনি বলেছিলেন তোরা আমার মুখ রাখিস। সেই থেকেই কৃষিবিদরা তাঁর মুখ রেখেই চলেছে। যার ফলে ঐসময়ে যেখানে ৭.৫ কোটি মানুষ না খেয়ে থাকতো সেখানে প্রতিনিয়তো জমি কমেও বর্তমানে ১৬ কোটিরও বেশি মানুষ খেয়ে পরেও খাদ্যসামগ্রী বিদেশে রপ্তানি করা হচ্ছে। আর এসব অবদান কৃষিবিদদের মেধা, প্রজ্ঞা আর অক্লান্ত পরিশ্রমের ফল। এছাড়াও কৃষি  শিক্ষায় মেধাবীদের আরো অংশগ্রহণ বাড়ছে যা কৃষিকে আরো সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। 

কৃষিবিদরা বন্যা, খরা, জলোচ্ছ্বাস, ঝড়ঝাপটা, মরা, ঝরা, কলেরা, ডেঙ্গু, করোনা নানা প্রতিকূলতার মাঝেও কৃষকের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বৃষ্টিতে ভিজে, রোদে পুড়ে মাঠে ঘাটে করছে কাজ কিন্তু বিনিময়ে চাইনি তারা কোন প্রণোদনা। আর এতে তাদের  কাজেরও কোন ঘাটতি নেই বরং অবিরাম করছে কাজ। অথচ সরকার আজ করোনা ঝুঁকিতে নিয়োজিত ডাক্তার, নার্স, মেডিকেল  টেকনোলোজিস্ট, পুলিশ ও প্রশাসনসহ বিভিন্ন পেশার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য প্রণোদনা ঘোষণা করেছেন। আমরা কৃষিবিদরা সরকারের এ উদারতাকে সাধুবাধ জানাই। কিন্তু কৃষিবিদরাও বর্তমান সময়ে মাঠে ঘাটে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে করছে কাজ বিনিময়ে  তাদের  জন্য নেই কোনো কিছু। যেমন- হাওড়সহ বিভিন্ন অঞ্চলে ধান কাটা নিয়ে বর্তমানে কৃষিবিদদের চোখে ঘুম নাই। গবেষকসহ কৃষির সকল সেক্টরের কর্মকর্তা কর্মচারী ঝুকি নিয়েই কিন্তু করছে কাজ। 

কৃষিবিদরা প্রণোদনাতো পাচ্ছেইনা বরং নিজেদের প্রকৃত প্রাপ্যতা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে পদে পদে। যেমন: তাদের পদোন্নতি খুবই কম। যা আছে তাও বেশীরভাগ না পেয়ে বঞ্চিত হয়। কৃষির বিভিন্ন সেক্টরে খেয়াল করলেই দেখা যায় যেমন – কৃষি সম্প্রসারণ ও নার্স সিস্টেমের বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানসহ কৃষি বিভাগের সকল প্রতিষ্ঠানেই উপরের পদগুলোতে পদোন্নতি না দিয়ে ভারে ভারাক্রান্ত করে দীর্ঘদিন রেখে দেওয়া হয়। বর্তমানে কৃষির কোন সেক্টরেই শীর্ষ পদে পদোন্নতি প্রাপ্ত কর্মকর্তা নেই। কিন্তু এদের কি যোগ্যতার অভাব? অথচ সবাই অবগত যে কৃষি সেক্টরেই সর্বোচ্চ ডিগ্রীধারী কর্মকর্তার সংখ্যা অনেক বেশি। কিন্তু কেন এদের পদোন্নতি হয়না!! এরাওতো মানুষ তাই  চাওয়া পাওয়া আছে। আর চাওয়া পাওয়ার ব্যবধানই সুখ দুঃখের মাপকাঠি। আর মানুষ যখন তার সঠিক প্রাপ্যতা পায়না তখন হতাশায় ভোগে। যা তার কাজের গতি এবং অনেক সময় আয়ুও কমিয়ে দেয়। আর সামাজিক মর্যাদাতো থাকেইনা। আবার নীচের দিকেও পদোন্নতি না থাকায় মেধাবীরা অন্য চাকুরীতে চলে যাচ্ছে। ফলে আগামীতে কৃষি উন্নয়নে বাধা সৃষ্টি  হবে তাতে কোন সন্দেহ নাই। এতে করে অধিকন্তু,  দেশ জাতি  ক্ষতিগ্রস্থই হবে। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর চাওয়া কি এমন ছিল!! বিষয়টি কিন্তু এখন ভাবার সময় এসেছে। অথচ অনেক সেক্টরে পদের  চেয়েও ৩-৪ গুণ বেশি বা তার চেয়েও বেশি গুণে পদে পদোন্নতি দেওয়া হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে তাদের অফিসে  বসার জায়গাও থাকেনা কিন্তু পদোন্নতির পর পদোন্নতি পেয়েই চলেছে!!!  অথচ তাঁরা নাকি আমাদের অভিভাবক বিষয়টি ভাবতেই অবাক লাগে!! আসলে তাঁরা আমাদের কেমন অভিভাবক??  শুধু যারা নিজেদেরই নিতে জানে তাদের আসলে অন্যদের নিয়ে বোধহয়  ভাবতেও  মানা!! 

না পেয়ে পেয়ে কৃষিবিদরা প্রণোদনা কেন সব কিছুই পাওয়া যেন ভুলেই গেছে। এই যেমন বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা মাননীয়  প্রধানমন্ত্রী  শেখ হাসিনা বিজ্ঞানীদের জন্য ২০১২ সালে প্রণোদনা প্যাকেজ (যেমন: ইনসিটো পদোন্নতি, চাকরির বয়সসীমা বৃদ্ধিসহ নানা সুবিধা) দেওয়ার  জন্য এক পত্রে সহি করেছিলেন। যে পত্রে সহি করেছিলেন তৎকালীন কৃষি  মন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী এবং কৃষি সচিব ড. কিউ মুসতাক আহমেদ। কিন্তু তা বিভিন্ন চক্রান্তে আজো আলোর মুখ দেখেনি!!! অথচ অনেক সেক্টরই পাচ্ছে ইনসিটো পদন্নোতি আর প্রণোদনা আর কৃষিবিদরা অধোরাই থেকে যাচ্ছে!!! তাই মাননীয় কৃষি মন্ত্রীর মাধ্যমে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমাদের আকুল আবেদন এই যে, দেশে করোনা পরিস্থিতি ভালো হলে কৃষিবিদদের চাওয়া পাওয়ার প্রতি দৃষ্টি দিবেন।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং কৃষি মন্ত্রী মহোদয়কে আমরা কৃষিবিদরা এই বলে আশ্বস্ত  করতে চাই যে, আমরা প্রণোদনা পাই আর না পাই এদেশে আর নতুন করে খাদ্যের অভাব হতে দিবনা ইনশাআল্লাহ। আমরা আমাদের মেধা আর শ্রম দিয়ে খাদ্য এবং পুষ্টির  যোগানসহ কৃষির সকল সেক্টরেই উন্নয়নের গতিশীলতাকে আরো বেগবান করবো। তবে এটা সত্য যে, প্রতিটি অনুদানই কিন্তু প্রতিদান চাই।

লেখক: সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ কৃষিতত্ত্ব সমিতি।

আরও খবর

Sponsered content