দেশজুড়ে

গ্যাস লিকেজ বিদ্যুতের স্পার্কেই মসজিদে দুর্ঘটনা

  প্রতিনিধি ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২০ , ১১:০২:৩৪ প্রিন্ট সংস্করণ

গ্যাস পাইপ লিকেজ থেকে বিপুল পরিমাণ পুঞ্জীভূত গ্যাসের কারণেই নারায়ণগঞ্জের তল্লা এলাকায় বায়তুস সালাত জামে মসজিদে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। ওইদিন মসজিদের একটি বৈদ্যুতিক সুইচ চাপ দেওয়ার সময় আগুনের স্ফুলিঙ্গ সৃষ্টি হয়। এ সময় মসজিদের ভেতর জমে থাকা গ্যাসে আগুনের উৎপত্তি হয়। মূলত সেই আগুনের কারণেই এসিগুলো বিস্ফোরিত এবং বড় ধরনের দুর্ঘটনায় হতাহতের ঘটনা ঘটে। বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এমন তথ্য। একই সঙ্গে মসজিদ ভবন নির্মাণে বিল্ডিং কোড মানা হয়নি বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। তিতাসের তদন্তে প্রতিবেদনেও উল্লেখ করা হয়েছে পাইপলাইনের লিকেজ থেকে নির্গত গ্যাস এবং বিদ্যুতের স্পার্ক থেকেই আগুন লেগে নারায়ণগঞ্জের তল্লার ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটেছে। দুর্ঘটনায় মসজিদ কমিটি এবং স্থানীয় দুজন গ্রাহকের দায় রয়েছে। এ ক্ষেত্রে তিতাসের কোনো দায় নেই বলে সরকারি এই প্রতিষ্ঠানের তদন্ত কমিটি রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর এবং তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি গঠিত তদন্ত কমিটি তাদের প্রতিবেদন যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দেই। নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসন গঠিত পৃথক তদন্ত কমিটিও গতকাল তাদের তদন্ত রিপোর্ট দাখিল করেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে তিতাসে তদন্ত রিপোর্ট বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের হাতে তুলে দেওয়া হয়।

এ সময় অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিতাস গ্যাসের গঠিত তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক আবদুল ওয়াহাব বলেন, অবৈধ গ্যাস সংযোগের রাইজার থেকে ও পাইপলাইনের ওপর মসজিদ নির্মাণ করায় লাইনের ছিদ্র থেকে নির্গত গ্যাস মসজিদ জমা হয়। বিদ্যুতের অবৈধ লাইন ব্যবহার করতে গিয়ে স্পার্কের মাধ্যমে বিস্ফোরণ ঘটে মসজিদে আগুন ধরে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে আমরা ধারণা করছি। তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার সময় উপস্থিত ছিলেন, জ্বালানি সচিব আনিছুর রহমান, পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান আবদুল ফাত্তাহ, তিতাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলী মো. মামুন, তদন্ত কমিটির প্রধান প্রকৌশলী আবদুল ওয়াহাব তালুকদার।

সংবাদ সম্মেলনে তিতাসের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এ বিস্ফোরণে তিতাসের কোনো দায় নেই। উল্লেখ্য, গত ৪ সেপ্টেম্বর শুক্রবার রাতে এশার নামাজ আদায়ের সময় নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার পশ্চিম তল্লা বায়তুস সালাত জামে মসজিদে বিস্ফোরণ থেকে অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় এ পর্যন্ত ৩১ জন মারা গেছেন। বিস্ফোরণের পর ৩৭ জনকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে দগ্ধ অবস্থায় ভর্তি করা হয়। চিকিৎসাধীন অন্য দগ্ধদের অবস্থাও আশঙ্কাজনক। এক ব্যক্তি কেবল সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন।

সংবাদ সম্মেলনে প্রতিমন্ত্রী বলেন, দায় শুধু এককভাবে কাউকে দেওয়া যাচ্ছে না। তিতাসের পাইপলাইনে যেমন সমস্যা ছিল তেমনি গ্রাহকেরও দায় আছে। দুই পক্ষেরই সচেতন হওয়া প্রয়োজন। তিতাসের প্রতিবেদন আমরা আজ হাতে পেলাম। এ প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে সে অনুযায়ী আমরা ব্যবস্থা নেব। তিনি বলেন, ডিপিডিসির অবৈধ লাইনের বিষয়ে তদন্ত চলছে এখনো। কেউ দায়ী হলে তিতাসের মতোই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা ইতোমধ্যে তিতাসের ৮ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সাসপেন্ড করেছি।

