প্রতিনিধি ১১ অক্টোবর ২০২১ , ৭:১৭:১২ প্রিন্ট সংস্করণ
স্টাফ রিপোর্টার:
চট্টগ্রাম নগরীর বাকলিয়া থানাধীন চর চাকতাই সিটি কর্পোরেশন উচ্চ বিদ্যালয় এবং চর চাকতাই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাদক সেবনের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। দুই স্কুলের শিক্ষক মন্ডলী স্থানীয় কাউন্সিলর, থানা এবং মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরে অভিযোগ করেও কোন প্রতিকার পায়নি বলে জানা গেছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, নগরীর ১৯নং দক্ষিণ বাকলিয়া ওয়ার্ডের মিয়াখান নগর এলাকায় অবস্থিত চর চাকতাই সিটি কর্পোরেশন উচ্চ বিদ্যালয় এবং চর চাকতাই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাদে দীর্ঘদিন দিনে দুপুরে মাদক সেবন এবং জুয়ার আসর বসে আসছে। এলাকার উঠতি বয়সী তরুণ, কিশোরদেরকে দলবেঁধে স্কুলের ছাদে বসে মাদক সেবন করে আসছে স্কুল খোলা থাকা অবস্থায়ও। মাদকাসক্তরা এলাকার ছোট ছোট শিশুদেরকে দিযেও মাদক আনিয়ে অনেক সময় সেবন করছেন। দিনের বেলায় স্কুলের ছাদে বসে মাদক সেবনের দৃশ্য ক্লাস চলাকালীন সময়ে শিক্ষার্থীদেরও নজরে আসে। তাছাড়া আশে পাশের প্রত্যেক বাসা বাড়ি থেকেও এ দৃশ্য স্পষ্ট দেখা যায়। শুধু মাদক সেবন নয়, চর চাকতাই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে লকডাউন চলাকালীন সময়ে একবার চুরির ঘটনাও ঘটেছিল। পরে থানায় মৌখিকভাবে জানালে চুরি যাওয়া দুটি ফ্যান উদ্ধার করেছিল পুলিশ।
মাদকাসক্তদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে এলাকার শিশু কিশোর ও শিক্ষার্থীদের বাঁচাতে এবং শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করার লক্ষে চর চাকতাই সিটি কর্পোরেশন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক থানায় ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরে লিখিত অভিযোগ ও মৌখিক যোগাযোগের পরও কাংখিত সুফল পাননি। ১৯নং দক্ষিণ বাকলিয়া ওয়ার্ড কাউন্সিলর কার্যালয়ের সামনে দুটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাদে এভাবে মাদক ও জুয়ার আসর পুরো এলাকার পরিবেশকে বসবাস অযোগ্য করে তুলেছে। তাদের দেখা দেখি শিশু কিশোররাও বিপথগামী হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনায় অভিভাবকদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। আশে পাশের বাসিন্দারা গাজার গন্ধে বাসায় থাকাও দুষ্কর বলে জানিয়েছেন।
মাদক ও জুয়ার আখড়ায় অতিষ্ঠ স্কুলের চর চাকতাই সিটি কর্পোরেশন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মানিক চন্দ্র বৈদ্য বলেন, এখানে পড়ালেখার পরিবেশ বজায় রাখা কঠিন।রাতেতো বসেই দিনেও চলে জমজমাট মাদক ও জুয়ার আসর। শিক্ষার্থীদের পড়ালেখায় মনোযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার পাশাপাশি মাদকের প্রতিও কৌতুহল তৈরী করলে চরম মূল্য দিতে হবে আমাদেরকে।
মানিক চন্দ্র বৈদ্য আরও বলেন, স্থানীয় কাউন্সিলর, থানা, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েও কোন প্রতিকার মিলছেনা। মাঝে মধ্যে নামকাওয়াস্তে অভিযান চালালেও চিরতরে মাদক বা জুয়ার আসর বন্ধে কোন পদক্ষেপ নেয়নি।
চর চাকতাই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সোমা দত্ত বলেন, আমার স্কুলের ছাদেও চলে মাদক আর জুয়ার আসর। লকডাউনে আমার স্কুলে একবার চুরির ঘটনাও ঘটেছিল। পরে পুলিশে অভিযোগ দিলে চুরি যাওয়া দুটি ফ্যান উদ্ধার হয়।সে সময় আমার স্কুলের কক্ষে রাত্রি যাপনের কাঁথা-বালিশও পাওয়া যায়, যা প্রশাসন ফেলে দিয়েছে।
অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে ১৯নং দক্ষিণ বাকলিয়া ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. নুরুল আলম বলেন, যে ছবি এবং ভিডিও দেখাচ্ছেন সেগুলো আগের ভিডিও। আমি কাউন্সিলর হওয়ার পর থেকে এ ধরণের আসর বসার সুযোগ নেই।
তিন চারদিন আগের তোলা ছবি দেখিয়ে জানতে চাইলে বলেন, এগুলো আমার প্রতিপক্ষ আমাকে ঘায়েল করার জন্য সাজাচ্ছেন। আমি নিজেও মাদক ও জুয়ার আসর উঠানোর জন্য পুলিশকে দিয়ে অভিযান চালিয়েছি।
কাউন্সিলর নুরুল আলম বলেন, পুলিশ চাইলে এটা যেকোন মুহুর্তে বন্ধ করতে পারে। পুলিশ কি বন্ধ করতে চাচ্ছেন না বলে জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাকলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. রাশেদুল হক বলেন, মাদক, জুয়া কিশোর গ্যাংয়ের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করা হচ্ছে। যতবড় গটফাদারই হোক না কেন সমূলে মাদক উৎপাটনে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ওসি আরও বলেন, আমি এ থানায় যোগদান করেছি মাত্র দু’মাস হলো। এর মধ্যে মাদক, সন্ত্রাস, কিশোর গ্যাং এবং জুয়া নির্মূলে ধারাবাহিক অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
স্কুলের ছাদে মাদক ও জুয়ার আসর সম্পর্কে আগে কেউ জানায়নি, এখন যেহেতু জানতে পেরেছি দোষীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি জানান।
স্কুলের ছাদে মাদক ও জুয়ার আসর সম্পর্কে জানতে চাইলে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক মো. মজিবুর রহমান পাটওয়ারী বলেন, এভাবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাদে মাদক ও জুয়ার আসর শিক্ষা ও এলাকার জন্য অশনিসংকেত। এটা চলতে দেয়া যায় না। আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা অবশ্যই নেব।
তিনি বলেন, আগে অভিযোগের বিষয়টি আমার জানা নেই। এখন যেহেতু জানলাম অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এদিকে এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, যারা মাদক সেবন করেন তারা অপরিচিত কেউ নন। এলাকার কিশোর গ্যাং সদস্য, চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসীরাই এ কাজে জড়িত। এলাকাবাসীর দাবি প্রশাসন চাইলে যেকোন মুহুর্তেই এ মাদক আর জুয়ার আসর নির্মূল করতে পারে। তাদের সদিচ্ছা ও আন্তরিকতার অভাব বলেও তাদের অভিমত।