প্রতিনিধি ২২ এপ্রিল ২০২০ , ৫:২৭:১৩ প্রিন্ট সংস্করণ
শেরপুর প্রতিনিধি : বৈশ্বিক করোনা ভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতিতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মত বাংলাদেশের সকল জেলা ও উপজেলায় জীবনযাত্রাসহ সবকিছু যখন স্থবির হয়ে পড়েছে। ঠিক এমন দুর্যোগ মুর্হুতে ভিক্ষুক নাজিমুদ্দিন করোনা তহবিলে তার ভিক্ষার জমানো (সঞ্চয়) কৃত ১০ হাজার টাকা জমা দিয়ে এক বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। শেরপুর জেলার ঝিনাইগাতী উপজেলার কাংশা ইউনিয়নের গান্ধীগাঁও গ্রামের মৃত ইয়ার আলীর ছেলে পঙ্গু ভিক্ষুক নাজিমুদ্দিন (৮০)।
এমন মহতী উদ্যোগের ফলশ্রুতিতে ২২ এপ্রিল বুধবার দুপুর ১২টায় জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষ রজনীগন্ধায় জেলা প্রশাসক আনার কলি মাহবুব এর সভাপতিত্বে এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসক বলেন, দুর্যোগ মুর্হুতের এ সময়ে ভিক্ষুক নাজিমুদ্দিন তার ভিক্ষা বৃত্তির সঞ্চয়কৃত ঘর নির্মাণের জন্য জমানো ১০ হাজার টাকা এবং তার ঘর নির্মাণ না করে সেই টাকা করোনা তহবিলে জমা দেয়ায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাকে এই সংবর্ধনা প্রদান ও সম্মান আজকে এক দৃষ্টান্ত মাইল ফলক হয়ে থাকবে।
এসময় জেলা প্রশাসক নাজিমুদ্দিনকে প্রথমে উত্তরীয় পরিয়ে দেন এবং ফুলের তোড়া দিয়ে সংবর্ধনা জানান। এছাড়াও জেলা প্রশাসক বলেন, ভিক্ষুক নাজিমুদ্দিনের এমন মহতী কাজটি এই সভ্যা সমাজে আলোর পথ দেখিয়েছেন। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ২১ এপ্রিল মঙ্গলবার ঝিনাইগাতী উপজেলার কাংশা ইউনিয়নের গান্ধীগাঁও গ্রামের বাসিন্দা ভিক্ষুক নাজিমুদ্দিন তার সঞ্চয়কৃত দশ হাজার টাকা করোনা তহবিলে ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) রুবেল মাহমুদের হাতে তুলে দেন।
এসময় ভিক্ষুক নাজিমুদ্দিন উপস্থিত গণমাধ্যম কর্মীদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, যুবক বয়সে দিনমজুরের কাজ করে সংসার চালাতেন। পরে পঙ্গু হয়ে যাওয়ায় ভিক্ষা বৃত্তি করে তার সংসার চলে। তার স্ত্রী আবেদা খাতুন সেও পঙ্গু এবং তার পরিবারে ৩ ছেলে ৩ মেয়ে রয়েছে। ভিক্ষা বৃত্তি করে সংসার চালিয়ে গত ২ বছরে ১০ হাজার টাকা জমিয়েছিলেন তিনি।
বর্তমান দেশের করোনা পরিস্থিতিতে অসহায় মানুষদেরকে দান করার জন্য তার জমানো সেই ১০ হাজার টাকা ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও’র) করোনা তহবিলে জমা দেন। তিনি আরো জানান, ওই টাকা তিনি জমিয়েছিলেন তার একটি মাত্র বসত ঘর নির্মাণের জন্য।
ভিক্ষুক নাজিমুদ্দিনের এই দানের খবরটি বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রচার হওয়ার পর বিষয়টি মাননীয় প্রধান মন্ত্রীর দৃষ্টিগোচর হলে তিনি ভিক্ষুক নাজিমুদ্দিনকে ধন্যবাদ ও কৃজ্ঞতা প্রকাশ করেন। সেই সাথে একটি বসত ঘর নির্মাণ করে দেয়ার জন্য আশ্বাস প্রদান করেন। এদিকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নাজিমুদ্দিনকে জীবিকা নির্বাহর জন্য একটি দোকান, তার চিকিৎসা, সামাজিক নিরাপত্তাসহ যাবতীয় ব্যয় এর ব্যবস্থা করেছেন।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের অন্যান্যদের মধ্যে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) এবিএম এহছানুল মামুন, জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সহকারি কমিশনার ও নির্বাহী নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আশরাফুল আলম রাসেল, ডিএম শাফিন আল সাদিক, নেজারত ডেপুটি কালেক্টর (এনডিসি) মোঃ মিজানুর রহমানসহ প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকগণ উপস্থিত ছিলেন।