প্রতিনিধি ১ মে ২০২০ , ৪:৫১:৪৮ প্রিন্ট সংস্করণ
এসএম ওমর আলী সানি, আগৈলঝাড়া (বরিশাল) : বরিশালের গৌরনদী উপজেলার বার্থী ইউনিয়নের তাঁরাকুপি গ্রামে বৈদ্যুতিক উপকেন্দ্র স্থাপনের সময় ৩টি গ্রামের পানি প্রবাহ’র একমাত্র খালটি ভরাট করে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠন। কয়েক দিনের ভারি বর্ষানের পানি জমা হলে তা নিস্কাশন হতে না পারায় সৃষ্টি হয়েছে স্থায়ী জলাবদ্ধতা।
প্রায় ৫শত একর জমির ধান, পাটসহ নানা ধরনের সবজির জলাবদ্ধার ফলে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এ ছাড়া অনেক জমি রয়েছে অনাবাদি। ভূক্তভোগী কৃষকরা এর প্রতিকার চেয়ে বৃহস্পতিবার উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও ডিজিএম এর কাছে লিখিত আবেদন করেছেন। কৃষকরা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দ্রুত সহযোগীতা কামনা করেছেন।
স্থানীয়দের অভিযোগে জানা গেছে, গৌরনদী উপজেলার বার্থী ইউনিয়নের তাঁরাকুপি গ্রামের বরিশাল–ঢাকা মাহসড়কের পাশে বরিশাল পল্লী বিদ্যু সমিতি–২ এর আওতাধীন আরইইবিডিপি–২ এর অর্থায়নে গৌরনদী ৩,৩৩/১১ কেভি বৈদ্যুতিক উপকেন্দ্র নিমার্ণের কাজ ২০১৮ সালের এপিল মাসে শুরু হয়।
বার্থী ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সভাপতি জহুরুল হক বেপারী বলেন, ‘বৈদ্যুতিক উপকেন্দ্রটি নির্মাণ কাজের সময় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান বালু ভরাট করে কটকস্থল, তাঁরাকুপি ও পশ্চিম বাউগাতি গ্রামের পানি প্রবাহ’র একমাত্র খালটি ভরাট করে। এ সময় এলাকাবাসী পানি নিস্কাশনের জন্য কালভার্ট নির্মানের দাবিতে গৌরনদী পল্লী বিদ্যুৎ জোনাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজারের কাছে লিখিত আবেদন করেন।
আবেদনে কোন সারা না পেয়ে এলাকাবাসি কাজে বাঁধা প্রদান করেন। বাঁধা উপেক্ষা করে গত বছর জুন মাসে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান রাতের আধাঁরে অপরিকল্পিত ভাবে নামে মাত্র একটি পাইপ বসিয়ে রাস্তা নির্মান করে পানি প্রবাহ বন্ধ করে দেয়। সেই পাইপ দিয়ে কোন প্রকার পানি প্রবাহ হয় না। পানি প্রবাহ না হওয়ার ফলে সামান্য বৃষ্টি হলেই পুরো এলাকা জলাবদ্ধা সৃষ্টি হয়’।
তাঁরাকুপি গ্রামের জানে আলম জানান, জলাবদ্ধতার কারনে তার ২০ শতক জমি অনাবাদি রয়েছে। কটকস্থল গ্রামের মাসুদ মিয়া বলেন, ‘গত কয়েকদিনের ভাড়ি বর্ষনে জলাবদ্ধতার কারনে আমার তিন একর জমির আঁধাপাকা বোরো ধান তলিয়ে গেছে। ধান ঘরে তুলতে পারবো কিনা তা নিয়ে দুর চিন্তায় আছি। একই ভাবে জানালেন তাঁরাকুপি গ্রামের পারভীন বেগমসহ অনেক ক্ষতিগ্রস্থ কৃষক। তাঁরাকুপি গ্রামের আব্দুল হালিম বেপারী জানান, পল্লী বিদ্যুতের বাঁধের কারণে তারসহ অনেকের পান বরজে পানি জমে ক্ষতি হয়েছে। কটকস্থল গ্রামের কৃষক কেরামত আলী মাঝি জানান, তার ৪ একর জমির মেজতা ও বগি পাট নষ্ট হয়ে গেছে। এ ছাড়া সবজিসহ অন্যান্য ফসলেরও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকরা গতকাল শুক্রবার নিজ উদ্যোগে বৈদ্যুতিক উপকেন্দ্রের পাশের খালে দেয়া নামে মাত্র পাইটি দু’পাশের মাটি কেটে পানি প্রবাহর জন্য চেষ্টা করেন। কিন্তু পানির স্থর থেকে নিস্কাশনের পাইপ অনেক উপরে স্থাপন করায় পানি প্রবাহ হচ্ছে না। ভূক্তভোগী কৃষকরা প্রতিকার চেয়ে বৃহস্পতিবার উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও গৌরনদী পল্লী বিদ্যুৎ জোনাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার এর কাছে লিখিত আবেদন করেছেন।
এ ব্যাপারে গৌরনদী পল্লী বিদ্যুৎ জোনাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার জুলফিকার হায়দার চৌধুরীর সাথে কথা বললে, তিনি কোন মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।
বার্থী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান প্যাদা তিনটি গ্রামের জলাবদ্ধাতা ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতির কথা স্বীকার করে বলেন, ‘স্থানীয় ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের কথা চিন্তা করে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে’।
গৌরনদী উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইসরাত জাহান লিখিত আবেদন পাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, ‘সরেজমিনে তদন্ত পূর্বক পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে’।