প্রতিনিধি ২৬ মে ২০২০ , ৮:৩৭:৪৬ প্রিন্ট সংস্করণ
বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে গত ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। কয়েক দফায় ছুটি বাড়িয়ে তা আগামী ৩০ মে পর্যন্ত করা হয়েছে। সূত্র বলছে, করোনার প্রকোপ কমলে পরিস্থিতি বিবেচনায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার চিন্তা-ভাবনা করবে সরকার। সেক্ষেত্রে স্বাস্থ্য অধিদফতরের নির্দেশনা মেনে প্রতিষ্ঠান চালাতে বলা হবে। যদিও এই চিন্তা-ভাবনা এখনও প্রাথমিক পর্যায়েই রয়েছে।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, করোনা পরিস্থিতি ভালোর দিকে গেলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হবে। তবে এক্ষেত্রে পূর্বের ন্যায় ক্লাস পরিচালনা করা যাবে না। ক্লাসে নির্দিষ্ট সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। টিফিনে শিক্ষার্থীদের জটলা করে আড্ডাও দেয়া যাবে না। ক্লাসে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে শিফট রেশনিংয়ের পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
তবে দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং শিক্ষার্থীর সংখ্যা বিবেচনায় এটি অনেকটাই কঠিন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। কেননা অধিকাংশ বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের গাদাগাদি করে বসে ক্লাস করতে হয়। এক বেঞ্চে চার থেকে পাঁচজন করে বসতে হয়। ফলে সামাজিক দূরত্ব প্রতিষ্ঠা করা কষ্টসাধ্য হবে বলে অভিমত তাদের।
এ বিষয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের পরিচালক (কলেজ ও প্রশাসন) অধ্যাপক মো. শাহেদুল খবির চৌধুরী বলেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ কমে গেলে যদি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হয়, তবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চলবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিলে যে জটলা সৃষ্টি হবে তা কীভাবে সমন্বয় করা হবে তা নিয়ে ভাবা হচ্ছে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা সুস্থ আছেন কিনা- তা যাচাই করতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কারোনা রোগ নিয়ন্ত্রণের পূর্ণ ব্যবস্থা নিতে হবে।
তিনি আরো বলেন, পরিস্থিতি ভালোর দিকে গেলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার বিষয়টি ভাবতে হবে। সে ক্ষেত্রে শিফটিং ও রেশনিং করে ক্লাস নেওয়ার ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রতিষ্ঠান খুলে দিলে অনলাইনে ক্লাস চলবে, ভার্চ্যুয়াল ক্লাসও চলবে। কিছু প্রতিষ্ঠান হয়তো অনলাইনে ভালো করেছে, কিন্তু আমাদের টার্গেট দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলসহ সব শিক্ষার্থী। তাই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যদি খুলে দেওয়া হয়, সেক্ষেত্রে সামাজিক ও শারীরিক দূরত্ব মেনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালানোর জন্য যা করা দরকার তা আমাদের করতে হবে।
মাউশি সূত্রে জানা গেছে, বন্ধের মধ্যে শিক্ষার্থীদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সংসদ টিভির মাধ্যমে ক্লাস পরিচালনা করা হচ্ছে। তবে দুর্গম এলাকার শিক্ষার্থীরা এই সুবিধা গ্রহণ করতে পারছেন না। সেজন্য কমিউনিটি রেডিওর মাধ্যমে এইসব এলাকায় পাঠদান দেয়ারও চিন্তাভাবনা করছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর।
উল্লেখ্য, করোনা পরিস্থিতির মধ্যে কীভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনা করতে হবে; সেটি জানিয়ে গত ২ মে একটি গাইডলাইন প্রকাশ করে স্বাস্থ্য অধিদফতর। স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে দেয়া নির্দেশনাগুলো নিচে দেয়া হলো-
১. শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার আগে মহামারি প্রতিরোধক মাস্ক, জীবাণুনাশক এবং নন-কন্ট্যাক্ট থার্মোমিটার সংগ্রহ করতে হবে।
২. শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রবেশপথে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও বহিরাগত শিক্ষাদান কর্মীদের শরীরের তাপমাত্রা নিতে হবে।
৩. যাদের শরীরের তাপমাত্রা বেশি পাওয়া যাবে তাদের প্রবেশ নিষেধ করতে হবে।
৪. শ্রেণিকক্ষসহ মেঝে ও ঘরের দরজার হাতল, সিঁড়ির হাতলসহ বিভিন্ন বস্তুর তলপৃষ্ঠ ঘন ঘন পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত করতে হবে।
৫. শিক্ষাদান কর্মকর্তা ও শিক্ষার্থীদের মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। হাত ধোয়াসহ অন্যসব স্বাস্থ্যবিধি শক্তিশালী করতে হবে।
৬. দ্রুত হাত শুকানো জীবাণুনাশক বা জীবাণুনাশক টিস্যু ব্যবহার করুন।
৭. হাঁচি দেওয়ার সময় মুখ ও নাক ঢাকতে টিস্যু বা কনুই ব্যবহার করতে হবে।