প্রতিনিধি ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২ , ৬:১০:২৬ প্রিন্ট সংস্করণ
আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে আমরা যা করি: যেমন পানাহার, চলাফেরা, ঘুম ইত্যাদি, এগুলো যদি আমরা নবীজীর সুন্নত অনুযায়ী করি, সকল কাজের শুরু-শেষের মাসনূন
দুআগুলো পড়ি তাহলে এ কাজগুলো নেকী অর্জনের মাধ্যম হয়ে যাবে। এর মাধ্যমে আমরা অগনিত নেকী লাভ করতে পারবো এবং আমলের খাতা সমৃদ্ধ করতে পারবো।
নিয়ত ও সুন্নাহ সম্মত কর্মপন্থা গ্রহনের দ্বারা দৈনন্দিন জীবনের এসব আদত- অভ্যাস ও কর্মই হয়ে যায় নেকি অর্জনের মাধ্যম। তাই মুমিন যখন খাওয়া ও ঘুমের মত অভ্যাসগত কাজগুলোও আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য নবীজির সুন্নত অনুযায়ী করে এর দ্বারা মুমিন অজস্র নেকী লাভ করে। দৈনন্দিন কাজের শুরু ও শেষের মাসনুন দুআ গুলো মুসলিম উম্মাহর এক মহাসম্মদ। উম্মাহর প্রতি রাসূল (সাঃ) এর মহামূল্যবান তোহফা। এগুলোর অর্থ ও মর্ম এবং ভাব ও আবেদন অনেক গভীর। এগুলোর শব্দে শব্দে ফুটে উঠেছে রাব্বে কারীমের সামনে বিনীত বান্দার হৃদয়ের আকুতি। বান্দা কীভাবে তার মালিককে সম্বোধন করবে , কীভাবে তার সামনে নিজেকে পেশ করবে, কীভাবে রাব্বে কারীমের হামদ-শোকর ও প্রশংসা কৃতজ্ঞতা আদায় করবে তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত এ সকল দুআ। এতে যেমন আছে শুকরিয়া ও কৃতজ্ঞতার শ্রেষ্ঠ প্রকাশ তেমনি জীবনের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য বোঝার শ্রেষ্ঠ নির্দেশনা।
এগুলো বান্দাকে ভাবতে শেখায়, জীবনের ব্যাপারে সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি লালন করতে সহায়তা করে। সব কাজে মুমিনের ভাবনা কেমন হবে মুমিনের জীবনের লক্ষ-উদ্দেশ্য, চাওয়া পাওয়া কেমন হওয়া উচিত তা অত্যন্ত সুন্দরভাবে উল্লেখিত হয়েছে দৈনন্দিন জীবনে পঠিত বিভিন্ন দু’আয়। যদি প্রতিটি কাজের আগে পরের দু’আগুলো গুরুত্বের সাথে পড়া হয় এবং এর অর্থ ও মর্ম নিজের মাঝে ধারনের চেষ্টা করা হয়, তাহলে তা হবে আল্লাহর সাথে বান্দার গভীর ভালোবাসা ও মজবুত সম্পর্কের সেতুবন্ধন। এ দুআগুলোর শব্দে শব্দে বান্দার আবদিয়াত ও দাসত্ব তুচ্ছতা ও অসহায়ত্ব এবং তার হৃদয়ের ব্যাকুলতার প্রকাশ ঘটে। এসব দুয়ার মাধ্যমে মহান সত্তার সামনে নিজের দুর্বলতা ও অযোগ্যতার এবং তার বড়ত্ব ও মহত্বের গভীর প্রকাশ ঘটে। এ কারণেই এগুলো মুমিন বান্দার অন্তরে সৃষ্টি করে শোকরগোযার ও বিনয়াবনত হওয়ার অনুপম শিক্ষা। আর বান্দা যখন এ অনূভুতি
নিয়ে মহান মালিকের দরাবারে দু’য়া নিবেদন করতে পারে তখন তার দেহ-মন তথা গোটা সত্তা লাভ করে অনাবিল আনন্দ ও জান্নাতি প্রশান্তি। তাইতো রাসূল (সাঃ) সব কাজেই দু’য়া শিক্ষা দিয়েছেন। এ সকল দু’য়ার একটি হলো ঘুম থেকে উঠে আমরা
যে দু’য়া পড়ি-
الحمدُ لله الذي أحيَانَا بَعْدَ مَا أماتَنَا وإليه
النُّشُوْر
অর্থঃ প্রশংসা সব আল্লাহর , যিনি আমাদেরকে (ঘুম নামক) মৃত্যু দেয়ার পর
আবার জীবিত করেছেন, আর তার কাছেই আমাদের পুনরুত্থান হবে। (ফিরে যেতে
হবে) সহীহ বুখারি