তদন্ত প্রতিবেদনের বিষয়ে তদন্ত প্রধান আবদুল ওহাব বলেন, এ দুর্ঘটনার পরপরই আমাকে আহ্বায়ক করে একটি তদন্ত কমিটি করা হয়। কমিটি গত ৯ দিন কাজ করেছে। আমরা নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করার চেষ্টা করেছি। মূলত গ্যাসের লিকেজ কীভাবে হলো তা দেখতে মসজিদের আশপাশের সব মাটি তুলে ফেলে অনুসন্ধান করেছি। এতে আমরা দেখতে পাই মসজিদ নির্মাণের সময় আমাদের পাইপলাইন ক্ষতিগ্রস্ত করেছে তারা। সেখানে আমরা চার জায়গায় পাইপের র‌্যাপিং উঠে গিয়ে মরিচা পড়ে লিকেজের তথ্য পাই। মসজিদের অবকাঠামো দুর্বল হওয়ায় নানা দিক থেকেই গ্যাস লিকেজ হতে পারে।

এর বাইরে বিদ্যুতের দুই লাইন থাকায় একটি লাইনে বিদ্যুৎ চলে যাওয়ায় আরেকটি লাইন চালু করতে গেলে স্পার্ক হওয়া স্বাভাবিক। এ স্পার্ক থেকে মসজিদের ভেতরে জমে থাকা গ্যাস থেকে আগুন লাগতে পারে। তিনি অভিযোগ করেন, ওই এলাকার মো. শওকত ও বারাক নামে দুজন ১৯৯৬ সালে গ্যাসের দুটি লাইন নেয়। এর পর তারা তিতাসের অনুমতি ছাড়া রাইজার স্থাপন করেন। পরে তারা এ এলাকা ছেড়ে চলে যাওয়ার সময় সেই রাইজার মাটির নিচে ঢুকিয় দেন। পরিত্যক্ত রাইজারটি বন্ধ না করে মাটির নিচে দেওয়ার কারণেও গ্যাসের লিকেজ হতে পারে। সুতরাং গ্যাস লিকেজের জন্য ওই দুই ব্যক্তিও দায়ী বলে তিনি জানান।

দুর্ঘটনার পর মসজিদ কমিটির সদস্যরা অভিযোগ করে, লিকেজে মেরামতের জন্য তিতাসের স্থানীয় অফিসে জানানো হলে তারা ঘুষ চায়। এ ঘুষের বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিতাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলী মো. মামুন বলেন, আমরা ঘুষের বিষয়টি আলাদাভাবে তদন্ত করে দেখেছি। অনেকে গণমাধ্যমের সামনে এই অভিযোগ করলেও বাস্তবে এর কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেনি। আমরা নানাভাবে চেষ্টা করেছি। এমনি গত ছয় মাসের তিতাসের ফতুল্লা অফিসের অভিযোগ কল রেকর্ড চেক করেছি। এমন কোনো অভিযোগ কেউ করেনি।

তিনি বলেন, আমরা তদন্ত প্রতিবেদন পেয়েছি। তিতাসের আটজন এখন বরখাস্ত আছে। সত্যিই কেউ যদি দোষী হয় তাকে ছাড় দেওয়া হবে না।

