চট্টগ্রাম

ঝড়ের কবলে সাগরে প্রাণ হারালেন বাঁশখালীর মাঝি-নায়া

  প্রতিনিধি ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪ , ৬:২১:৫৭ প্রিন্ট সংস্করণ

ঝড়ের কবলে সাগরে প্রাণ হারালেন বাঁশখালীর মাঝি-নায়া

বাঁশখালীর উপকূলীয় অঞ্চল শেখেলখীল ইউনিয়ন। এখানকার অধিকাংশ লোকজনের জীবন ও জীবিকার একমাত্র ভরসা বঙ্গোপসাগর। বঙ্গোপসাগরের সাথে এখানকার লোকদের আর্থিক সম্পর্ক। সাগরে মৎস্য আহরণ করতে গিয়ে ঝড়-বৃষ্টির সাথে কখনো ঝড়-বৃষ্টি উপেক্ষা করে পাড়ি দেন তারা।

কখনো জলদস্যুদের কবলে, কখনো প্রাকৃতিক সৃষ্ট দুর্যোগের কারণে দুর্ঘটনায় পড়তে হয় তাদের। জীবনের তাগিদে তাদের জীবনসংগ্রাম আর থেমে থাকে না। মাছ ধরবে, বোটভর্তি মাছ নিয়ে ফিরবে এমন আশায় বুক বেঁধে গত বুধবার গভীর রাতে ১৭ মাঝি-মাল্লাসহ শেখেরখীল ইউপির মেম্বার আব্দুল খালেকের মালিকানাধীন আল্লাহ মালিক ফিশিং বোটটি শেখেরখীল ফাঁড়ির মুখ থেকে বঙ্গোপসাগরে রওয়ানা হলো।

ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, বোটটি কক্সবাজারের ইনানী পয়েন্টে পৌঁছালে প্রচন্ড ঝড়ের কবলে পড়ে ডুবে যায়। ১৭ জনের মধ্যে ১৪ জন কোনো রকম জীবন নিয়ে ফিরে আসেন। নিখোঁজ হন ওই বোটের মাঝি আব্দুন নুর, বোটের নায়া মোহাম্মদ হোসেন, নুরুল আমিন। এদের মধ্যে আব্দুন নুর ও নুরুল আমিনের দেশের বাড়ী বাঁশখালীর শেখেরখীল তিন নম্বর ওয়ার্ডের শেখেরখীল টেকপাড়া এলাকায়। গত শনিবার আলাদা আলাদা সময়ে জানাযা শেষে মসজিদ ভিটার পাশে জোড়া কবরে তাদের কে কবরস্থ করা হয়।

এ ঘটনায় শোকের ছায়া নেমে আসে এলাকায়। নিভে যায় দুই পরিবারের বেঁচে থাকার স্বপ্ন।আব্দুন নুর মাঝি (৩৫)। দক্ষ একজন মাঝি ছিলেন তিনি। দীর্ঘদিন ধরে সাগরে ফিশিং বোট নিয়ে মাছ ধরার অভিজ্ঞতা তার। সেদিনের ঝড়ের কবলে প্রাণ হারাতে হলো তাকেও। আব্দুন নুর শেখেরখীল টেকপাড়ার খালেদা বাপের বাড়ির আব্দুল আজিজের পুত্র। ছয় বছর আগে তার সাথে বিয়ে হয় রুবি আক্তারের সাথে। তিন সন্তানের জনক আব্দুন নুর। প্রথম কন্যা সন্তান জন্নাতুল মাওয়ার বয়স ছয় বছর, দ্বিতীয় কন্যা সন্তান জান্নাতুল নাঈমের বয়স আড়াই বছর। সর্বশেষ তার ঘরে জন্ম নেয় পুত্র সন্তান মো. মাসুমের।

মাসুমের বয়স সবেমাত্র ১০ মাস সম্পন্ন হয়েছে। ছোট বাচ্চা মাসুম জন্ম থেকেই হার্টের (হৃদরোগ) রোগী। তাকে করাতে হবে বড় চিকিৎসা। বাবা নেই। কে করাবে তার চিকিৎসা, কে ধরবে তার পরিবারের হাল। বাচ্চারা কাকে গলা জড়িয়ে বাবা বলে ডাকবে এমন আত্মচিৎকার করে কেঁদে কেঁদে বলে যাচ্ছেন আব্দুন নুরের স্ত্রী রুবি আক্তার বঙ্গোপসাগর আমার স্বপ্ন কেড়ে নিলো, কেড়ে নিলো আমার পরিবারের আলো। আমরা কি নিয়ে বাঁচবো, কাকে নিয়ে বাঁচবো রুবির এমন আত্মচিৎকারে ভারী হয়ে গেল এলাকার আকাশ-বাতাস। নুর আমিন (৪৫)। বোটের নায়া (জেলে) হিসেবে জীবনের তাগিদে সমুদ্রে পাড়ি দেন তিনি। তিনিও মাছ আহরণ করতে খালেকের একই বোটে পাড়ি দেন বঙ্গোপসাগরে।

একই বোটে নিখোঁজ হওয়া তিনজনের একজন তিনি। তিনি একই এলাকার শেখেরখীল টেক পাড়া সিরাম্মদের বাড়ীর ছৈয়দ নুরের পুত্র। তিনিও তিন সন্তানের জনক। তার বড় মেয়ে সাদিয়া শেখেরখীল ইসলামীয়া দাখিল মাদরাসায় নবম শ্রেণিতে পড়েন। দুই ছেলের মধ্যে শাকিব শেখেরখীল ইসলামীয়া দাখিল মাদরাসায় ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। ছোট সন্তান রাকিব পার্শ্ববর্তী এলাহী বক্স সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৩য় শ্রেণিতে পড়ে। তাদের পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি তাদের বাবাকে হারিয়ে তারা এখন দিশেহারা।

পরিবারের হাল ধরার মতো কেউ নেই। থেমে যেতে পারে তাদের পড়ালেখা। একটিমাত্র দুর্ঘটনায় মুহূর্তেই ভেঙ্গে পড়লো সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার স্বপ্ন।

আরও খবর

Sponsered content