ঘুমালে মানুষ জীবন ও জগত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। জাগ্রত হওয়ার পর শরিরে কিছুটা জড়তা থাকে। ঘুম ঘুম ভাব থাকে। আড়মোড় দিয়ে ধীরে ধীরে সজাগ হয় একজন মানুষ। আবার জীবনের স্বাভাবিক কাজ কর্মে যুক্ত হয়। ঘুমানোর কারনে যা থেকে সে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল। এ যেন জীবনের নতুন সূচনা। এ সময় বান্দা যেন তার মালিককে না ভোলে। দীর্ঘক্ষণ ঘুমের গাফলতা যেন তাকে গাফেল না করে দেয় এবং আল্লাহ যে তাকে আবার জীবন ও জগতের সাথে যুক্ত হওয়ার তাওফিক দিলেন এর কৃতজ্ঞতা যেন বান্দা আদায় করে এ উদ্দেশ্যেই রাসূলে কারীম (সাঃ) দু’আ শিখিয়েছেন-
الحمدُ لله الذي أحيَانَا بَعْدَ مَا أماتَنَا وإليه
النُّشُوْر
এই শব্দগুলোর উচ্চারন এবং একটু ভাবনা আমাকে নিয়ে যেতে পারে মালিকের খুব সন্নিকটে, যার নৈকট্য লাভ মুমিন জীবনের সাধনা-কামনা। পাশাপাশি এ দু’আ সুন্দরভাবে দিনটি শুরু করে নতুনভাবে সুন্দর একটি জীবন গড়ে তোলার প্রতি উদ্যমী করে তোলে। সাথে সাথে বান্দা যেন আখেরাত না ভুলে এবং এ মৃত্যু থেকে জীবন লাভের সময় আসল মৃত্যু পরবর্তী জীবনকে ভুলে না যায়- এ দু’আ ও তার শব্দ-মর্ম আমাদের সামনে এ শিক্ষাকেও খুব স্পষ্টভাবে মেলে ধরে। আমরা জানি, ঘুম হলো মৃত্যুর মত। এজন্যই বলে “ঘুম মৃত্যুর ভাই“। এই ঘুম থেকে আমাকে জাগ্রত করেছেন এবং নতুন একটি জীবন দান করেছেন। আর প্রতিটি দিনই তো জীবনের নতুন সূচনা।
পৃথিবীতে একটি জীবন যেমন একবারই আসে তেমনি জীবনের একটি দিনও একবারই আসে। একবার চলে গেলে কখনো তা আর ফিরে আসেনা। প্রতিটি নতুন দিন যেন নতুন নতুন এক একটি জীবন। আল্লাহ যেন বান্দাকে বলছেন- হে বান্দা! ঘুম থেকে উঠে তুমি আমাকে স্মরণ করো। একটু ভাব দিন শেষে ক্লান্তি ভরা শরীর নিয়ে তুমি ঘুমিয়েছিলে। তখন তোমার শরীর জুড়ে নেমে এসেছিল প্রশান্তির ঘুম। তারপর সকালে ঘুম থেকে উঠেছো সকল ক্লান্তিমুক্ত শরীরে। আর পেয়েছো নতুন একটি নিয়ামত, একটি নতুন দিন। আরো অনেক কাজের সুযোগ, অনেক নেকী
কামাইয়ের সুযোগ, জীবনটাকে আরো একটু এগিয়ে নেয়ার সুযোগ। তাই তুমি শোকর কর। তোমার মত কতজন ঘুমিয়ে ছিল কিন্তু তার জীবনে আর আসেনি এমন একটি দিন। এ রাতের ঘুমই ছিল তার শেষ ঘুম। জীবন থেকে অর্জন করার সুযোগ তার শেষ হয়ে গেছে। কিন্তু নেক আমলের পরিমান আরো একটু বৃদ্ধি করার সুযোগ তুমি
পেয়েছো। এ মহা সুযোগ যেন তোমার গাফলতের ঘোরে নষ্ট না হয়ে যায়। তাই তুমি অন্তরের গভীর থেকে শোকর কর। দেহ-মন উজাড় করে তার প্রতি কৃতজ্ঞতা
নিবেদন কর। বলো- হে আল্লাহ সকল প্রশংসা কেবল তোমার। আমাকে তুমি নতুন একটি দিন দিয়েছো। তোমার প্রতি আমি অক্ষম বান্দার হাজার শোকর। একদিন আমি তোমার সামনে উপস্থিত হবো। তোমার দেয়া এ দিনটি যেন আমি অর্জন করতে পারি এবং সেদিনের জন্য কিছু পাথেয়, আর তোমার রহমত ও করুনা দিয়ে ভরে দিও আমার এ জীবন। অধম বান্দার এই শুধু প্রার্থনা । প্রত্যেক মুমিনের চিন্তা অনুভব ও অনূভুতি এমনই হোক। আর এ ক্ষেত্রে ঘুম থেকে ওঠার পরের দুআ এবং প্রাত্যহিক কাজের দুআগুলো হতে পারে সর্বোত্তম সহায়ক।
মুফতি খালিদ সাইফুল্লাহ
01916-980308
-খতিবঃ মেরাদিয়া কবরস্থান মাদরাসা মসজিদ, খিলগাঁও ঢাকা।