বরিশাল

পটুয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের প্রস্তাবিত কমিটি নিয়ে ক্ষোভ

  প্রতিনিধি ২ ডিসেম্বর ২০২০ , ৮:২১:৩৩ প্রিন্ট সংস্করণ

পটুয়াখালী সংবাদদাতা : পটুয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের প্রস্তাবিত পূর্ণাঙ্গ কমিটি নিয়ে বইছে বিতর্কের ঝড়। দুর্নীতি ও স্বজন প্রীতির অভিযোগ উঠেছে প্রস্তাবিত কমিটি নিয়ে। কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পদসহ সদস্য করা হয়েছে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের সাথে যাদের কোনো দিন সম্পর্কই ছিলো না তাদেরকে, এমনকি দলের কর্মকান্ডেও কোনো ধরণের ভূমিকা নেই সেই সব লোকদের। তাদের কারণে জায়গা হয়নি অনেক ত্যাগী ও সক্রিয় নেতা-কর্মীর। প্রস্তাবিত ৭৫ সদস্যের এই কমিটিতে অন্ততঃ ২৫টি পদে ঠিকাদার সহ বিএনপি-জামায়াত মতাদর্শের ব্যক্তিকে ঠাঁই দেওয়া হয়েছে। এ সব অভিযোগ করে এটিকে ঠিকাদার কমিটি আখ্যা দিয়েছেন ক্ষুব্ধও সাধারণ নেতা-কর্মীরা।
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে অর্থের বিনিময়ে পদ বাণিজ্যের অভিযোগও উঠেছে। ইতোমধ্যে সংক্ষুব্ধ অনেকেই দলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে লিখিত অভিযোগ করেছেন। এ ঘটনায় চরম ক্ষুব্ধ দলের বঞ্চিত নেতা-কর্মীসহ জেলার প্রবীণ রাজনীতিকরা। তাতে কর্মী-সমর্থকদের মাঝেও বিরাজ করছে হতাশা ও ক্ষোভ।
গত বছরের ২ ডিসেম্বর পটুয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে কাজী আলমগীর হোসেন ও আব্দুল মান্নানকে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় কমিটি। দলীয় সূত্রে জানা যায়, স¤প্রতি পটুয়াখালী জেলা আওয়ামীলীগের ৭৫ সদস্য বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটির প্রস্তাব কেন্দ্রীয় কমিটিতে জমা দেওয়া হয়। কিন্তু এতে নেতা-কর্মীদের সমর্থন বা মতামত নেওয়া হয়নি। প্রস্তাবিত এই কমিটিতে ঢাকায় বসবাসকারী একটি ব্যাংকের গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োজিত ফিরোজ আলমকে (জাপানী ফিরোজ নামে পরিচিত) দেওয়া হয়েছে সহ-সভাপতির পদ। ক্যাসিনো কান্ডে বহিস্কৃত কেন্দ্রীয় যুবলীগ নেতা প্রিন্স মহব্বত, জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মান্নানের ভগ্নিপতির যোগ্যতায় এক সময়ের বিএনপি নেতা আমিনুল ইসলাম সালাম, ঢাকার ব্যবসায়ী গাজী মহিবুর রহমান বাচ্চু ও বিএনপি পরিবারের সদস্য ঠিকাদার মহিউদ্দিন আহমেদকে করা হয়েছে সদস্য। তার বড় ভাই ঠিকাদার আজদের স্ত্রী জেলা জামায়াতের রোকন এবং তার চাচাত ভাই মনির হোসেন বিএনপি’র নেতা।
