প্রতিনিধি ২৮ জানুয়ারি ২০২৩ , ৫:২৮:৪০ প্রিন্ট সংস্করণ
আবু তাহের, চট্টগ্রাম ব্যুরো :
শহরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে এখনও যেখানে কম্পিউটার ল্যাব কিংবা তথ্য প্রযুক্তি শিক্ষা উপকরণের অপ্রতুলতা রয়েছে সেখানে গ্রামীণ জনপদের প্রতিষ্ঠানগুলোর অবস্থা আরও করুণ। সরকার তথ্য প্রযুক্তি শিক্ষাকে অগ্রাধিকার দিয়ে নানামুখী প্রকল্প বাস্তবায়ন করলেও এখনও রয়েছে অনেক সীমাবদ্ধতা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারী, প্রাইভেট ও ব্যক্তি উদ্যোগে তথ্য প্রযুক্তি শিক্ষালয় গড়ে উঠলেও ব্যয়বহুল হওয়ায় তা সাধারণের নাগালের বাইরে রয়ে গেছে। দেশে অলাভজনক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের তথ্য প্রযুক্তি জ্ঞান অর্জনে সহায়ক প্রতিষ্ঠান তেমন গড়ে না উঠলে নজর কেড়েছে দক্ষিণ চট্টগ্রামের লোহাগাড়ায় গড়ে ওঠা “চুনতি লাইট হাউস“। ডিজিটাল লাইব্রেরি বা নলেজ শেয়ারিং সেন্টারখাত সম্পূর্ণ অলাভজনক প্রতিষ্ঠানটি শিক্ষার্থীদের কম্পিউটারের প্রাথমিক স্বচ্ছ ধারণা, অপারেটিং সিস্টেম, যোগাযোগ এবং স্যোশাল মিডিয়া নেটওয়ার্কিংসহ নানা বিষয়ে পেশাদার শিক্ষকদের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ করে গড়ে তুলছে।
ইউনিলিভার কনজ্যুমারস কেয়ার বাংলাদেশ লিমিটেডের চেয়ারম্যান মাসুদ খান ও তার স্ত্রী বাংলাদেশের প্রথম মহিলা চাটার্ড একাউন্টেন্টস, ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের লীড ফাইন্যান্সিয়াল ম্যানেজমেন্ট স্পেশালিষ্ট সুরাইয়া জান্নাত খানের ব্যক্তিগত উদ্যোগ ও অর্থায়নে প্রতিষ্ঠিত দক্ষিণ চট্টগ্রামের প্রথম এ তথ্য প্রযুক্তি লার্নিং সেন্টারটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। চুনতি খান ফাউন্ডেশনের এ উদ্যোগে জমি দিয়ে স্থাপনা নির্মানে সহায়তা করেছে চুনতি ফাতেমা বতুল মহিলা মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ। মাদ্রাসার এ জমিতে স্থাপনা নির্মাণ, সাজসজ্জা এবং কম্পিউটারসহ প্রয়োজনীয় সামগ্রী ক্রয়ে ব্যয় হয়েছে প্রায় অর্ধ কোটি টাকা।
মরফুয়া ও জেবুন্নেসা বেগম মহিলা এতিমখানা ও ছাত্রী নিবাসের শিক্ষার্থীদের আবাসন খরচ এবং চুনতি লাইট হাউসের প্রশিক্ষকদের সম্মানি মিলিয়ে মাসে প্রায় লক্ষাধিক টাকা খরচ হয়। সম্পূর্ণ অলাভজনক এ প্রতিষ্ঠানে বর্তমান চলমান ২মাসের কোর্সের জন্য আড়াইশ টাকা করে ৫শ টাকা ফি নেয়া হচ্ছে। এ কোর্সে ইতোমধ্যে ৩০জনের একটি ব্যচ তাদের কোর্স শেষ করেছে। বর্তমানে আরও ২টি ব্যাচের কোর্স চলমান রয়েছে।
২০২২ সালের ৫ মে শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিষ্টার মুহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল “চুনতি লাইট হাউস“ এর পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি এটিকে অনন্য নজির এবং দেশে প্রথম বলে অভিহিত করেন। এ ধরণের ডিজিটাল লাইব্রেরী কিংবা নলেজ সেন্টারের কনসেপ্টের জন্য তিনি সংশ্লিষ্টদের প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।
