দেশজুড়ে

তরুণ প্রজন্ম ও শিক্ষার্থীদের মাদকাসক্তি: ভয়ঙ্কর সামাজিক মহামারি

  মোরেলগঞ্জ প্রতিনিধি ১২ অক্টোবর ২০২৫ , ৫:৪৯:১০ প্রিন্ট সংস্করণ

তরুণ প্রজন্ম ও শিক্ষার্থীদের মাদকাসক্তি: ভয়ঙ্কর সামাজিক মহামারি

মানুষের জীবনকে সুন্দর, সৃজনশীল ও অর্থবহ করার অন্যতম প্রধান উপাদান হলো সুস্থ তরুণ প্রজন্ম। একটি জাতির আগামী দিনের চালিকাশক্তি এই তরুণরাই। তারা যত বেশি শিক্ষিত, সৎ, কর্মদক্ষ ও আদর্শবান হবে, দেশ তত দ্রুত অগ্রসর হবে উন্নতির পথে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, বর্তমান সমাজে তরুণ প্রজন্মের এক বড় অংশ ধীরে ধীরে মাদকের ভয়ঙ্কর ছোবলে আক্রান্ত হচ্ছে। মাদক শুধু তাদের ভবিষ্যৎ অন্ধকার করে দিচ্ছে না, বরং পুরো সমাজ ও রাষ্ট্রকেই অস্থিতিশীলতার দিকে ঠেলে দিচ্ছে।

একসময় মাদকাসক্তির শিকার হতো মূলত বেকার বা উদ্দেশ্যহীন তরুণরা, যারা স্কুল বা কলেজে যেত না। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। আজ মাদকের ছোবল পৌঁছে গেছে স্কুল, কলেজ এমনকি মাদ্রাসাগামী কিশোর-কিশোরীদের মাঝেও। এরা পড়াশোনা করে সমাজের নেতৃত্ব দেওয়ার কথা, অথচ অনেকে অল্প বয়সেই নেশার ভয়ঙ্কর ফাঁদে পড়ে পড়াশোনা ছেড়ে দিচ্ছে, পরিবার ও সমাজে অস্থিরতা তৈরি করছে। ফলে মাদক এখন কেবল তরুণদের সমস্যা নয়, বরং শিক্ষার্থীদের মধ্যেও মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ছে।

বাংলাদেশে মাদকদ্রব্যের সহজলভ্যতা এখন উদ্বেগজনক। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নজরদারির পরও বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে ইয়াবা, ফেনসিডিল, গাঁজা, আইস ও হেরোইন দেশে ঢুকছে। শহর থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত গ্রামেও এসব মাদকের ছড়াছড়ি দেখা যায়। মাদক ব্যবসায়ীরা এখন কৌশল বদলেছে। তারা তরুণ ও শিক্ষার্থীদের “নিরাপদ ক্রেতা” হিসেবে টার্গেট করছে। কারণ এরা পরিবার ও সমাজের চোখে অনেকটা নির্দোষ এবং পুলিশের সন্দেহ এড়িয়ে চলতে পারে। ফলে স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসাগামী ছেলেমেয়েদের মাদক বাহক হিসেবেও ব্যবহার করা হচ্ছে।

প্রতিদিনই সংবাদপত্রের পাতায় বা টেলিভিশনের পর্দায় মাদকের কারণে ঘটে যাওয়া হত্যাকাণ্ড, আত্মহত্যা, ধর্ষণ, ডাকাতি কিংবা দুর্ঘটনার খবর উঠে আসছে। বিশেষত শহরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর আশেপাশে গড়ে উঠছে “গোপন আস্তানা”, যেখানে সহজেই পাওয়া যাচ্ছে নানা ধরনের মাদকদ্রব্য। শিক্ষার্থীরা বন্ধুদের প্রভাবে কিংবা কৌতূহল থেকে প্রথমে মাদকের সঙ্গে পরিচিত হচ্ছে, পরে ধীরে ধীরে আসক্ত হয়ে পড়ছে।

