সিলেট

ছাত্রাবাসে গণধর্ষণ মামলায় ৫ দিনের রিমান্ডে মাহফুজুর, তারেক ধর্ষণের ঘটনার সাথে আমি জড়িত নই: মাহফুজুর

  প্রতিনিধি ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২০ , ৬:৫৪:০৩ প্রিন্ট সংস্করণ

বাপ্পা মৈত্র, সিলেট : সিলেটের ঐতিহ্যবাহী মুরারিচাঁদ (এমসি) কলেজের ছাত্রাবাসে স্বামীকে আটকে রেখে গৃহবধূকে দল বেঁধে গণধর্ষণের ঘটনায় করা মামলার এজাহারভূক্ত আরও দুই আসামি মাহফুজুর রহমান, তারেকুল ইসলাম তারেক’র ৫ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। বুধবার সিলেট চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মো. আবুল কাশেম এই রিমান্ড মঞ্জুর করেন। কড়া নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্য দিয়ে আদালত চত্বরে হাজির করে সিলেট মহানগর পুলিশের শাহপরাণ (র.) থানা পুলিশ। পরে আদালতে তুলে এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে গৃহবধূকে ধর্ষণের মামলায় সাতদিনের রিমান্ড আবেদন করা হয় পুলিশের পক্ষ থেকে। পরে শুনানি শেষে আদালত সকলের পাঁচদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন। মহানগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (প্রসিকিউশন) অমূল্য কুমার চৌধুরীও ধর্ষণ মামলার আসামি মাহফুজের পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুরের তথ্য জানিয়েছেন। মামলার অন্য আসামিদের মতো মাহফুজুরের পক্ষেও রিমান্ড শুনানিতে কোনো আইনজীবী অংশ নেননি। শুনানিকালে রাষ্ট্রপক্ষের সহয়তাকারি আইনজীবী দেবব্রত চৌধুরী লিটন জানান, নিজেকে নির্দোষ দাবি করে মাহফুজ আদালতকে বলেছেন- ‘ফোনে খবর পেয়ে পেয়ে মোটর সাইকেল নিয়ে আমি ছাত্রাবাসে গিয়েছিলাম। তবে ধর্ষণের ঘটনার সাথে আমি জড়িত নই। লিটন বলেন, মাহফুজ নিজের পক্ষে সাফাই গাওয়া শুরু করলে আদালত তাকে থামিয়ে দেন। এর আগে গতকাল একই মামলায় আরও তিন আসামি সাইফুর, অর্জুন ও রবিউলকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ। এ ঘটনায় এজাহারভূক্ত ৬জনসহ এ পর্যন্ত ৮জনকে গ্রেফতার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সর্বশেষ মঙ্গলবার (২৯ সেপ্টেম্বর) মঙ্গলবার রাতে এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে ধর্ষণ মামলার আসামি গৃহবধূকে ধর্ষণ মামলার এজাহারভুক্ত ২ নং আসামি তারেকুল ইসলামকে সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলা থেকে গ্রেফতার করে র‌্যাব-৯। এর আগে জৈন্তাপুর উপজেলার হরিপুর থেকে এই মামলার আসামি মাহফুজুর রহমানকে গ্রেফতার করে কানাইঘাট থানা পুলিশ। এরআগে রোববার সকালে ছাতক থেকে মামলার প্রধান আসামি সাইফুর রহমান ও মাধবুপর থেকে অর্জুন লস্করকে গ্রেফতার করা হয়। রোববার রাতে হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ থেকে রবিউল ইসলামকে গ্রেফতার করে গোয়েন্দা পুলিশ। একই রাতে হবিগঞ্জ সদর থেকে মামলার এজাহারভূক্ত আসামি শাহ মাহবুবুর রহমান রনিকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। ওই রাতেই সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ থেকে এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে মো. আইনুদ্দিন ও মো. রাজনকে গ্রেফতার করে র‌্যাব-৯। এজাহারে নাম না থাকলেও এই ঘটনার পর থেকে আইনুদ্দিন ও রাজনের নাম উচ্চারিত হচ্ছে। গ্রেফতারের হওয়া অন্য আসামিরাও এ ঘটনায় আইনুদ্দিন ও রাজন জড়িত বলে জানিয়েছে। গ্রেফতার হওয়া সকলেই ছাত্রলীগের নেতাকর্মী বলে জানা গেছে। গত ২৫ সেপ্টেম্বরের ওই লোমহর্ষক ঘটনার পর ক্ষোভ, নিন্দা আর প্রতিবাদে সরব হয়ে উঠেছে সিলেটসহ সারা দেশের বিভিন্ন সংগঠন। দ্রæত ধর্ষকদের ফাঁসির দাবি সবার। বন্ধ ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ কর্মীদের থাকতে দেওয়ায় কলেজ কর্তৃপক্ষের দায়িত্বহীনতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বলছেন, ১২৮ বছরের পুরোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটিতে এমন ন্যক্কারজনক ঘটনায় এক কলঙ্কজনক ইতিহাস সৃষ্টি হলো। উল্লেখ্য, গত ২৫ সেপ্টেম্বর (শুক্রবার) বিকেলে স্বামীর সঙ্গে এমসি কলেজে প্রাইভেট কার নিয়ে বেড়াতে গিয়ে ছিলেন নববধূ। সন্ধ্যায় তাদের কলেজ থেকে ছাত্রাবাসে ধরে নিয়ে যায় ছাত্রলীগের ৬-৭ জন নেতাকর্মী। এরপর দুইজনকে মারধর করা হয়। একই সঙ্গে স্বামীকে আটকে রেখে তার সামনে স্ত্রীকে দলবদ্ধভাবে ধর্ষণ করে তারা। খবর পেয়ে রাতে ছাত্রাবাস থেকে ওই দম্পতিকে উদ্ধার করে পুলিশ। ধর্ষণের শিকার হওয়া নারীকে সিলেটের ওসমানী হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) ভর্তি করা হয়। এ ঘটনায় পরের দিন ২৬ সেপ্টেম্বর (শনিবার) সকালে ধর্ষণের শিকার নারীর স্বামী বাদি হয়ে এসএমপির শাহপরান থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলা ছাত্রলীগের ৬ নেতাকর্মীসহ অজ্ঞাত আরও ৩ জনকে আসামি করা হয়। এ ঘটনায় তরুণীর স্বামীর দায়ের করা মামলায় আসামিরা হলেন-সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার উমেদনগরের রফিকুল ইসলামের ছেলে তারেকুল ইসলাম তারেক (২৮), হবিগঞ্জ সদরের বাগুনীপাড়ার মো. জাহাঙ্গীর মিয়ার ছেলে শাহ মো. মাহবুবুর রহমান রনি (২৫), জকিগঞ্জের আটগ্রামের কানু লস্করের ছেলে অর্জুন লস্কর (২৫), দিরাই উপজেলার বড়নগদীপুর (জগদল) গ্রামের রবিউল ইসলাম (২৫) ও কানাইঘাটের গাছবাড়ি গ্রামের মাহফুজুর রহমান মাসুমকে (২৫)।

আরও খবর

Sponsered content