প্রতিনিধি ১০ নভেম্বর ২০২০ , ৫:০৬:৩৩ প্রিন্ট সংস্করণ
জামালপুর সদর প্রতিনিধি:
বিনামূল্যে সরকারি ঘর দেওয়ার নামে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে জামালপুর সদরের কেন্দুয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ মাহবুবুর রহমান মঞ্জুুর বিরুদ্ধে। সরকারি ঘর পাবার আশায় অনেকে হালের বলদ ও দাদন ব্যবসায়ীর কাছে টাকা নিয়ে চেয়ারম্যানকে দিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন।
সরকারের ঘর দেওয়ার নামে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার কাজে সহযোগিতা করছেন তার সহযোগী রোকন মিয়া।
জানা গেছে, ‘জমি আছে ঘর নেই’ এই আশ্রয়ণ প্রকল্প-২-এর আওতায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অর্থায়নে তৃণমূল পর্যায়ের জমি আছে ঘর নির্মাণ করতে পারছে না, এমন অতি দরিদ্র পরিবারের জন্য বিনামূল্যে সরকার ঘর তৈরি করে দিচ্ছে। আর এই প্রকল্পের আওতায় সদর উপজেলার ১৫ টি ইউনিয়নে ঘর নির্মাণের কাজ চলছে। কেন্দুয়া ইউনিয়নে ৩টি ঘর বরাদ্ধ হয়েছে। সরকার বিনামূল্যে ঘর প্রদান করছে এ খবর ছড়িয়ে ইউপি চেয়ারম্যান শেখ মাহবুবুর রহমান মঞ্জু তার সহযোগী রোকনের মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছেন দরিদ্র মানুষের কাছ থেকে।
অভিযোগ উঠেছে, কেন্দুয়া ইউপি চেয়ারম্যান শেখ মাহবুবুর রহমান মঞ্জু তার সহযোগী সোনাকাতা গ্রামের মৃত উসমান মিয়ার ছেলে মোঃ রোকন মিয়ার মাধ্যমে একই গ্রামের হতদরিদ্র কৃষক মোঃ খলিলুর রহমান (৫৮) কে ঘর দেওয়ার নামে বছর খানেক আগে ৮০ হাজার টাকা নেন।
সোনাগাতা গ্রামের হতদরিদ্র কৃষক মোঃ খলিলুর রহমান অভিযোগ করেন, কেন্দুয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মঞ্জু তাকে ঘর দেওয়ার কথা বলে রোকনের মাধ্যমে ৮০ হাজার টাকা নেন। ১ বছর ২ মাস শুধু ঘুরিয়েছে। ১৪ মাস পর ৪ হাজার ইট ও এক ট্র্যাক বালি দিয়েছে। যা দিয়ে তাকে ৮ ফুট লম্বা একটা ঘর করে দিতে চান।
এই ঘর কবরের চেয়ে একটু বড়। সরকারি ঘর এতো ছোট হবে কেন তা এলাকার সবাইকে নিয়ে চেয়ারম্যান শেখ মাহবুবুর রহমান মঞ্জুকে জানানো হয়। এ নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হলে চেয়ারম্যান নিজে ওই বাড়িতে যান। অবশেষে ইউপি চেয়ারম্যান প্রথমে ৫০ হাজার টাকা ও পরে ১০ হাজার টাকা ফেরত দেন কৃষক খলিলুর রহমানকে। ২০ হাজার টাকা পরে দিবেন না বলে জানান। ফেরত চান ইট-বালি। এ ঘটনার পর চেয়ারম্যানের সহযোগী রোকন হতদরিদ্র কৃষক খলিল ও তার পরিবারের লোকজনকে হুমকি দিচ্ছে দেখে নেবার।
কৃষক খলিল জানান, তার একমাত্র সম্বল হালের গরু। গরু বিক্রী করে ঘরের আশায় চেয়ারম্যানকে টাকা দিয়েছিলেন। ঘর না পাওয়ায় তার অনেক ক্ষতি হয়েছে। তিনি অভিযোগ করেন, ঘর দেবার কথা বলে অনেকের কাছ থেকেই টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন চেয়ারম্যান ও তার সহযোগীরা। অনেকে দাদন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু ভয়ে মুখ খুলতে পারছেন না তারা।
এ ব্যাপারে কেন্দুয়া ইউপি চেয়ারম্যান শেখ মাহবুবুর রহমান মঞ্জু বলেন, ঘর দেওয়ার নামে টাকা পয়সার বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না। নতুন একটি প্রকল্পে কৃষক খলিলুর রহমানের নাম দেওয়া আছে। তবে কোন প্রকল্পে তার নাম দেওয়া আছে তা বলতে পারেন নি। সে বড় ঘর চান। তাই করে দিতে পারিনি। সে এখন নিজেই একটি ঘর তৈরি করছেন। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করবেন এবং ইউপি চেয়ারম্যানের সাথে কথা বলবের বলে জানিয়েছেন সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আরিফুর রহমান।
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, সরকারি ঘর দিতে টাকা নেওয়ার কোন সুযোগ নেই। উপজেলা প্রশাসনের সাথে সরাসরি যোগাযোগ করলে নিয়ম অনুযায়ী ঘর পাবেন। তবে এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন তিনি।