আজ থেকে এক যুগ আগেও শিক্ষার্থীদের মাদকাসক্ত হওয়ার ঘটনা খুব বেশি শোনা যেত না। কিন্তু বর্তমানে পরিস্থিতি পাল্টেছে। বিভিন্ন সমীক্ষা বলছে, শহরাঞ্চলে পড়ুয়া কিশোর-কিশোরীদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ কোনো না কোনোভাবে মাদকের সংস্পর্শে এসেছে। তারা প্রথমে বন্ধুদের সঙ্গে “স্টাইল” দেখানোর জন্য সিগারেট ধরছে, এরপর ধীরে ধীরে নেশার বড় ভাণ্ডারে প্রবেশ করছে। আরও ভয়াবহ বিষয় হলো, অভিভাবকের উদাসীনতা ও অতিরিক্ত ভরসা। অনেক পিতা-মাতা সন্তানদের যথাযথ খোঁজখবর রাখেন না। আবার কেউ কেউ অন্ধ বিশ্বাসে ভর করে সন্তানকে পুরো স্বাধীনতা দিয়ে দেন।

তরুণরা সেই সুযোগে রাতে বন্ধুদের আড্ডায় যায়, মোবাইল ফোন ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের মাধ্যমে মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগাযোগ গড়ে তোলে। পরিবার তখনো টের পায় না যে তাদের সন্তান ধীরে ধীরে মাদকের অন্ধকার জগতে প্রবেশ করছে। মাদক ব্যবসায়ীরা ভালো করেই জানে, স্কুল ও কলেজগামী শিক্ষার্থীরা তাদের জন্য নিরাপদ বাহক। এরা পুলিশের চোখে ধরা পড়ে না সহজে, আবার সমাজেও সন্দেহভাজন হিসেবে চিহ্নিত হয় না। তাই তারা শিক্ষার্থীদের হাতে মাদক পৌঁছে দিয়ে সহজেই বাজার বিস্তার করছে। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, এ কৌশলে তারা প্রায়শই সফল হচ্ছে।

যেকোনো সামাজিক সমস্যার মতো মাদকাসক্তিরও কিছু সুস্পষ্ট কারণ আছে। তরুণ প্রজন্ম কেন মাদকের দিকে ঝুঁকছে, কিংবা স্কুল, কলেজ মাদ্রাসাগামী শিক্ষার্থীরাও কেন এর ছোবলে আক্রান্ত হচ্ছে, তা বোঝা জরুরি। প্রথমত, কৌতূহল ও বন্ধুপ্রভাব। কৈশোর এমন একটি সময় যখন একজন ছেলে বা মেয়ে নতুন কিছু জানার, করার ও অনুকরণ করার প্রবণতা দেখায়। তারা বন্ধুদের সঙ্গে মিলেমিশে চলতে চায়, অনেক সময় বন্ধুর প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করতে পারে না। বন্ধু যদি মাদক গ্রহণ করে, তবে কৌতূহল থেকে কিংবা দলভুক্ত থাকার জন্য অন্যরাও সেই পথে হাঁটে। একবার চেষ্টা করার পর অনেকেই আসক্ত হয়ে পড়ে।

দ্বিতীয়ত, পারিবারিক উদাসীনতা ও ভাঙন। পরিবার হলো একজন কিশোর বা তরুণের সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয়। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, অনেক বাবা-মা সন্তানদের যথেষ্ট সময় দেন না। কেউ কেউ ব্যস্ত কর্মজীবনে ডুবে থাকে, কেউ আবার ধরে নেয় তাদের সন্তান নিজের খেয়াল নিজেই রাখবে। আবার পরিবারে কলহ, বিবাহবিচ্ছেদ বা অস্বাভাবিক সম্পর্ক থাকলেও সন্তান মানসিকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয়। তারা তখন বাইরের আড্ডায় শান্তি খুঁজতে গিয়ে মাদকের ফাঁদে পড়ে। তৃতীয়ত, অতিরিক্ত স্বাধীনতা ও প্রযুক্তির অপব্যবহার। বর্তমানে তরুণরা মোবাইল, ইন্টারনেট ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অতি বেশি সময় কাটাচ্ছে। এগুলো একদিকে জ্ঞানার্জনের পথ খুলে দিলেও অন্যদিকে নানা অসুস্থ প্রবণতার সুযোগও তৈরি করছে। অনলাইনের মাধ্যমে মাদক ব্যবসায়ীরা শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছে যায়। আবার রাতভর গেম খেলা বা অনলাইন আড্ডা তরুণদের মানসিক ভারসাম্য নষ্ট করে, ফলে তারা নেশার দিকে ঝুঁকে পড়ে। চতুর্থত, শিক্ষাব্যবস্থার চাপ ও ব্যর্থতা। অনেক তরুণ পরীক্ষায় ভালো করতে না পেরে হতাশায় ভোগে। কেউ কেউ চাকরির অনিশ্চয়তায় দিশেহারা হয়।

