প্রতিনিধি ৩ ডিসেম্বর ২০২৪ , ৭:০৪:২০ প্রিন্ট সংস্করণ
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মহসিন উদ্দীন, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মো. আলাউদ্দিন ও উপজেলা প্রকৌশলী এস এম জাহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়টি দীর্ঘদিন ধরেই সাধারণ মানুষের মুখে মুখে ব্যাপক আলোচনায় ছিলো।
জনস্বার্থে গণমাধ্যমকর্মী কে এম সাইফুর রহমান ও বিল্লাল হোসেন নামের দু’জন সচেতন ব্যক্তি গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসক ও বিজ্ঞ জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এবং দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) গোপালগঞ্জ জেলা কার্যালয়ে লিখিত অভিযোগ দিয়ে তদন্তের আবেদন জানিয়েছেন।
ইতিমধ্যেই দুর্নীতির অভিযোগ ওঠা ওই তিন কর্মকর্তার মধ্যে ইউএনও মহসিন উদ্দীন এবং পিআইও মো. আলাউদ্দিনকে বদলির নির্দেশ দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও দপ্তর। সম্প্রতি পিআইও মো. আলাউদ্দিন স্টেশন ত্যাগ করে নুতন কর্মস্থল ঝিনাইদহ সদর উপজেলায় যোগদান করলেও অজানা কারণে এখন পর্যন্ত ইউএনও মহসিন উদ্দীন নুতন কর্মস্থলে যোগদান করেননি।
লিখিত অভিযোগ থেকে জানা যায়, ইউএনও মহসিন উদ্দীন, উপজেলা প্রকৌশলী এস এম জাহিদুল ইসলাম, পিআইও মোঃ আলাউদ্দিন সাবেক সরকার দলীয় বেশ কয়েকজন জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের নেতার সাথে যোগসাজশ রেখে দীর্ঘদিন ধরে দুর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে সদর উপজেলার বিভিন্ন প্রকল্প ও বরাদ্দ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। জ্ঞাত আয়বহির্ভূত অর্থ দিয়ে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন দুদকের অনুসন্ধানে তা বেরিয়ে আসবে। এছাড়াও বিভিন্ন ব্যাংকে নামে-বেনামে জমিয়েছেন টাকা।
অনিয়ম ও দুর্নীতির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহাবুব আলী খানের ব্যক্তিগত সম্পত্তিতে (মৎস্য ঘেরে) ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের ব্রিজ নির্মাণ। ভূমিহীন, গরিব ও অসহায়দের মাঝে বিতরণ করা মুজিব বর্ষের আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘর নির্মাণে নিম্নমানের ইট ও নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে। মাটির নিচে ইট কম দেওয়া, সিমেন্ট কম ব্যবহার করা। ভুয়া প্রকল্প দিয়ে এডিপি’র বরাদ্দ আত্মসাৎ, সদরের ইউএন ও উপজেলা প্রকৌশলী ক্ষমতার অপব্যবহার করে কতিপয় ব্যক্তির নিকট থেকে বড় অংকের উৎকোচ নিয়ে অন্যের মালিকানাধীন জমির ওপর আদালতের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে অন্যায়ভাবে এডিবি’র বরাদ্দে রাস্তা নির্মাণ করে দিয়েছেন।
পরবর্তীতে অভিযোগের প্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসক মহোদয়ের নির্দেশও উপেক্ষা করার অভিযোগ রয়েছে। সদর উপজেলার ৭নং উরফি ইউনিয়নের পুরাতন আদর্শ গ্ৰামের ঘর নিলামে বিক্রি না করে গোপনে বিক্রি করে টাকা আত্মসাৎ এর অভিযোগ রয়েছে। ইউএনও’র সহকারী সঞ্চিতা সিকদার ও সিএ বিকাশকে দিয়ে নিজ দপ্তরের কাজে ঠিকাদারী ব্যবসা করানোর অভিযোগও রয়েছে ইউএনওর বিরুদ্ধে। এছাড়া উপজেলা পরিষদ চত্বরে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল তৈরিতে বাড়তি টাকা বরাদ্দ দিয়ে আত্মসাৎ এর অভিযোগ রয়েছে। পিআইও মোঃ আলাউদ্দিন চাকুরী বিধি লঙ্ঘন করে নিজ অফিসে বসেই প্রকাশ্যে ধূমপান ও মাদক সেবন, যা তাকে ডোপটেষ্ট করালে প্রমাণ পাওয়া যাবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে ওই অভিযোগে।