চুনতি লাইট হাউস শিক্ষার্থীদের আগামীর যোগ্য নাগরিক এবং অপার সম্ভাবনার ফ্রি ল্যান্সিং এ দক্ষ করে তুলতে সামনের দিনে গ্রাফিকস ডিজাইনিং, ওয়েব ডিজাইনিং, কনটেন্ট রাইটিং, ডিজিটাল মার্কেটিংসহ অন্যান্য প্রোগামিং শেখানোর মতো উদ্যোগের পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। এর বাইরে চুনতির ইতিহাস, ঐতিহ্য, দেশের স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক নানা বিষয়ে মননশীল আয়োজনে শিক্ষার্থীদের জ্ঞানের ভান্ডারকে সমৃদ্ধ করার কাজ করে যাচ্ছে নলেজ সেন্টারটি। মনোরম পরিবেশে, নিজস্ব ওয়াই-ফাই কানেকশন সমৃদ্ধ এ ল্যাবে শিক্ষার্থীরা শিখছেন মনের আনন্দে।
চুনতি লাইট হাউসের ব্যতিক্রমী উদ্যোগ্যের স্বাতন্ত্র্য একটি বৈশিষ্ট্য এনে দিয়েছে “মেয়েদের এতিমখানা“। সাধারণত দেশে ছেলেদের বহু এতিমখানা পাওয়া যায় কিন্তু ছেলেদের মতো মেয়েরাও যে এতিম হয় এবং তাদের নিয়ে কাজ করার উদ্যোগের অংশ চুনতি খান ফাউন্ডেশনের মরফুয়া ও জেবুন্নেসা বেগম মহিলা এতিমখানা। এখানে থেকে মেয়েরা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি চুনতি লাইট হাউসে তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ে জ্ঞানার্জনের অপূর্ব সুযোগ পেয়েছেন। চুনতি লাইট হাউস তথ্য প্রযুক্তি শিক্ষার পাশাপাশি সমাজের প্রয়োজেন অন্যান্য মানবিক ও সামাজিক কাজগুলো করছেন। তার মধ্যে রয়েছে বিনামূল্যে চক্ষু চিকিৎসা, শীতবস্ত্র বিতরণ, শিক্ষার্থীদের জন্য বিতর্ক ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতাসহ নানা সামাজিক উদ্যোগ।
সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়াই মাসে লক্ষাধিক টাকা ব্যয় করে ব্যক্তি উদ্যোগে এরকম একটি প্রতিষ্ঠান চালানো দুরূহ হলেও কাজটিতে হাত দিয়ে সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন চুনতির দুই গুণীজন মাসুদ খান ও তার স্ত্রী সুরাইয়া জান্নাত খান । চুনতি খান ফাউন্ডেশনের ব্যানারে পরিচালিত এ লাইট হাউস যেনো প্রজন্মকে আলোকিত করার দৃপ্ত মশাল হাতে এগিয়ে যাচ্ছেন। তথ্য প্রযুক্তি নির্ভর কর্মঠ প্রজন্ম গড়তে প্রান্তিক জনপদে ব্যতিক্রমী এ প্রকল্প সত্যিই প্রশংসার দাবি রাখে।
জানতে চাইলে খান ফাউন্ডেশনের সেক্রেটারী রবিউল হাসান আশিক বলেন, এটি শুধু চট্টগ্রাম নয় বাংলাদেশের জন্য অনন্য উদাহরণ। সরকারি পর্যায়ে বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে তথ্য প্রযুক্তির উপকরণ দিলেও ব্যক্তি উদ্যোগে অলাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে চুনতি লাইট হাউসই দেশের প্রথম প্রতিষ্ঠান। খান ফাউন্ডেশনের নানামুখী সামাজিক কর্মকান্ডের এটি অন্যতম একটি প্রজেক্ট। চিকিৎসা সেবা, নারী উন্নয়নসহ আরও অনেক বিষয় নিয়ে আমাদের প্রকল্প চলমান রয়েছে।