এই হতাশা কাটাতে তারা ভুলভাবে মাদককে আশ্রয় হিসেবে নেয়। আবার অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পর্যাপ্ত সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া কার্যক্রম না থাকায় শিক্ষার্থীরা সুস্থ বিনোদন থেকে বঞ্চিত হয় এবং বিপথে চলে যায়। পঞ্চমত, অর্থনৈতিক বৈষম্য ও বেকারত্ব। সমাজে যখন একজন তরুণ দেখে যে তার সহপাঠী বা সমবয়সীরা টাকার জোরে বিলাসবহুল জীবনযাপন করছে, তখন তার মনে হীনমন্যতা জন্মায়। সে হয়তো অল্প টাকায় মাদক নিয়ে সাময়িক সুখ খুঁজতে চায়। অন্যদিকে অনেক বেকার তরুণ, যাদের জীবনে লক্ষ্য ও অনুপ্রেরণা নেই, তারা সময় কাটানোর জন্য মাদকের কাছে আশ্রয় নেয়। ষষ্ঠত, মাদক ব্যবসায়ীদের কৌশল। ব্যবসায়ীরা শিক্ষার্থীদের ‘সফট টার্গেট’ বানাচ্ছে। তারা শুরুতে বিনামূল্যে মাদক দেয় বা খুব সস্তায় বিক্রি করে। আসক্ত হয়ে গেলে তখন আর ছাড়তে পারে না, ক্রমেই তারা নিয়মিত ক্রেতায় পরিণত হয়।

সবশেষে, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অবক্ষয়। সমাজে যখন সৎ-অসৎয়ের পার্থক্য কমে যায়, আদর্শের চর্চা কমে যায়, তখন তরুণরা সহজেই বিপথে যায়। গান, সিনেমা বা সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেক সময় মাদককে ‘ফ্যাশন’ বা ‘স্টাইল’ হিসেবে দেখানো হয়। এর প্রভাব কিশোরদের মনে গভীরভাবে পড়ে।

মাদকাসক্তি শুধু একজন ব্যক্তির নয়, তার পরিবার, সমাজ এমনকি গোটা রাষ্ট্রের জন্যও এক গভীর সংকট। মাদকের ছোবলে আক্রান্ত হলে একজন মানুষ ধীরে ধীরে তার স্বাভাবিক জীবন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে এবং পরিণামে জীবনকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়। প্রথমত: শারীরিক ক্ষতি। মাদক গ্রহণে মানুষের শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা ভীষণভাবে কমে যায়। হেরোইন, ইয়াবা, গাঁজা কিংবা অ্যালকোহল; প্রতিটি মাদক শরীরের ভিন্ন ভিন্ন অঙ্গকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। লিভার, কিডনি, ফুসফুস, হৃদপিণ্ড এমনকি মস্তিষ্ক পর্যন্ত ধ্বংস হতে শুরু করে। নিয়মিত মাদক সেবনে অপুষ্টি দেখা দেয়, শরীর দ্রুত ভেঙে যায়, অনেকেই তরুণ বয়সেই মৃত্যুর দিকে ধাবিত হয়।

দ্বিতীয়ত: মানসিক অবনতি। মাদক মস্তিষ্কের স্নায়ুতন্ত্রে সরাসরি প্রভাব ফেলে। প্রথমে সাময়িক আনন্দ দিলেও কিছুদিন পর তা রূপ নেয় বিষণ্নতা, দুশ্চিন্তা ও মানসিক ভারসাম্যহীনতায়। শিক্ষার্থী বা তরুণদের মনোযোগ নষ্ট হয়, তারা পড়াশোনা বা কোনো কাজে মনোযোগ দিতে পারে না। অনেক সময় তারা বিভ্রমে ভোগে, হ্যালুসিনেশন দেখে, এমনকি আত্মহত্যার পথও বেছে নেয়। তৃতীয়ত: শিক্ষাজীবনে ধ্বংস। যে শিক্ষার্থীরা একসময় ভালো ফলাফল করত, মাদকের নেশায় পড়ে তারা পড়াশোনা থেকে সম্পূর্ণ বিমুখ হয়ে যায়। স্কুলে অনুপস্থিতি বাড়ে, ক্লাসে মনোযোগ কমে যায়, পরীক্ষায় খারাপ ফলাফল করে।

