প্রতিনিধি ১৪ নভেম্বর ২০২০ , ১২:৩৮:২৭ প্রিন্ট সংস্করণ
বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস আজ শনিবার। ‘ডায়াবেটিস সেবায় পার্থক্য আনতে পারেন নার্সরাই’—এ প্রতিপাদ্য নিয়ে দিবসটি পালন করছে বিশ্ব। ডায়াবেটিস নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও পালিত হচ্ছে দিনটি।
দিবসটি উপলক্ষে গতকাল শুক্রবার সকালে রাজধানীর বারডেম জেনারেল হাসপাতালে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতি।
এ সময় ডায়াবেটিক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক এ কে আজাদ খান বলেন, ‘ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের করোনা হলে তা হবে মারাত্মক এবং যদি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না থাকে, তাহলে তা আরো মারাত্মক হতে পারে।’
এই ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ আরো বলেন, ‘টাইপ-২ ডায়াবেটিস প্রায় ৭০ ভাগ প্রতিরোধযোগ্য। বিশ্বে মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়েছে ডায়াবেটিস। এটি কেবল ধনী দেশের রোগ নয়, উন্নয়নশীল দেশেও বেশি আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। যদিও টাইপ-২ ডায়াবেটিস ৭০ শতাংশ সম্পূর্ণ প্রতিরোধ করা যায়, তবে তা অবশ্যই ডায়াবেটিস রোগ হওয়ার আগে। আর এই রোগ একবার হলে সেটি পুরোপুরি ভালো হয় না। তখন নিয়ন্ত্রণ করতে হয়। তাছাড়া ডায়াবেটিস আছে এমন রোগীদের মধ্যে অন্তত ৫০ শতাংশ জানেন না যে, তার ডায়াবেটিস আছে। এজন্য জনসচেতনতা বাড়ানো খুবই জরুরি।’
শুধু চিকিৎসকদের একক চেষ্টায় ডায়াবেটিস প্রতিরোধ সম্ভব নয় বলে সংবাদ সম্মেলনে জানান ডায়াবেটিক সমিতির মহাসচিব মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘এই রোগ প্রতিরোধে রোগী ও তাঁর পরিবারকে সচেতন হতে হবে। চলতি বছরের শুরুতে জাতীয় জনসংখ্যা গবেষণা ও প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান (নিপোর্ট) প্রকাশিত ‘বাংলাদেশ জনমিতি ও স্বাস্থ্য জরিপ ২০১৭-১৮’—প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত মানুষ এক কোটি ১০ লাখ। ১৮ থেকে ৩৪ বছর বয়সীদের মধ্যে এই সংখ্যা ২৬ লাখ এবং ৩৫ বছর এবং এর চেয়ে বেশি বয়সীদের মধ্যে ৮৪ লাখ। প্রায় ৬০ শতাংশ নারী ও পুরুষ জানেনই না যে তারা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত।’
ডায়াবেটিসের সঙ্গে ধূমপানের সম্পর্ক আছে জানিয়ে দন্ত বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক অরূপ রতন চৌধুরী বলেন, ‘যারা তরুণ ধূমপায়ী, তাঁদের ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ পরে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকেন।’
ডায়াবেটিক সমিতি জানিয়েছে, বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে প্রতি ১০০ নারীর মধ্যে ১০ জন গর্ভকালীন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হন। যাঁদের ৬৫ শতাংশ পরবর্তী সময়ে টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়ে পড়েন।’
চিকিৎসকেরা বলছেন, উদ্যোগী হলে নার্সরা ডায়াবেটিস সেবায় গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনতে পারেন। রক্ত পরীক্ষা, ইনসুলিন দেওয়াসহ নার্সরা যদি রোগীকে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখার কৌশলগুলো শিখিয়ে দিতে পারেন, তাহলে ডায়াবেটিস সেবায় ব্যাপক পরিবর্তন আসার সম্ভাবনা আছে। তবে দেশে নার্সের স্বল্পতা আছে। ইন্টারন্যাশনাল ডায়াবেটিস ফেডারেশনও নার্স স্বল্পতার কথা বলেছে। আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানটি বলছে, সারা বিশ্বে পায় ৬০ লাখ নার্সের স্বল্পতা রয়েছে।’
বাংলাদেশে প্রায় ২৫ শতাংশ মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। দেশের বিভিন্ন এলাকায় হাসপাতালে রোগীদের ওপর জরিপ চালিয়ে এমন তথ্য পেয়েছে বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতি।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা বলছেন, সাধারণত ৩০ বছরের অধিক বয়সীদের টাইপ-২ (শরীরে ইনসুলিনের ঘাটতি থাকে) ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন ও নিয়মিত শরীরচর্চা করলে ৭০ শতাংশ ক্ষেত্রে এ ধরনের ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করা সম্ভব। এ জন্য সবচেয়ে বেশি জরুরি সচেতনতা। আর এ কাজে বড় ভূমিকা রাখতে পারেন নার্সেরা।
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিবসটি উপলক্ষে পৃথক বাণী দিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি বলেছেন, ‘আমি ডায়াবেটিস সম্পর্কে গণসচেতনতা সৃষ্টিতে চিকিৎসক, বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতি ও গণমাধ্যমসহ সংশ্লিষ্ট সরকারি-বেসরকারি সংস্থাকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানাচ্ছি।’
রাষ্ট্রপতি আরো বলেন, ‘ডায়াবেটিস সারা জীবনের রোগ। একবার হলে তা আজীবন বয়ে বেড়াতে হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসের কারণে হৃদপিণ্ড, কিডনি ও চোখ ছাড়াও শরীরের অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।’
ডায়াবেটিক রোগীদের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে নার্সরা বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারেন উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘ডায়াবেটিস যথাযথভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হলে একজন ডায়াবেটিক রোগীর নিয়মিত নিজে নিজে রক্ত পরীক্ষা ও ইনসুলিন দেওয়া ছাড়াও ডায়াবেটিস ব্যবস্থাপনার বিভিন্ন বিষয় জানা থাকা আবশ্যক। নার্সরা ডায়াবেটিক রোগীদের এসব বিষয়ে উপযুক্ত স্বাস্থ্যশিক্ষা দিতে পারলে যে কোনো ডায়াবেটিক রোগীর পক্ষেই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা সহজ হয়ে উঠবে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘ডায়াবেটিস প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে সচেতনতা সৃষ্টিতে সরকারের সহায়তা অব্যাহত থাকবে।’ এ ব্যাপারে নানা কার্যকর পদক্ষেপ নিতে তিনি সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ‘ডায়াবেটিক রোগীদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি কমিয়ে আনা ও উপযুক্ত ডায়াবেটিস ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে চিকিৎসকদের পাশাপাশি নার্সরাও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন। কারণ, ডায়াবেটিস সুনিয়ন্ত্রণে রাখার ওপরই একজন ডায়াবেটিক রোগীর সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনযাপন নির্ভরশীল। আর এ কারণে নার্সরা যদি ডায়াবেটিক রোগীকে রক্ত পরীক্ষা, ইনসুলিন দেওয়া ছাড়াও অন্যান্য বিষয়গুলো শিখিয়ে দিতে পারেন, তবে ডায়াবেটিস সেবায় বিশাল বদল আসতে পারে। এর জন্য নার্সদেরও উপযুক্ত প্রশিক্ষণ দেওয়ার উদ্যোগ নিতে হবে।’