প্রতিনিধি ১৯ আগস্ট ২০২৪ , ৩:৫৪:০৬ প্রিন্ট সংস্করণ
আমি তিনাটা বাক্য বলি! আমাদের দেশ ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার পর থেকে গণতন্ত্রের নামে যত গাড়ি ভেঙেছি তত গাড়ি কয় বছরে চায়নাতে তৈরি হয় আমরা জানি না। ১৯৭১ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত কত টাকা পাচার করেছি পরদেশে হিসাব করা অসম্ভব। ১৯৭১ সালের পর থেকে যত সরকারি সম্পদ নষ্ট করেছি তা অন্য দেশে হয়েছে কিনা জানা নেই। এইসব কিছুর বিনিময়ে ছোট্ট একটা দেশ আরামসে চলতে পারবে। এই তিনটা বাক্য সম্পর্কে চিন্তা করুন। সেই থেকে ক্ষমতার লোভে কত মানুষ হত্যা ও গুম করেছি তাও ভাববেন! দেশের সমস্ত শাসকের শাসন রেসপনসেবল এই ধ্বংসের জন্য। আমি মনে প্রানে বিশ্বাস করি সব সরকারের আমলেই মোটামুটি সরকারি তথা জনগণের সম্পদ নষ্ট ও ধ্বংস হয় হানাহানিতে। আমার মনে হয় এটার সাথে খুব কম মানুষই দ্বিমত পোষণ করবেন। আমরা ভবিষ্যতে এমন দেশ চাই না। যে দেশের মানে আমাদের সম্পদ আমরাই নিঃশেষ করব! যার পরিবর্তে আমরা এমন জনপদ চাই যে ভূখন্ডের সকল শ্রেণী নিজের সম্পদ রক্ষা করবে এবং হেফাজত রাখবে। চলুন একটু ঘুরে আসি কেমন মানচিত্র চাই!
এই কিছুদিন আগেও আমরা কলাম লিখেছিলাম যে এই প্রজন্ম দিয়ে কিছু হবে না। এই প্রজন্ম অনলাইন ও গেমিং স্মার্টফোন বিভিন্ন সোসাল জগৎ নিয়ে পড়ে থাকে। হ্যাঁ! আমি বা আমরা ভুল ছিলাম। এই প্রজন্ম দেখিয়ে দিয়েছে কত সাহসী তারা। কত শক্তিশালী তারা। দেশের জন্য তাদের জীবন দিতেও দুইবার চিন্তা করবে না। আমি একজন শহীদের নাম নিয়ে বাকিদের ছোট করবো না। তাই কোনো শহীদদের নাম নিচ্ছি না। সকল শহীদের প্রতি সম্মান রেখে বলছি আমাদের এই প্রজন্ম বিশ্ব মঞ্চে প্রথম সারিতে চলে গেছে। পুরো বসুন্ধরাকে হতভম্ব করে দিয়ে ফ্যাসিবাদী সরকারকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করেছে। পৃথিবীর ইতিহাসে আমাদের ছাত্র আন্দোলন সোনালী অক্ষরে লিখে দিয়েছে। আমার দেশের সমস্ত অপশক্তির রুখতে আমরা আমাদের জীবন দিতেও কয়েকবার চিন্তা করবো না।
আমরা এমন মানচিত্র চাই যে মানচিত্র দেখে কেউ বলবে না কবি রফিক আজাদের মতো, ❝আমার ক্ষুধার কাছে কিছুই ফেলনা নয় আজ। ভাত দে হারামজাদা, তা না হলে মানচিত্র খাবো।