তদন্ত প্রতিবেদনের বিষয়ে তদন্ত প্রধান জানান, টিনশেড মসজিদটি ১৯৯৬ সালে পাকা ভবনে রূপান্তরিত করা হয়। এর আগে ১৯৮৭ সালে তিতাস গ্যাসের এক ইঞ্চি ব্যাসের নেটওয়ার্ক স্থাপন করা হয়, যা হতে ৩টি আবাসিক সংযযোগ দেওয়া হয়েছে। যার একটি ছিল মসজিদের দক্ষিণে এবং অপর দুটি মসজিদের উত্তর দিকে। মসজিদের উত্তর পাশের রাস্তায় সংযোগ দুটির সার্ভিস লাইন প্রায় চার ফুট মাটির নিচে ছিল। মসজিদের পূর্ব পাশে তিতাস গ্যাসের এক ইঞ্চি ব্যাসের একটি বিতরণ লাইন রয়েছে। তা ছাড়া মসজিদের উত্তর পাশের রাস্তায় দুটি ৩ বাই ৪ ইঞ্চি ব্যাসের পরিত্যক্ত সার্ভিস লাইন রয়েছে। সেই সার্ভিস লাইনের নিচ দিয়ে মসজিদের উত্তর-পূর্ব থেকে উত্তর দিকের ৪নং কলামের বেইজ নির্মাণ করা হয়েছে। বেইজ নির্মাণ করার সময় মাটি খনন, সাটারিং স্থাপন কাজে কোদাল, ক্ষুন্তি হাতুড়ি ব্যবহার হয়েছে। তাতে মেকানিকাল ড্যামেজ বাই এক্সটারনাল থ্রাস্ট’-এর জন্য পাইপের উপরি ভাগ ডেবে গেছে এবং গ্যাস লাইনের রেপিং নষ্ট হয়েছে, ফলে গ্যাস পাইপ (এমএস পাইপ) মাটির সংস্পর্শে আসে এবং মরিচাজনিত কারণে পাইপে লিকেজের সৃষ্টি হয়েছে। মসজিদ কমিটি মসজিদের কলামের বেইজ তৈরি করার সময় তিতাস গ্যাসকে অবহিত করলে ওই সার্ভিস লাইন অপসারণ করতে বা ক্ষতিগ্রস্ত রেপিং মেরামত করে দিত। তা হলে লিকেজের সৃষ্টি হতো না।

তিনি আরও জানান, মসজিদের উত্তর দিকের পূর্ব-পশ্চিম বরাবর ৪ ফুট পুরুত্ব বিশিষ্ট আরসিসি ঢালাই করা রাস্তা। গ্যাসলাইন লিকেজ হওয়ার পর লিকেজ গ্যাস সরাসরি আরসিসি ঢালাইবিশিষ্ট রাস্তা ভেদ করে ওপরে আসতে পারেনি কিন্তু পাইপলাইনের পাশেই (মাত্র ১৬ ফুট দক্ষিণে) মসজিদের দেওয়াল। কিন্ত সেই দেয়ালের নির্মাণ মান খুবই খারাপ ছিল বা দেয়ালের আস্তরণ ছিল না, তা ছাড়া পাকা বাড়ি বা মসজিদ নির্মাণের সময় মানসম্মত ফ্লোর নির্মাণ করার বিধান রয়েছে, যা এখানে করা হয়নি। ফলে ফ্লোর টাইলসের সংযোগস্থল থেকে গ্যাস বের হতে পারে। আবার মসজিদের নিচের কম্পাকশন একেবারেই ঠিক ছিল না। মসজিদের নিচের মাটি যথাযথ না থাকায় গ্যাস সরাসরি ওপরের দিকে বের হতে পারেনি। এ কারণে গ্যাস মসজিদের ভেতরে চলে যেতে পারে এবং ফ্লোরের বিভিন্ন স্থানে টাইলসের সংযোগস্থল থেকে বের হতে পারে। আবার লিকেজস্থল থেকে প্রায় ৪০-৫০ ফুট দূরে মসজিদে প্রবেশপথ (কলাপসিবল গেট) পর্যন্ত গ্যাস প্রবাহিত হতে পারে ও কলাপসিবল গেটের নিচ দিয়েই গ্যাস বের হতে পারে। এসব বিষয়ের কারণে মসজিদ নির্মাণ কাজের ত্রুটিগুলো নিশ্চিত হওয়া গেছে।

তদন্ত প্রতিবেদনে বিদ্যুতের বিষয়ে বলা হয়, মসজিদে দুটি বিদ্যুৎ সংযোগ ছিল। যার মধ্যে একটি সংযোগ ছিল বৈধ এবং অপর সংযোগটি মিটারবিহীন এবং অবৈধ। ওই বৈধ ও অবৈধ সংযোগ দুটির মধ্যে একটি চেইঞ্জ ওভার ছিল। একটি ফিডারের বিদ্যুৎ চলে গেলে অন্য ফিডার থেকে তারা অবৈধভাবে বিদ্যুৎ ব্যবহার করত। অপর দিকে বৈধ সংযোগটি তিন ফেজবিশিষ্ট কিন্ত অবৈধ সংযোগটি সিঙ্গেল ফেজবিশিষ্ট ছিল।

