প্রতিনিধি ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২০ , ৭:২০:২৫ প্রিন্ট সংস্করণ
কামরুল ইসলাম দুলু, (সীতাকুন্ড) চট্টগ্রাম : চট্টগ্রামে সীতাকুন্ড উপজেলার জেলেরা হতদরিদ্র। জীবিকার প্রয়োজনে দাদন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চড়া সুদে ঋণ নিতে হয় তাঁদের। তবে জেলেদের কষ্টের আয়ের প্রায় সবটাই চলে যায় দাদন ব্যবসায়ীদের পকেটে। জেলে পাড়ার ৮০ শতাংশ লোক নদীতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন। জেলেরা সারা দিন ও রাতে মাছ ধরে বাজারে বিক্রি করেন। কয়েকজন জেলের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জেলেরা হতদরিদ্র মাছ ধরার জাল, নৌকা ও ট্রলার কেনার জন্য আড়তদার ও মহাজনদের কাছ থেকে প্রতিবছর ঋণ নেন তারা। স্থানীয় ব্যক্তিরা একে দাদন ব্যবসা বলেন। জেলেরা যে পরিমাণ টাকা দাদন নেন, প্রতিদিন সেই টাকার ১৫ শতাংশ দাদন ব্যবসায়ীদের দিতে হয়। পাশাপাশি জেলেদের নিজ নিজ দাদন ব্যবসায়ীর আড়তে এনে মৌখিক নিলামে মাছ বিক্রি করতে হয়। জেলেরা সাগর থেকে মাছ উপকুলে আনার আগেই হাজির হয়ে যায় দাদন ব্যাবসায়ীরা। ইলিশ মৌসুম এলেই সীতাকুন্ডের ১৩২টি জেলেপাড়ায় বাড়ে আতঙ্ক। সাগর থেকে ইলিশ ধরে যখন উপকুলে আনা হয় তখন স্থানীয় প্রভাবশালী ও দাদন ব্যবসায়ীরা জোর করে নিয়ে যায় আহরণ করা রূপালী ইলিশ। অনেকে আবার নাম মাত্র মূল দিয়ে ইলিশ নিতে বাধ্য করেন। চলতি ইলিশের এই মৌসুমে সীতাকুন্ড থানা ও উপজেলা মৎস অফিসে ১০টির অধিক অভিযোগ হয়েছে। এতে জেলে বাড়িতে হামলা ও মাছ লুটের ঘটনায় দুইটি মামলা ও একাধিক জিডি হয়েছে। স্থানীয় জেলেদের দাবি আগামী সপ্তাহে এই মৌসুমে ইলিশ ধরার শেষ জো (ইলিশ মাছ ধরার সময়)। এতে তারা ন্যায় মূল্যে তাদের সংগ্রহকৃত ইলিশ বিক্রি করতে পারে সেই নিশ্চয়তা চান প্রশাসনের কাছে। উপজেলা মৎস কর্মকর্তা শামীম আহমদ বলেন, চলতি ইলিশ মৌসুমে উপজেলার সৈয়দপুর, মুরাদপুর, সোনাইছড়ি, বাঁশবাড়িয়া, ছলিমপুর, ভাটিয়ারী, বাড়বকুন্ড ও বাঁশবাড়িয়া জেলেপাড়াগুলো জেলেদের উপর প্রভাব বিস্তার, জোর করে সাগর থেকে জেলেদের সংগ্রহকৃত ইলিশ লুট করে নিয়ে যায় এবং এর প্রতিকার বা প্রতিবাদ করতে গেলে জেলেদের বাড়িঘরে হামলা ও ভাংচুরের মতো ঘটনা ঘটেছে। এ সংক্রান্ত ১০টির অধিক অভিযোগ পাওয়া গেছে। সীতাকুন্ড মডেল থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) সুমন চন্দ্র বণিক বলেন, চলতি ইলিশ মৌসুমে উপজেলার মুরাদপুর ও ভাটিয়ারী ইউনিয়নের জেলেদের মাছ লুট ও হামলার ঘটনায় পৃথক দুইটি মামলা ছাড়াও ছলিমপুর ইউনিয়নের জেলেদের দুই পক্ষের ঘটনায় একটি জিডি থানায় রেকর্ড হয়েছে। আসামীদের গ্রেফতারের পুলিশের একাধিক টিম কাজ করছে বলে জানান তিনি। দাদন ব্যবসা আইন সম্মত বা বৈধ না হওয়া সত্বেও এই ব্যবসার সাথে জড়িতদেরও নানা কুট কৌশলের কারণে সমাজের বিরুদ্ধে ‘টু’ শব্দটি পর্যন্ত করা হচ্ছে না। কিন্তু দিনে দিনে এর ক্ষতিকর প্রভাবের কারণে সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বর্তমানে গ্রামাঞ্চলের কিছু উঠতি যুবক পেশা হিসেবেও দাদন ব্যবসাকে বেছে নিয়েছে। তারা এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে পুঁজি তৈরি করে দাদন ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। অনেক দাদন ব্যবসায়ীরা অন্য ব্যবসা ছেড়ে দিয়ে রাতা রাতি কোটিপতি বনে যাওয়ার আশায় এই দাদন ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েছেন। তাদের বেড়া জালে বন্দী হয়ে অনেক সহজ সরল সাধারণ মানুষ জমি, ঘড়-বাড়ি থেকে শুরু করে সব কিছু হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পথে বসেছে।