প্রতিনিধি ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২০ , ৬:৫৩:০৯ প্রিন্ট সংস্করণ
বাপ্পা মৈত্র, সিলেট : চারপাশে সবুজ উঁচু-নিচু টিলার নগর খ্যাত সিলেটের টিলা গুলো রাতের আঁধারে কেটে ফেলা হচ্ছে। প্রতিদিন সন্ধ্যা নামার সাথে সাথেই নগরের ৮ নং ওর্য়াডের হাওলদারপাড়ার মজুমদার টিলায় শ্রমিক দিয়ে শুরু হয় মাটি কাটার মহোৎসব। চলে সারা রাত ধরে, ভোর হওয়ার সাথেই মাটি কাটা বন্ধ করে চলে যান শ্রমিকেরা। সন্ধ্যার পর নগরের কালিবাড়ি রাস্তায় পুলিশের টহল থাকা সত্তে¡ও থেমে নেই ভূমিখেকোরা। মজুমদার টিলার অর্ধেকের বেশি ভাগই কেটে মাটি বিক্রি করা হয়ে গেছে। কাটা অংশে তুলা হয়েছে নতুন বাসাবাড়ি। বাহির দিয়ে টিনের বেড়া দিয়ে ভিতরে চলে মাটি কাটা। আবার কখন কখনও দেখা যায় বৈদ্যুতিক বাতি জ্বালিয়ে মাটি কেটে সাবার করছেন শ্রমিকেরা। জানা যায়, নগরের সবচেয়ে বড় মজুমদার টিলাটি প্লট আকারে বিক্রি করা হয়ে গেছে অনেক আগেই। গোপনে হয়েছে টিলার প্লটগুলো ক্রয়-বিক্রয়। তারপর থেকেই নিরবে চলছে টিলাটি ধ্বংসের কর্মযজ্ঞ। টিলার চারপাশে গড়ে তুলা হয়েছে বাসাবাড়ি, ভাড়া দেয়া হয়েছে দোকান কোটাও। মজুমদার টিলার মালিক সুব্রত মজমদার প্রবাসী হওয়ায় টিলার প্লট ক্রয়-বিক্রয়ের কাজটি করেছের নগরের লামাবাজারের বাসিন্দা ও সিলেট জজ কোর্টের একজন আইনজীবি। টিলাটির অধিকাংশ প্লট কিনেছেন সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা ছাড়াও ব্যাংকার, প্রাইভেট চাকরিজীবিরা। কালীবাড়ি, হাওলদারপাড়া, ব্রাহ্মণশাসন এলাকার স্থায়ী বাসিন্দারা জানান, টিলা কাটা ও মাটি পরিবহন কাজ রাতে চলে। সারা রাত ধরে ট্রাক চলার শব্দে অনেকেই ঘুমাতে পারছেন না। প্লট কেনা বেচার পর টিলা কাটার বিষয়টি তদারক করেছেন পাশের ২০ শতক জায়গার মালিক অজিত তালুকদার। হাওলদারপাড়া এলাকায় টিলা কাটার মূল হোতা তিনি। যদিও টিলা কাটা পরিবেশ আইনে নিষিদ্ধ রয়েছে। মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক এক নেতার মদদে মজুমদার টিলার সামনে টিনের গেট লাগিয়ে রাতের আঁধারে অজিত তালুকদার ও কালিবাড়ি এলাকার যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতারা মিলে টিলার মাটি বিক্রি করছেন। এ নিয়ে আশপাশের বাসিন্দাদের মধ্যে রয়েছে চরম ক্ষোভ। স্থানীয়রা আরও জানান, আগে থেকেই চুক্তি করতে হয় ভূমিখেকোদের সাথে মাটি কিনতে হলে। এ মাটি ব্যবহার করা হচ্ছে সিলেট নগর ও শহরতলির নতুন বাসা বাড়ি তৈরীতে। আভিযোগ রয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর, পুলিশ, প্রশাসন ও স্থানীয় ভূমিখেকো চক্র মিলে টিলাটি ধ্বংসে মেতে আছে দীর্ঘদিন ধরে। সরেজমিনে কয়েক মাস ধরেই দেখা যায়, সিলেট নগরের ৮ নং ওর্য়াডের কালিবাড়ি এলাকার মজুমদার টিলাটি কাটা হচ্ছে। মজুমদার টিলার উত্তর ও দক্ষিণ দিকের মাঠি কেটে ফেলা হচ্ছে। মাটি কাাটা শেষ হওয়ার পর চলে দ্রæত ঘর তৈরীর কাজ। রাতারাতি করে উঠানো হয় ঘর। সকালে রাস্তা দিয়ে চলাচলের সময় দেখা যায় টিলার মাটি রাস্তায় পড়ে আছে। বৃষ্টি হলো কাঁদা জমে যায় রাস্তায়, যার কারণে দুর্ভোগে পড়তে হয় চলাচলকারি মানুষ ও যানবাহনের। ধর্মীয় প্রতিষ্টানের সামনেও জমে থাকে কাঁদামাটি ও পানি। টিলার মাটি ট্রাক দিয়ে পরিবহন করার সময় রাস্তায় পড়ে যায়। বেশি বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয় রাস্তায়। দীর্ঘদিন ধরেই এই সমস্যায় রয়েছেন ৮ নং ওর্য়াডের কালীবাড়ি, হাওলদারপাড়র বাসিন্দারা। সন্ধ্যা নামার সাথে সাথেই মাটি পরিবহন ট্রাকের আনাগোনা বেড়ে যায় কালিবাড়ির রাস্তায়। এই ট্রাক গুলোর অনেকটি আবার নাম্বার প্লেইটবিহীন। সিলেট নগরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি টিলা কাটা হচ্ছে নগরীর আখালিয়া এলাকায়। এছাড়াও হাওলাদারপাড়ার সুশান্ত মার্কেটের পেছনের প্রায় ১০ একরের ওই টিলা, পাশের আরেকটি টিলাসহ একই এলাকার ভূতু টিলাও কাটা হচ্ছে।
এ বিষয়ে সিলেট বিভাগীয় পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক মোহাম্মদ এমরান হোসেন বলেন, আমরা কয়েক দিন আগেও রাতের বেলায় আভিযান করেছি। আমাদের আভিযান অব্যাহত রয়েছে। জালালাবাদ থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) মো. শাহিন মিয়া জানান, আমি এখানে আসছি মাত্র কয়েক দিন হয়েছে। ওসি স্যার ছুটিতে রয়েছেন। টিলা কাটার বিষয়ে আমি এখনও কিছু জানতে পারি নি। তবে এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে দেখছি। এ বিষয়ে অজিত তালুকদারের ০১৭১৬-৭৯৬২২৯ নাম্বারে একাধিক বার ফোন করা হলে তিনি রিসিভ করেন নি।