প্রতিনিধি ১০ অক্টোবর ২০২০ , ৪:১১:২১ প্রিন্ট সংস্করণ
নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের একলাসপুরে গৃহবধূকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের ঘটনায় গ্রেফতার তিন আসামিকে নিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) তদন্তকারী দল।
শনিবার (১০ অক্টোবর) বেলা ১১টার দিকে আসামি বাদল, কালাম ও সাজুকে একলাসপুর ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের নির্যাতনের শিকার ওই নারীর বাড়িতে নিয়ে যায় পিবিআই। এ সময় আসামিদের সঙ্গে ঘটনাস্থল ঘুরে দেখেন পিবিআই কর্মকর্তারা।
এর আগে শুক্রবার (৯ অক্টোবর) বেগমগঞ্জ থানায় নির্যাতনের শিকার ওই গৃহবধূর দায়ের করা পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে করা দুটি মামলা পুলিশ সদর দফতরের নির্দেশে অধিকতর তদন্তের জন্য পিবিআইয়ে হস্তান্তর করা হয়।
পিবিআইয়ের ইন্সপেক্টর মোস্তাফিজুর রহমান জানান, গৃহবধূকে নির্যাতনের ঘটনায় বেগমগঞ্জ মডেল থানায় দায়ের করা মামলা দুটি তদন্তে পিবিআইয়ের দুজনের ওপর দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে করা মামলাটি তিনি নিজে দেখবেন। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে করা মামলাটি ইন্সপেক্টর মামুনুর রশিদ তদন্ত করবেন। তদন্তের প্রথম দিন আজ তারা বাদল, আবুল কালাম ও সাজুকে নিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
দুই মামলায় এখন পর্যন্ত ১১ জনকে গ্রেফতার করা হলেও ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী দেলোয়ার হোসেন র্যাব-১১ এর হেফাজতে নারায়ণগঞ্জে রিমান্ডে রয়েছেন। বাকি ১০ জনের মধ্যে চারজন দোষ স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয়ায় তাদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
বর্তমানে পিবিআইয়ের কাছে থাকা আসামি বাদল, আবুল কালাম, সাজু, মাইন উদ্দিন, সাহেদ ও রহমত রিমান্ডে রয়েছেন।
এদিকে গৃহবধূকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের প্রতিবাদ ও দোষীদের শাস্তি দাবিতে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের চৌরাস্তায় বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ ও মানববন্ধন সমাবেশ করেছে।
জানা গেছে, গত ২ সেপ্টেম্বর ওই গৃহবধূর স্বামী তার সঙ্গে দেখা করতে দীর্ঘদিন পর বাবার বাড়ি আসেন। রাত ৯টার দিকে শয়নকক্ষে স্বামী-স্ত্রী একসঙ্গে ছিলেন। এ সময় বাদল, রহিম, আবুল কালাম, ইসরাফিল হোসেন, সাজু, সামছুদ্দিন সুমন, আবদুর রব, আরিফ ও রহমত উল্লাহসহ অজ্ঞাত কয়েকজন দরজা ভেঙে তাদের ঘরে প্রবেশ করে। এরপর তার স্বামীকে মারধর করে পাশের কক্ষে নিয়ে আটকে রাখে।
একপর্যায়ে তারা ওই গৃহবধূকে বিবস্ত্র করে ধর্ষণের চেষ্টা করে। এতে রাজি না হলে তারা তার ওপর নির্মম নির্যাতন চালায় এবং মুঠোফোনে ভিডিও ধারণ করে। এ সময় তার চিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এলে হামলাকারীরা কাউকে কিছু জানালে তাকে হত্যার হুমকি দেয়। হামলাকারীরা চলে যাওয়ার পর কাউকে কিছু না জানিয়ে নির্যাতিত ওই গৃহবধূ জেলা শহর মাইজদীতে বোনের বাড়ি আশ্রয় নেন।
সেখানে থাকা অবস্থায় মুঠোফোনে হামলাকারীরা তাদের প্রস্তাবে রাজি না হলে নগ্ন ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়ার হুমকি দেয়। একপর্যায়ে রোববার দুপুরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ওই ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে দেশব্যাপী তোলপাড় শুরু হয়। টনক নড়ে প্রশাসনের। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত মোট ১১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।