❞ আমরা নতুন প্রজন্ম এমন মানচিত্র চাই যে মানচিত্র দেখে পুরো পৃথিবী চিনবে, ওওও এটা বাংলাদেশ! এটা তৃতীয় বিশ্বের মডেল। এটা নতুন চমকে ঝমকে চলছে উপরের দিকে। এটা সেই দেশ যে দেশে কোনো কিছুর ঘাটতি নেই। এই দেশ নয়া বিল্পবের নতুন সাজে বিশ্বে মাথা খাঁড়া করে দাঁড়িয়ে রবে। আমরা আগুনের দেশ চাই না। আমরা ছিন্নবিচ্ছিন্ন মাতৃভূমি চাই না। আমরা রণক্ষেত্রের দামামা চাই না। আমরা হইচইপূর্ণ জনগণ বা শাসক চাই না। আমরা গলা চেপে ধরা শাসক চাই না। আমরা মিডিয়া বন্ধ করে দেওয়া শাসক চাই না। আমরা ধ্বংস লিলার দিকে ঝুঁকে দেওয়া শাসক চাই না। আমরা রক্তপাত করা শাসক চাই না। আমরা অহংকারী, প্রতিহিংসা, নেতিবাচক, আক্রমণাত্মক, অমানসিক ও শুনে ধরা মস্তিষ্কের শাসক চাই না।
আমরা এমন শাসক চাই যিনি সমস্ত কিছুর কথা ভাববে। যিনি দেশের সম্পদ রক্ষা করবে। যে রক্ষক ভক্ষক হবে না। যিনি দেশের সবাইকে নিয়ে ভিন্ন দেশের সাথে পাল্লা দিয়ে আমার সোনার বাংলাকে বিশ্ব মঞ্চে পরিচয় করে দিবে। হ্যাঁ! আমরাও পারি স্বাধীন জনভূমি হিসেবে প্রথম সারিতে থাকতে। যিনি প্রতিহিংসার রাজনীতি করবে না। সে শাসক কারো গলা চেপে ধরবে না। যিনি সকল কিছুর অধিকার নিয়ে ভাববে। যিনি কিভাবে দেশকে পঙ্গু না করে বিশ্বে চমক দেখিয়ে সকল ক্ষেত্রে এগিয়ে নিবে। আমরা এমন শাসন ও শাসক চাই যেখানে নির্বাচন হওয়ার পরে বিরোধী দল জয়ী দলকে নিজে হাতে ধরে পুষ্পের মালা দিয়ে চেয়ারে বসাবে। একই খুশিতে হাসবে পুরো পার্লামেন্ট। একই দুঃখে কাঁদবে সকল সদস্য। একই সারিতে বসবে। একই উন্নয়নের পথে হাঁটবে। একই সুরে গান গাইবে। একই ছন্দে কবিতা বলবে। একই রঙে সাজবে। একই সাগরে ভাসবে। একই রাস্তায় নিশ্চিন্তে পাহারাবিহীণ চলবে। একই টেবিলে বসে জনগণ ও দেশের উন্নয়নের কথা বলবে। একই কন্ঠে বহির্বিশ্বের শত্রুকে দমন করবে।
আমাদের আঁকাবাঁকা মানচিত্রে আমরা সকল ধর্ম, সমস্ত বর্ণ, বহু রঙের মানুষ, ভিন্ন মতের দল, হরেক রকম সুরের গায়ক ও নায়ক, হযবরল সব সম্প্রদায়ের এবং পুরো দেশের মানুষ একটা নামে পরিচিতি পাবে। তা হলো বাঙালি। আমরা সবাই একই জাতি। পাহাড়ি থেকে সাগরীয়, স্থল থেকে মরুভূমি, মাঠি থেকে উপরে এবং পুরো মানচিত্রের সবাই একটাই জাতি বাঙালি। আমরা একটাই সম্প্রদায় তা হলো মানুষ। আমাদের সকলের রক্ত লাল। আমরা সকলেই সমান। আমরা ভিন্ন মতের হলেও দেশের স্বার্থে এক। আমরা ভিন্ন রঙের হলেও জাতির বৃহত্তর অর্থে অভিন্ন। আমরা বহু ধর্মের হলেও দেশকে শান্তি রাখতে আমরা ভাই ও ভাই কিংবা বোন ও বোন। আমাদের দেশের যে কোনো বড় স্বার্থে আমরা একতাবদ্ধ। আমরা এমনই দেশ গঠন করতে চাই। আমরা এমন দেশ চাই যেখানে প্রতি সেকেন্ডে নির্ভয়ে মানুষ চলাফেরা করবে। ওই ছোট্ট শিশু, তরুণী রমনী, বৃদ্ধ মা, বয়স্ক বাবা কিংবা টগবগে যুবক নিশ্চিন্তে থাকবে। কোনো ভয়ের রেশ রইবে না মুখে। কোনো ক্ষয়ক্ষতির ভয় হবে না বুকে। কোনো অপমৃত্যু হবে না সড়কে। কোনো গুলি চলবে না অকারণে। আমরা তরুন প্রজন্ম এমনই দেশ চাই।
