খুলনা

নতুন মৌসুমে ঘুরে দাঁড়াতে চায় ফুল চাষীরা

  প্রতিনিধি ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২০ , ৭:১২:৫৯ প্রিন্ট সংস্করণ

উত্তম ঘোষ, যশোর : ফুলের রাজধানীখ্যাত যশোরের ঝিকরগাছার পানিসারার হাড়িয়া গ্রামের নারী ফুলচাষী সাজেদা বেগম। ২০০৪ সালে স্বামী ইমামুল হোসেন অসুস্থ হওয়ার পরে সংসারে হাল ধরেন সাজেদা বেগম। অসুস্থ স্বামীর অনুপ্রেরণা আর স্বল্প পুঁজি নিয়েই বাড়ির পাশেই বর্গা নেওয়া ১০ কাটা জমিতে শুরু করে জারবেরা ফুল চাষ। সততা আর উদ্যোমীর কারণে হয়েছিলেন সফলও। কিন্তু করোনা আর আম্পান ঝড়ে সাজেদার সফলতার ফুলের বাগান ধ্বংসের মুখে। তার সেই ফুলের জমিতে ধূসর মাঠে পরিণত হয়েছে। আবার কোন জমিতে ফুল গাছের উঠিয়ে সবজি বা ধান লাগিয়েছেন তিনি। করোনা পরিস্থিতির কারণে একদম ফুল বেচাকেনা না হওয়ায় আম্পানে ক্ষতিগ্রস্ত ফুলের শেডগুলো পড়ে রয়েছে ঝড়ের পরবর্তী ৫ মাস পরেও। গত মৌসুমের ঋণের কিস্তির চাপে এখন শুধু হতাশা আর দুচিন্তায় দিনপার করছেন তিনি। এমন অবস্থা দেশের ফুলের রাজধানীখ্যাত গদখালী-পানিসারার সাজেদা বেগম একা সেটা বলা ভুল হবে, তার মতো এ অঞ্চলের হাজারো ফুল চাষীর দশা এই রকম। করোনা পরিস্থিতিতে ফুল বিক্রি করতে না পারায় অর্থের অভাবে আম্পানে ক্ষতিগ্রস্ত ফুলের শেড পড়ে আছে পরিত্যক্ত অবস্থায়। ফুলচাষের মৌসুম আসলেও নতুনভাবে চাষাবাদ শুরু করতে না পারায় ফুল উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা করছেন চাষিরা। এ পরিস্থিতিতে চাষিদের ক্ষতিকাটিয়ে উঠে ঘুরে দাঁড়াতে হলে সরকারের সহায়তা চেয়ে দুই বছরের স্বল্প সুদে ঋণ চেয়েছেন এ খাতের সংশ্লিষ্ট ফুলচাষি-ব্যবসায়ীরা। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, প্রতি বছর ৩০০ কোটি টাকার ফুল উৎপাদন হয় এসব মাঠ থেকে। কৃষকদের সাথে কথাবলে জানা গেছে, গত ৫ মাসে মাসে ফুলচাষি ও ব্যবসায়ীদের ৩শ’ কোটি বেশি টাকার ক্ষতি হয়েছে। হতাশায় ভেঙে পড়েছেন ফুল চাষের ওপর নির্ভর এলাকার হাজার হাজার মানুষ। এই মুহূর্তে সম্ভাবনাময় এই সেক্টরটিকে টিকিয়ে রাখতে হলে সরকারি সহযোগিতা একান্ত প্রয়োজন বলে দাবি করছেন তারা। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির সভাপতি আবদুর রহিম বলেন, দেশে ফুলের বাজার বছরে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকার। দেশের চাহিদার ৮০ ভাগ ফুল যশোর থেকে সরবরাহ করা হয়ে থাকে। করোনার কারণে গত ৫ মাস ফুল বিক্রির সুযোগ না থাকায় এবার ৪৫০ কোটি টাকার ফুল নষ্ট হয়েছে। যশোর অঞ্চলে প্রায় ১০ হাজার ফুলচাষি রয়েছে এই সংকটে। করোনাভাইরাস ও আম্পানে এই খাতে যে অপ‚রণীয় ক্ষতি হয়েছে, তা পুষিয়ে নিতে ৫০০ কোটি টাকার কৃষি প্রণোদনা প্রয়োজন। আর সেটা দিতে না পারলে এই খাত বাঁচানো কঠিন হয়ে পড়বে। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান জানান, মহামারি করোনা ও ঘূর্ণিঝড় আম্পানের তান্ডবে যশোরের প্রায় সব ফুলচাষিই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ইতোমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত তালিকা প্রস্তুত করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। দ্রতই ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের প্রণোদনার আওতায় আনা হবে।

আরও খবর

Sponsered content