দেশজুড়ে

নারীর লাশ ডিপ ফ্রিজে রেখে ডাকাতির চেষ্টা

  প্রতিনিধি ১০ নভেম্বর ২০২৪ , ৭:৩৬:৪৮ প্রিন্ট সংস্করণ

নারীর লাশ ডিপ ফ্রিজে রেখে ডাকাতির চেষ্টা

বগুড়ার দুপচাঁচিয়ায় উম্মে সালমা (৫০) নামের এক নারীকে হত্যার পর তার লাশ ডিপ ফ্রিজে রেখে গেছে দুর্বৃত্তরা। রোববার (১০নভেম্বর) দুপুর দেড়টার মধ্যে ‘আজিজয়া মঞ্জিল’ নামে বাড়িতে নৃশংস ওই ঘটনা ঘটে।

নিহত উম্মে সালমা (৫০) দুপচাঁচিয়া ডিএস ফাজিল মাদরাসার উপাধ্যক্ষ আজিজার রহমানের স্ত্রী। মাদরাসা শিক্ষক আজিজার রহমান দুপচাঁচিয়া উপজেলা মসজিদের খতিব এবং ইমাম-মুয়াজ্জিন সমিতির সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন। এছাড়া তিনি ‘আজিজিয়া হজ্ব কাফেলা’ নামে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী।

হত্যাকাণ্ডের পর বাড়িতে গিয়ে ঘরের ভেতরে কাপড়-চোপড় এলোমেলো এবং মেঝেতে একটি কুড়াল পড়ে থাকতে দেখা গেছে। এছাড়া ধারালো অস্ত্র দিয়ে আলমারি কাটার চিহ্ন রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে কুড়াল দিয়ে আলমারি কাটার চেষ্টা করা হয়েছে। তবে প্রকাশ্য দিনের বেলায় জনবহুল এলাকায় স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী শিক্ষক ও ধর্মীয় ব্যক্তিত্বের বাড়িতে ডাকাতদের প্রবেশ এবং তার স্ত্রীকে হত্যার পর লাশ ডিপফ্রিজে রাখার মত নৃশংস ঘটনায় ওই এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। 

দুপচাঁচিয়ার হাটসাজাপুর বিদ্যালয়ের শিক্ষক মঈন খান জানান, মাদরাসা শিক্ষক আজিজার রহমানের ৩ সন্তান। বড় ছেলে এবং মেয়ে ঢাকায় থাকেন। ছোট ছেলে ২৪ বছর বয়সী সাদ বিন আজিজার রহমানই শুধু বাবা-মা’র সঙ্গে দুপচাঁচিয়ায় বসবাস করেন। সাদ ডিএস ফাজিল মাদরাসার কামিলে অধ্যয়নরত।

স্কুল শিক্ষক মঈন খান আরও জানান, দুপচাঁচিয়া উপজেলা সদরের সিও অফিস বাসস্ট্যান্ড থেকে ১০০ মিটার পশ্চিমে বগুড়া-নওগাঁ মহাসড়ক সংলগ্ন ৪তলা বাড়ি ‘আজিজিয়া মঞ্জিল’-এর তৃতীয় তলায় সপরিবারে বসবাস করেন মাদরাসা শিক্ষক আজিজার রহমান।

মাদরাসা শিক্ষক আজিজার রহমান এবং ছোট ছেলে সাদ বিন আজিজার প্রতিদিনের মত রোববার সকাল ৯টার মধ্যে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে যান। মাদরাসা শিক্ষক আজিজার রহমান সাংবাদিকদের বলেন, মাদরাসায় পৌঁছার পর সকাল ১০টার দিকে তিনি তার স্ত্রীর সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলেছেন।

তার ছোট ছেলে সাদ বিন আজিজার জানান, তিনি দুপুর ২টার পর বাড়িতে গিয়ে প্রধান ফটক তালাবদ্ধ দেখেন। পরে বিকল্প চাবি দিয়ে বাড়ির ভেতরে ঢোকার পর ঘরের সবকিছু এলোমেলো দেখতে পান। ডিপ ফ্রিজের দিকে তাকিয়ে সেটিকে ভালোভাবে লাগানো হয়নি বলে মনে হয়। এরপর সেটি খোলার পর তার ভেতরে মায়ের হাত বাঁধা লাশ দেখতে পান। 

নিহত উম্মে সালমার স্বামী আজিজার রহমানের ধারণা সকাল ১০টার পর থেকে দুপুর দেড়টার মধ্যেই ওই হত্যাকাণ্ডটি ঘটানো হয়েছে।‘স্টিলের আলমারি কুড়াল দিয়ে কাটার চেষ্টা করা হয়েছে। তবে সেটা পারেনি। তাই এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে টাকা-পয়সা বা স্বর্ণালংকার নিতে পারেনি।’

মাদরাসা শিক্ষক আজিজার রহমানের ৪ তলা বাড়ির প্রথম তলার বাসিন্দা মাসকুরুর রহমান এবং সাইদুল হক জানান, ঘটনার সময় তারা বাড়িতে ছিলেন না। অন্য প্রতিবেশিরা বলছেন তারা কোনো চিৎকার বা কোনো শব্দ শোনেননি।

দুপচাঁচিয়া নাগরিক কমিটির সভাপতি আব্দুল বাছেদ জানান, দিনে-দুপুরে বাড়িতে ঢুকে এভাবে একজন নারীকে হত্যা এবং হত্যার পর তার লাশ ডিপ ফ্রিজে রাখা ঘটনায় আমরা রীতিমত শঙ্কিত।

পুলিশের দুপচাঁচিয়া ও আদমদীঘি সার্কেলের সিনিয়র সহকারি পুলিশ সুপার নাজরান রউফ জানান, ডিপ ফ্রিজের মধ্যে উম্মে সালমার লাশ হাত ও পা বাঁধা অবস্থায় ছিল। তবে গলায় কোনোআঘাতের চিহ্ন দেখা যায়নি। ময়নাতদন্তের জন্য আমরা লাশটি বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছি। ধারণা করা হচ্ছে দুপুর দেড়টার দিকে ঘটনাটি ঘটানো হয়েছে। তবে বাড়ি থেকে টাকা-পয়সা বা স্বর্ণালংকার ডাকাতি করতে পারেনি।

আরও খবর

Sponsered content