মসজিদে দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে তদন্ত প্রতিবেদনে পুরো দোষ চাপানো হয়েছে মসজিদ কমিটির ওপর। বলা হয়, গ্যাস নিজে নিজে জ্বলতে পারে না। অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ নেওয়ার জন্য মসজিদ কমিটি দায়ী। মসজিদ কমিটি দুর্ঘটনা সংঘটিত হওয়ার কয়েক দিন আগে থেকেই মসজিদে গ্যাসের গন্ধ পাচ্ছিলেন। তারপরও মসজিদ কমিটি এসি অংশের দরজা জানালা বন্ধ করে এসি চালিয়ে নামাজ আদায় করেছেন কিন্তু নিরাপত্তার জন্য মুসল্লিদের সতর্ক করা হয়নি। মসজিদ কমিটির অজ্ঞতা-অসচেতনতার জন্য এবং মসজিদে অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য এ দুর্ঘটনার সৃষ্টি হতে পারে। তাই এর দায়ভার তাদের ওপর পড়বে।

এ ছাড়া কমিটি আরও জানায়, মসজিদটি নির্মাণ ও তৃতীয় তলাবিশিষ্ট মসজিদ ভবন নির্মাণ করার জন্য ইউনিয়ন পরিষদ বা উপজেলা পরিষদ জেলা পরিষদ সিটি করপোরেশন থেকে অনুমোদন নেওয়া হয়নি।

পাইপ লিকেজে গ্যাস জমাট বেঁধে বিস্ফোরণ : ফায়ার সার্ভিস

মসজিদে স্মরণকালের ভয়াবহ অগ্নি দুর্ঘটনায় ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে ৪ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। প্রতিবেদন দাখিলের জন্য কমিটিকে ১০ কার্যদিবস সময় দেওয়া হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের ডিজি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. সাজ্জাদ হোসাইনের কাছে প্রতিবেদন জমা দেয় কমিটি।

প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে ফায়ার সার্ভিস সূত্র জানায়, মসজিদের ভবন তৈরির সময় বিল্ডিং কোড মানা হয়নি। পাইপ লিকেজের বিষয়টি এলাকাবাসী বা মসজিদ কমিটি তিতাস কর্তৃপক্ষের কাছে অবগত বা অভিযোগ করেছে এমন কোনো লিখিত দলিল পাওয়া যায়নি। তবে অনেকে কমিটির কাছে বলেছে তারা মৌখিকভাবে তিতাসকে লিকেজের বিষয়ে অবগত করে। বিস্ফোরণের কারণ হিসেবে পাইপ লিকেজের ফলে মসজিদের ভেতরে গ্যাস জমাট বেঁধে থাকার কথা উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। তা থেকেই আগুনের সৃষ্টি ও পরবর্তী সময়ে এসিগুলো বিস্ফোরণ হয়েছে।