এছাড়াও তার রয়েছে নারী কেলেঙ্কারির অভিযোগ। ২০২২ সালে নিজ দপ্তরের পিয়ন আলী আহম্মদ শিকদারের স্ত্রীকে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগে গোপালগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলা হয়েছিলো। তৎকালীন সময়ে আওয়ামী লীগ নেতাদের মাধ্যমে বাদীকে চাপ প্রয়োগ করে ৮ লক্ষ টাকা জরিমানা দিয়ে মামলা নিষ্পত্তি হয়। অপরদিকে উপজেলা প্রকৌশলী এস এম জাহিদুল ইসলাম মাসুদ নামের এক রং মিস্ত্রীকে ব্যবহার করে বিভিন্ন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্সে কাজ নিয়ে নিজেই ব্যবসা করেছেন এমন একাধিক অভিযোগ রয়েছে। অতিসম্প্রতি উপজেলা পরিষদের প্রধান ফটক ও সীমানা প্রাচীর নির্মাণ কাজে একই ধরনের কৌশল ব্যবহার করেছেন তিনি।
বিভিন্ন ঠিকাদারদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে এলজিইডি’র বিভিন্ন প্রকল্পের বাস্তবায়নাধীন রাস্তায় পচা ইট, পাথর ও নিম্নমানের বিটুমিন ব্যবহার করার সুযোগ করে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে ওই উপজেলা প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে। এছাড়াও নিজ দপ্তরের সিডিউল বিক্রির টাকা সরকারি কোষাগারে জমা না দিয়ে আত্মসাৎ করার রেকর্ডও রয়েছে ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।
গোপালগঞ্জ জেলা শহরের হেলিপ্যাড ও দাউদ শেখের বাড়ি সংলগ্ন কয়েক কোটি টাকা মূল্যের সুবিশাল প্লট রয়েছে ওই কর্মকর্তার। আইনী ঝুট-ঝামেলা এড়াতে গোপনে বিক্রি করে দেওয়ার পাঁয়তারা চালাচ্ছেন বলেও অনুসন্ধানে জানা গেছে।
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) গোপালগঞ্জ কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মোঃ মশিউর রহমান এ বিষয়ে আমাদের প্রতিনিধিকে জানান, উপজেলা পর্যায়ের ওই তিন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। আমাদের মাসিক মিটিং হওয়ার পরে ঢাকা হেড অফিসে পাঠানো হবে, হেড অফিস থেকে তদন্তের অনুমতি পেলে আমরা তদন্ত শুরু করবো।
এবিষয়ে অভিযুক্ত সদর উপজেলা নিবার্হী অফিসার মহসিন উদ্দীন বলেন, অভিযোগগুলো ভিত্তিহীন ও বানোয়াট। অপর অভিযুক্ত উপজেলা প্রকৌশলী এস এম জাহিদুল ইসলাম জানান, এ সকল কাজের সাথে আমার কোন সংশ্লিষ্টতা নেই। আমি কোন অনিয়ম দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত নই। অভিযুক্ত পিআইও মোঃ আলাউদ্দিনের মুঠোফোনে ০১৭….১৯৪ নম্বরেএকাধিকবার ফোন দিলেও তিনি তা রিসিভ করেননি।
গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসক ও বিজ্ঞ জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মুহম্মদ কামরুজ্জামান এ বিষয়ে আমাদের প্রতিনিধিকে বলেন, বিষয়গুলো তদন্ত করা হবে। অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।