পরিণামে তারা পড়ালেখা ছেড়ে দেয়, ভবিষ্যৎ অন্ধকারে ডুবে যায়। চতুর্থত: অপরাধপ্রবণতা বৃদ্ধি। মাদক সেবনের অভ্যাস বজায় রাখতে অর্থের প্রয়োজন হয়। প্রথমে হয়তো পরিবার থেকে টাকা নেয়া হয়, কিন্তু ধীরে ধীরে চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি কিংবা অবৈধ ব্যবসার মতো কাজে জড়িয়ে পড়ে। মাদকের টাকার জন্য অনেক তরুণ এমনকি হত্যার মতো ভয়াবহ অপরাধও করতে দ্বিধা করে না। ফলে সমাজে অশান্তি ও অনিরাপত্তা ছড়িয়ে পড়ে। পঞ্চমত: পারিবারিক ভাঙন। পরিবারে যদি কোনো সদস্য মাদকে আসক্ত হয়ে পড়ে, তবে পুরো পরিবারকেই এর মাশুল দিতে হয়। বাবা-মা দুশ্চিন্তায় ভোগেন, ভাইবোনেরা মানসিক যন্ত্রণার শিকার হয়। পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থা নষ্ট হয়, কারণ চিকিৎসা ও মাদকের খরচ মিলে সংসার ভেঙে পড়ে। অনেকে সামাজিক লজ্জার ভয়ে বিষয়টি গোপন রাখে, যা সমস্যাকে আরও জটিল করে তোলে। ষষ্ঠত: সামাজিক অবক্ষয়।

তরুণ প্রজন্মই একটি জাতির ভবিষ্যৎ। তারা যদি মাদকের জালে বন্দী হয়, তবে সমাজে সুস্থ সংস্কৃতি, নৈতিকতা ও মানবিক মূল্যবোধ ধ্বংস হয়ে যায়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অশান্তি বাড়ে, সহিংসতা বৃদ্ধি পায়। অনেক ক্ষেত্রে মাদকাসক্ত তরুণরা রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহৃত হয়, যা সামাজিক স্থিতিশীলতাকে ভেঙে দেয়। সপ্তমত: অর্থনৈতিক ক্ষতি। একজন মাদকাসক্ত ধীরে ধীরে কর্মক্ষমতা হারায়। পড়াশোনায় ব্যর্থ হয়ে তারা চাকরির যোগ্যতা হারায়, কিংবা কর্মক্ষেত্রে অযোগ্য হয়ে পড়ে।

এতে শুধু ব্যক্তি নয়, জাতীয় অর্থনীতিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিপুল পরিমাণ অর্থ মাদকের পেছনে ব্যয় হয়, যা দেশের উৎপাদনশীল কাজে ব্যবহার হতে পারত। উপরন্তু মাদকাসক্তির কারণে স্বাস্থ্যখাতে বিপুল অর্থ ব্যয় করতে হয়। সবশেষে, জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি। মাদক চোরাচালান একটি আন্তর্জাতিক অপরাধ। একটি দেশ যখন মাদকে আক্রান্ত হয়, তখন তার তরুণ প্রজন্ম দুর্বল হয়ে পড়ে। অপরাধচক্র ও মাদক ব্যবসায়ীরা রাষ্ট্রীয় স্থিতিশীলতাকে নষ্ট করে। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির দিকে যায়, ফলে জাতীয় নিরাপত্তাও হুমকির মুখে পড়ে।

মাদকাসক্তির ভয়ঙ্কর থাবা থেকে তরুণ প্রজন্ম, বিশেষ করে স্কুল–কলেজগামী শিক্ষার্থীদের মুক্ত রাখা আমাদের সময়ের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। এ ক্ষেত্রে পরিবার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সমাজ ও রাষ্ট্র; সবারই আলাদা আলাদা দায়িত্ব রয়েছে। কারো ভূমিকা অবহেলা করলে এ লড়াই সফল হবে না। পরিবারের দায়িত্ব হলো সন্তানের সঙ্গে নিয়মিত সময় কাটানো, তাদের কথা মন দিয়ে শোনা, মানসিক সঙ্গ দেওয়া এবং অতিরিক্ত উদাসীনতা ও অন্ধ বিশ্বাস এড়িয়ে চলা। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে শিক্ষার্থীদের নৈতিক শিক্ষা, সুস্থ বিনোদন ও সৃজনশীল কর্মকাণ্ডে যুক্ত করতে হবে। সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা, খেলাধুলা, বিতর্ক, সংগীতচর্চা ইত্যাদির মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সময়কে ইতিবাচকভাবে কাজে লাগানো যেতে পারে। পাশাপাশি নিয়মিত সচেতনতামূলক সভা ও সেমিনার আয়োজন করে মাদকের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের জানানো যেতে পারে।