জানা গেছে, প্রায় ১৫-১৬ বছর আগে পশ্চিম তল্লা জামে মসজিদটির পাকা স্থাপনা নির্মাণ করা হয়। মসজিদে প্রবেশপথের গেটে একটি কলাপসিবল গেট, দুটি কাচের টানা দরজা ছিল। মসজিদের বারান্দা থেকে ভেতরের অংশ থাই দিয়ে সাঁটানো ছিল। থাই দিয়ে ঘেরা অংশের ভেতরে ১৫টি জানালা, ছয়টি এয়ারকন্ডিশন, ২৬টি সিলিং ফ্যান, ৭০টি সুইচ সকেট ছিল। মসজিদের আশপাশ দিয়ে নেওয়া গ্যাস পাইপলাইনে ৬টি লিকেজ পেয়েছে তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। মসজিদ নির্মাণে রাজউক, তিতাস, বিদ্যুৎ বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট কোনো দপ্তরের অনুমোদন নেয়নি মসজিদ কমিটি। মসজিদে দুটি বিদ্যুতের লাইনের একটি অবৈধ। দুটি লাইনের একটি ম্যানুয়ালি এবং অন্য লাইনটি অটো ব্যবহার হতো। ঘটনার সময় মসজিদে এসি চালু ছিল; সব জানালা-দরজা ছিল বন্ধ। গ্যাসের লিকেজ থেকে অল্প অল্প করে মসজিদের ভেতরে গ্যাস পরিপূর্ণ হয়ে যায়। এশার নামাজের সময় বিদ্যুৎ চলে যায়। এর পর মসজিদের মুয়াজ্জিন একটি লাইনে বিদ্যুৎ চলে যাওয়ায় অবৈধ অন্য বিদ্যুতের লাইন চালু করতে গেলে সুইচে বিদ্যুৎ স্পার্ক করে। এতে মসজিদের ভেতরে জমে থাকা গ্যাসে আগুন ধরে যায়। সঙ্গে সঙ্গে বিস্ফোরণ ঘটে। সম্পূর্ণ বন্ধ থাকায় আগুন লেগে যায় মসজিদের প্রায় প্রতিটি কোনায়। মসজিদটি যেখানে নির্মাণ করা হয়েছে সেই রাস্তা অনেক সরু এবং নিচু এলাকায়। এ কারণেই হতাহতের হার অনেক বেশি হয়েছে।

ফায়ার সার্ভিসের ডিজি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. সাজ্জাদ হোসাইন জানান, মসজিদে অগ্নিকা-ের ঘটনায় ফায়ার সার্ভিসের গঠিত তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। প্রতিবেদনে আগুনের কারণ ও সুপারিশ দেওয়া হয়েছে।

এককভাবে কোনো পক্ষকে দায়ী করেনি জেলা প্রশাসনের তদন্ত কমিটি

নারায়ণগঞ্জের পশ্চিম তল্লায় বাইতুস সালাত জামে মসজিদে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় জেলা প্রশাসনের গঠিত তদন্ত কমিটি তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন। কমিটি গঠনের দীর্ঘ এগারো দিন পর দু’দফায় সময় নিয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকালে জেলা প্রশাসক মো. জসিম উদ্দিনের হাতে ৪০ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন দাখিল করেন তদন্ত কমিটির প্রধান ও অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট খাদিজা তাহেরা ববি।

প্রতিবেদন দাখিলের পর তদন্ত কমিটির প্রধান ও অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট খাদিজা তাহেরা ববি গণমাধ্যমকে বলেন, তদন্ত প্রতিবেদনে তিতাস গ্যাস পাইপের লিকেজ, বিদ্যুৎ বিভাগের ত্রুটি, মসজিদ কমিটির গফিলতি, ভবন নির্মাণে রাজউকের অব্যবস্থাপনা এবং মসজিদের সামনের রাস্তা নির্মাণে সংশ্লিষ্টদের অবহেলার বিষয়টি এসেছে। এ ছাড়া এসব অনিয়ম রোধে তদন্ত কমিটি জেলা প্রশাসকের কাছে ১৮ দফা সুপারিশ পেশ করেছে। এর মধ্যে মসজিদ নির্মাণের আগে স্থপতিদের দিয়ে ড্রয়িং বা নকাশা করা, মসজিদ বা সরকারি প্রতিষ্ঠানে বিদ্যুৎ ও গ্যাসলাইন সংযোগের ব্যাপারে ম্যাপ আকারে বিভিন্ন দিক নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। তবে তদন্তে বিস্ফোরণের জন্য এককভাবে কাউকে দায়ি করা হয়নি বলেও জানান তদন্ত কমিটির প্রধান।

প্রতিবেদন হাতে পেয়ে জেলা প্রশাসক মো. জসিম উদ্দিন বলেন, তদন্ত কমিটি দশ কার্যদিবসের মধ্যে তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। প্রতিবেদনে তিতাস, ডিপিডিসি ও মসজিদ কমিটিসহ প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে তদন্ত রিপোর্ট তৈরি করে জমা দিয়েছেন। তদন্ত কমিটির রিপোর্ট ও তাদের দেওয়া সুপারিশ বিচাবেনা করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পাশাপাশি এই প্রতিবেদনটি কেবিনেট সচিবের কাছেও প্রেরণ করা হবে বলে জানান জেলা প্রশাসক।

আরও খবর

Sponsered content