প্রতিনিধি ১১ অক্টোবর ২০২৫ , ১২:৩৮:০৭ প্রিন্ট সংস্করণ
গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলেও এই অঞ্চলের ভবিষ্যৎ শাসনব্যবস্থা নিয়ে অনিশ্চয়তা কাটেনি। স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস ও এর মিত্র দলগুলো স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে— গাজার শাসনব্যবস্থা নির্ধারণ সম্পূর্ণ ফিলিস্তিনিদের নিজস্ব বিষয়।
শুক্রবার এক যৌথ বিবৃতিতে ফিলিস্তিনি ইসলামিক জিহাদ ও পপুলার ফ্রন্ট ফর দ্য লিবারেশন অব প্যালেস্টাইন (পিএফএলপি) হামাসের এই অবস্থানের প্রতি সমর্থন জানায়। তারা জানায়, গাজার প্রশাসনিক কাঠামো কেমন হবে, তা নির্ধারণের অধিকার একমাত্র ফিলিস্তিনিদেরই। নিজেদের সম্মিলিত প্রতিনিধিত্বের মাধ্যমেই তারা ভবিষ্যৎ শাসনব্যবস্থা ঠিক করবে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত করার ইসরায়েলি পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়েছে। শত্রু রাষ্ট্রগুলোর যেকোনো ধরনের ‘বিদেশি শাসনের’ বিরুদ্ধেই ফিলিস্তিনিরা ঐক্যবদ্ধ থাকবে। পাশাপাশি যুদ্ধবিরতির পরবর্তী ধাপ নির্ধারণে একটি ‘জরুরি জাতীয় বৈঠক’ আহ্বানের কথাও জানায় সংগঠন দুটি। তাদের দাবি, এই বৈঠক ফিলিস্তিনিদের অবস্থানকে ঐক্যবদ্ধ করবে এবং অংশীদারত্ব, স্বচ্ছতা ও বিশ্বাসযোগ্যতার ভিত্তিতে জাতীয় প্রতিষ্ঠান পুনর্গঠনে ভূমিকা রাখবে। তবে প্রভাবশালী দল ফাতাহ এই বৈঠকে অংশ নেবে কি না, তা এখনও অনিশ্চিত।
এই যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবিত ২০ দফা শান্তি পরিকল্পনার ভিত্তিতে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, গাজার প্রশাসনিক তত্ত্বাবধানের জন্য ‘বোর্ড অব পিস’ নামে একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা গঠনের কথা বলা হয়েছে। এটি ‘অন্তর্বর্তী টেকনোক্র্যাট কর্তৃপক্ষ’-এর কাজ পরিচালনা করবে। ট্রাম্প নিজেই এর চেয়ারম্যান হবেন, যেখানে যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারসহ আরও কয়েকজন আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্ব যুক্ত থাকবেন।
চুক্তির অনুলিপি অনুযায়ী, যুদ্ধবিরতির প্রথম ৭২ ঘণ্টার মধ্যে হামাসকে অবশিষ্ট জিম্মিদের মুক্তি দিতে হবে এবং প্রকাশ্য উদ্যাপন না করার শর্ত রয়েছে। পাশাপাশি প্রতিদিন অন্তত ৬০০টি ত্রাণবাহী ট্রাক গাজায় প্রবেশ করবে, সুপেয় পানি সরবরাহ পুনরায় চালু করা হবে এবং গৃহহীনদের জন্য আশ্রয়কেন্দ্র স্থাপন করা হবে।
ফিলিস্তিনি সিভিল ডিফেন্স জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর গাজা নগরীর বিভিন্ন স্থান থেকে ৬৩টি মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে বহু আহত ও নিখোঁজ ব্যক্তি রয়েছেন, যাদের উদ্ধারে কাজ চলছে। ইসরায়েলি বাহিনী উত্তরাঞ্চলীয় উপকূলীয় এলাকা থেকে সরে যাওয়ার পর হাজারো বাস্তুচ্যুত মানুষ ধ্বংসস্তূপ পেরিয়ে নিজেদের ভাঙা ঘরে ফেরার চেষ্টা করছে।
আল–জাজিরার প্রতিবেদক হানি মাহমুদ বলেন, ‘গাজার প্রায় পুরো শহরটিই বোমাবর্ষণে ধ্বংস হয়ে গেছে। উপকূলীয় সড়কের প্রবেশমুখে গিয়ে জায়গাটা চিনতে পারিনি— সব কিছুই ভস্মীভূত।’ গাজার সরকারি গণমাধ্যম দপ্তর জানায়, যুদ্ধবিরতির পরপরই পুনর্গঠন পরিকল্পনা গ্রহণ জরুরি হয়ে পড়েছে। প্রথম ধাপে ধ্বংসস্তূপ সরাতে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও সরঞ্জাম পাঠানোর আহ্বান জানানো হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী, বিতর্কিত সংস্থা জিএইচএফকে পাশ কাটিয়ে জাতিসংঘ ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থা ত্রাণ বিতরণের দায়িত্বে থাকবে। তবে জিএইচএফ জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতি সত্ত্বেও তারা গাজায় তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাবে।