প্রয়োজনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কাউন্সেলিং সেন্টার খোলা যেতে পারে। সমাজের মানুষদের উচিত মাদকাসক্তকে ঘৃণা না করে বরং সহমর্মিতা দেখানো, সামাজিক নেতৃবৃন্দ ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনরা মানুষের সঠিক পথে ফেরাতে কাজ করবে এবং মাদক বিক্রি বা সেবন সহজে না ঘটতে সমাজে নজর রাখবে। রাষ্ট্রের দায়িত্ব হলো আইন প্রণয়ন ও কঠোর বাস্তবায়ন, সীমান্তে নজরদারি বাড়ানো, মাদক ব্যবসায়ীদের শাস্তি নিশ্চিত করা, মাদকাসক্তদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসন, সচেতনতামূলক প্রচারণা এবং বিজ্ঞাপন, নাটক ও চলচ্চিত্রের মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে জানানো। এছাড়া তরুণদের জন্য সুস্থ বিনোদনের সুযোগ বৃদ্ধি, যেমন খেলাধুলার মাঠ, লাইব্রেরি ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, অত্যন্ত জরুরি। সর্বশেষে, মাদকের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা প্রয়োজন, যাতে সমাজে মাদক সেবন বা বিক্রি লজ্জার বিষয় হয়ে ওঠে।

মাদকাসক্তি আজ শুধু একটি সামাজিক সমস্যা নয়, বরং এটি আমাদের অস্তিত্বের সংকট। তরুণ প্রজন্ম ও স্কুল–কলেজগামী শিক্ষার্থীরা যখন মাদকের থাবায় পড়ছে, তখন একটি জাতির ভবিষ্যৎ অন্ধকারে ডুবে যাচ্ছে। কারণ, আগামী দিনের রাষ্ট্র পরিচালনা করবে এ প্রজন্মই। যদি তারা নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে, তবে দেশ কখনো তার কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি অর্জন করতে পারবে না। মাদকের কারণে একজন মানুষের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ থেমে যায়, পড়াশোনা নষ্ট হয়, কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। পরিবারে অশান্তি, সমাজে অপরাধ, রাষ্ট্রে অস্থিতিশীলতা; সবই মাদকের ভয়াবহ পরিণতি। তাই এর বিরুদ্ধে লড়াই করা শুধু আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাজ নয়, বরং আমাদের প্রত্যেকের দায়িত্ব। আমরা যদি পরিবারের মধ্যে সচেতনতা গড়ে তুলতে পারি, সন্তানদের প্রতি দায়িত্বশীল হই, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো যদি নৈতিক শিক্ষার পাশাপাশি সুস্থ বিনোদন ও সৃজনশীল কার্যক্রম চালু রাখে, সমাজ যদি মাদকের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়, আর রাষ্ট্র যদি আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করে, তবে অবশ্যই এ ভয়ঙ্কর অভ্যাস থেকে তরুণ প্রজন্মকে রক্ষা করা সম্ভব হবে।

সবচেয়ে বড় কথা, আমাদের তরুণদের বোঝাতে হবে; মাদক কোনো ফ্যাশন নয়, কোনো আনন্দ নয়, বরং এটি ধ্বংসের অগ্নিপথ। জীবনের সৌন্দর্য, সম্ভাবনা ও আনন্দ সুস্থতায় নিহিত, মাদকে নয়। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা ছাড়া এ মহামারির সমাধান সম্ভব নয়। তাই এখনই সময়; আমরা সবাই মিলে বলি, “না মাদক, হ্যাঁ জীবন।”

মো: জাকির হোসেন

সিনিয়র শিক্ষক, 

মোরেলগঞ্জ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়

আরও খবর

Sponsered content