আমার দেশের আইটি প্রতিষ্ঠান হবে গর্বের। আমার দেশের সাগরের তীর হবে ভ্রমণের। আমার দেশের পাহাড় হবে যাযাবরের স্বর্গের। আমার দেশের রাস্তা হবে সকলের। আমার দেশের প্রতিটা শহর হবে রাজধানী। আমার দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হবে বিশ্বের। আমার দেশের আকাশ হবে অহংকারের। আমার দেশের নাগরিক হবে নেতৃত্বের। আমার দেশের মেয়ে হবে শ্রেষ্ঠ জগতের। আমার দেশের তরুণ হবে অলিম্পিকে সবার আগে জয়ের। আমার দেশের শিশু হবে সবুজ তৃণ পাতার রঙের। আমার দেশের বৃদ্ধরা হবে ইতিহাসের। আমার দেশের দালান হবে আকাশচুম্বী। আমার দেশের গগন হবে খুশির নিঃশাষের। আমার দেশের পতাকা হবে বিশ্বমানের। আমরা নয়া নব্য বাংলাদেশ তৈরি করতে তত্পর হবো। আমরা বিনা শপতে দেশকে ভালোবাসবো। আমরা আমাদের দেশের বায়ুকে সতেজ রাখবো। কলকারখানাকে অত্যাধুনিকে রুপান্তর করবো। দেশের মাটিকে সোনালী ফসলে ভরিয়ে দিব।
আমার দেশের শ্রমিক, মাঝি, ডক্তর, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, শিক্ষক, সাংবাদিক, সাহিত্যক, কবি, রাজনীতিবিদ, ছাত্র-ছাত্রী, গবেষক, বাহিনী, সকল গোত্রের, সব ধর্মের এবং সমস্ত সম্প্রদায় ইত্যাদি সবাই হাতে হাত রেখে দেশকে সুন্দর সুললিত পরিপাটি করে তুলবো। দেশের সীমান্ত ছাড়িয়ে ৫১ কোটি বর্গ কিমির সাবাইকে বিমোহিত করে দিবো কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে। ঝকঝকে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের তালিকার শুরুতে নিয়ে যাব। বিশাল সমুদ্রের গভীরের গবেষণা থেকে শুরু করে মহাশূন্যে পরিভ্রমণ করা স্যাটলাইটেও কাজ করব। নিজের দেশকে গড়ে তুলে বিশ্ব দরবারে নেতৃত্ব দিব। এক নয়া জায়াগান্টিক শক্তিতে পরিণত হয়ে মহা শক্তিধর সাম্রাজ্যকে হতভম্ব করে দিব। আমার দেশের ইঞ্জিনিয়ার হবে বিশ্বমানের। আমার দেশের ডাক্তার হবে বিশ্বমানবতার। আমার দেশের নেতা হবে বিশ্ব নেতা ও সমস্ত জনতার। আমার দেশের আজকের শিশু হবে বিশ্বের মহা মানব সম্পদ। আমাদের জাতি হবে অদম্য। যা পৃথিবীতে ইতিহাস হয়ে রবে সমস্ত ভাষার বই-পুস্তকে। আমরা সবুজ বাংলাকে হৃৎপিণ্ডের গভীর থেকে ভালোবাসবো। ইনশাআল্লাহ!
ওমর ফারুক
ইংরেজি বিভাগ
সরকারি সিটি কলেজ, চট্টগ্রাম।