ঢাকা

গোপালগঞ্জে শিক্ষক ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে সরকারি গাছ কেটে পাচারের অভিযোগ

  প্রতিনিধি ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২০ , ৮:০৮:৪৩ প্রিন্ট সংস্করণ

গোপালগঞ্জে শিক্ষক ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে সরকারি গাছ কেটে পাচারের অভিযোগ

কে এম সাইফুর রহমান, গোপালগঞ্জ প্রতিনিধিঃ

গোপালগঞ্জে এক শিক্ষক ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে সরকারি শতাধিক গাছ কেটে পাচারের অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী সদস্যরা ও এলাকাবাসী।
সদর উপজেলার সাতপাড় ইউনিয়নের সাইন পুকুরিয়া গ্রামের রানা পাশা ও নবীরের খালপাড় এলাকা সংলগ্ন সরকারি জায়গায় স্থানীয়দের সহযোগিতায় সরকারি পর্যায়ে লাগানো এই গাছগুলো দেদারসে কেটে নেয় তারা। সোমবার সরেজমিনে গিয়ে এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকার ঘোষিত লকডাউনে যখন সবকিছু বন্ধ ছিলো। ঠিক সেই সুযোগে সাইন পুকুরিয়া গ্রামের মৃত হরষিৎ বালার ছেলে, একই গ্রামের একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিরেন্ময় বালা, বড় খোলা গ্রামের মৃত শিশির চৌধুরীর ছেলে প্রহলাদ চৌধুরী ও সাইন পুকুরিয়া গ্রামের পাগল মণ্ডলের ছেলে খোকন মন্ডলের যোগসাজশে সুপরিকল্পিতভাবে আত্মসাতের উদ্দেশ্যে বন বিভাগ কর্তৃক রোপণকৃত আকাশমনি সহ বিভিন্ন প্রজাতির প্রায় শতাধিক গাছ কেটে ফেলে প্রভাবশালী এ চক্রটি। ওই সমিতির অন্য সদস্যরা ও এলাকাবাসী বিষয়টি জানতে পেরে তাদেরকে বাঁধা দিয়ে ব্যর্থ হয়ে গত ৩০ জুন ২০২০ খ্রি. গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসক সহ বিভিন্ন মহলে ৪৯ জন সদস্যের স্বাক্ষর যুক্ত একটি অভিযোগ পত্র পেশ করেন। পরবর্তীতে, তদন্ত সাপেক্ষে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা বন বিভাগের (ভারপ্রাপ্ত) কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম খান বাদী হয়ে শিক্ষক হিরেন্ময় সহ ৩ জনের বিরুদ্ধে সরকারি গাছ কেটে চুরি করার অপরাধে একটি মামলা করেন। পরবর্তীতে, অভিযুক্তরা বিজ্ঞ আদালত থেকে জামিন নিয়ে অবৈধ ভাবে কাটা সেই গাছ গুলো গত রোববার গভীর রাতে মুকসুদপুর উপজেলার উজানী ইউনিয়নের বরম পাল্টা গ্রামের কান্দন রায়ের পুকুর থেকে ইঞ্জিন চালিত নৌকা (ট্রলার) যোগে অন্যত্র সরিয়ে নেয় বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী সদস্যরা।

এ বিষয়ে ওই পুকুরের মালিক কান্দন রায় ও তার ছেলে সজল রায় ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, দিনের বেলায় নিজেদের পুকুর পরিষ্কার করতে গিয়ে জালে গাছের গুড়ি আটকে পড়ে। পরে বিষয়টি জানাজানি হলে গত রোববার রাতে শিক্ষক হিরেন্ময় তার সহযোগীদেরকে নিয়ে দুলাল ঘরামীর ট্রলার যোগে গাছের গুড়িগুলো অন্যত্র সরিয়ে নেয়। গাছের গুঁড়িগুলো অন্যত্র নিতে তাদেরকে সহায়তা করেন তপন বৈদ্য, মিন্টু বিশ্বাস ও খোকন মন্ডল সহ আরো অনেকে। ভুক্তভোগীরা আরো বলেন, সুচতুর শিক্ষক হিরেন্ময় আইনি ঝুট ঝামেলা এড়াতে সেই গাছ গুলো দিয়ে স্কুলের টেবিল, চেয়ার ও বেঞ্চ বানিয়েছেন বলে দাবি করেন। প্রকৃতপক্ষে তিনি ওই বিদ্যালয়ের কোন আসবাবপত্রই তৈরি করেননি। আর এই গাছগুলো যদি সেই গাছ না হবে, তাহলে রাতের আঁধারে চুপিসারে তারা এহেন কর্মকাণ্ড কেন করবে। আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার জোর দাবি জানাচ্ছি।

সাতপাড় ইউপি চেয়ারম্যান সুজিৎ মন্ডল এ বিষয়ে জানান, নিয়ম বহির্ভূতভাবে গাছ গুলো কেটে ফেলায় আমি বিস্মিত হই। পরবর্তীতে ওই এলাকার অধিকাংশ সদস্যদের অভিযোগের প্রেক্ষাপটে বন বিভাগ মামলা করে। আদালত থেকে তারা জামিন নিয়ে সেই গাছগুলো যেখানে ছিলো, সেখানে থেকে অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছে বলেও শুনেছি।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত হিরেন্ময় বলেন, আম্পানে কিছু গাছ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলো, আমি সেই গাছগুলো দিয়ে স্কুলের টেবিল, চেয়ার ও বেঞ্চ সহ অন্যান্য আসবাবপত্র বানিয়েছি। আমি কোন গাছ পাচার করিনি।

সদর উপজেলা বন কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ও মামলার বাদী জাহাঙ্গীর আলম খান গণমাধ্যমকে জানান, শিক্ষক হিরেন্ময় ও তার সহযোগীরা সেই গাছের গুড়িগুলো অন্যত্র সরিয়েছে বলে শুনেছি। অচিরেই তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আরও খবর

Sponsered content