’৭৫ পরবর্তী জাগো দলের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা বনানীর কাঞ্চন মিয়ার ছেলে ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলাম চান মিয়াকে কোষাধ্যক্ষ পদ দেওয়া হয়েছে। তিনি কোনো দিনই আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। এমনকি তার আপন ছোট ভাই মনিরুল ইসলাম লিটন জেলা যুবদলের সভাপতি। ষাটের দশকে তুখোড় ছাত্রলীগ নেতা বঙ্গবন্ধু হত্যার পরে মামলা-হামলার শিকার জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক প্রয়াত আব্দুর রশিদ বাদলের মেয়ে মাকসুদা লাইজু দলীয় কর্মকান্ডে সক্রিয় থাকলেও তাকে কোনো পদ দেওয়া হয়নি। অথচ কখনও দলীয় কর্মসূচিতে না থাকলেও বিশেষ কারণে মারুফা আক্তার মণিকে দেওয়া হয়েছে মহিলা বিষয়ক সম্পাদকের পদ।
বাউফলের রাজনীতিতে ডিগ বাজি খাওয়া এস এম ইউসুফ ও এডভোকেট ওবায়দুলের আওয়ামী রাজনীতিতে কোনো ভূমিকা না থাকলেও পদ পেয়েছেন তারা। প্রস্তাবিত এই কমিটিতে ঠিকাদার গিয়াস উদ্দিনকে সদস্য করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে জঙ্গি সম্পৃক্ততা এবং বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় এলজিইডি, পানি উন্নয়ন বোর্ডে দোর্দন্ড প্রতাপের সঙ্গে ঠিকাদারী ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করার অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া ঠিকাদার বালি মিজান, মনিরুজ্জামান লিটু, মিজানুর রহমান, আনিসুর রহমান, রাহানুল হক (নাক সুমন), কামাল ও আল আমিন শিকদারকে জেলা কমিটির সদস্য পদ দেওয়া হয়েছে। এদের বেশির ভাগের বিরুদ্ধে দখল ও চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া কয়েক জনের বিরুদ্ধে আছে চরম নেশায় আসক্ত থাকার অভিযোগও।
অথচ আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় থাকা এবং দুর্দিনের কান্ডারি, ত্যাগী নেতা-কর্মীদের প্রস্তাবিত জেলা কমিটিতে জায়গা দেওয়া হয়নি। সংশ্লিষ্টরা জানান, ১৯৬৯ সালের পটুয়াখালী সরকারি কলেজের ভিপি (প্রথম) ও পরবর্তীতে জেলা কমিটিতে থেকে রাজনীতিতে বিশেষ
ভ‚মিকা রাখা আগের কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতি এডভোকেট নূরুল হক তালুকদার, ১৯৬৪ সালে পটুয়াখালী সরকারি কলেজ ছাত্র সংসদে ছাত্রলীগের ভিপি পদে নির্বাচন করা থেকে অদ্যাবধি আওয়ামীলীগ ও বিপদে-আপদে সহায়তাকারী সক্রিয় কর্মী আমিনুল হক আহসান, শহরের আদালত পাড়ার প্রথম আওয়ামী লীগ কর্মী শিকদার মতিয়ার, ’৭৫ পরবর্তীতে যাদের বাড়িতে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম পরিচালিত হত সেই পরিবারের সদস্য ও ছাত্রলীগ, ওই সময়ে সংগ্রামে ২-১ জন নারী কর্মীদের মধ্যে সক্রিয় জেলা কমিটির সাবেক আইন বিষয়ক সম্পাদক এডভোকেট বিভারাণী সাহা, জেলা আওয়ামী লীগের আগের কমিটির স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক গোলাম মোস্তফা দুলাল, ষাটের দশকের তুখোড় ছাত্রলীগ নেতা জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্য তরুণ কুমার কুন্ডু এবং ২০০১ সালের নির্বাচন পরবর্তী বিএনপি সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলতাফ হোসেন চৌধুরী ও তার ক্যাডার বাহিনীর অবর্ণনীয় নির্যাতন-নিগৃহের শিকার দলের সক্রিয় কর্মী রুস্তুম আলী মোল্লা সহ অনেককে জেলা কমিটিতে স্থান দেওয়া হয়নি।

আরও খবর

Sponsered content