চট্টগ্রাম

পানির অভাবে হয়না বোরো আবাদ
পানির ভয়ে আবাদ হচ্ছেনা রবিশস্য

  প্রতিনিধি ২৭ মার্চ ২০২৩ , ৬:৫৬:০১ প্রিন্ট সংস্করণ


জাহাঙ্গীর লিটন লক্ষীপুর:

ৎল²ীপুর: খাদ্যশস্য উৎপাদন বাড়াতে দেশের সকল আবাদযোগ্য জমিকে চাষাবাদের আওতায় আনার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু ল²ীপুরের একটি অঞ্চলে আবাদযোগ্য প্রায় এক হাজার একর জমি পড়ে আছে অনাবাদিতে। শুধুমাত্র পানির কারণে কৃষকরা ওই জমিতে শস্য আবাদ করতে পারছে না। অন্যদিকে কৃষি বিভাগ বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিশাল এ জমির দিকে নজর দিচ্ছে না। ফলে ওই এলাকায় বাড়ানো যাচ্ছে না খাদ্য শস্য উৎপাদন।
আবাদযোগ্য এসব জমির অবস্থান ল²ীপুর সদর উপজেলার কুশাখালী ইউনিয়নের পশ্চিম কাঠালী এবং উত্তর চিলাদী গ্রামে।
কৃষকরা জানায়, এ দুই গ্রামের ৪ থেকে ৫ টি ক্ষেতে (ডগী) অন্তত এক হাজার একরের বেশি আবাদযোগ্য জমি অনাবাদি পড়ে আছে। ওইসব জমিতে শুধুমাত্র আমন ধানের আবাদ হয়। বাকী দুই মৌসুমে কোন ফসল আবাদ করা যাচ্ছে না।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কুশাখালীর পশ্চিম কাঠালী গ্রামের ‘পশ্চিম ডগী’তে প্রায় ৫০০ একর জমি রয়েছে। এরমধ্যে সামান্য কিছু জমিতে সয়াবিন বা ডাল জাতীয় শস্যের আবাদ করা হয়েছে। তবে সিংহভাগ জমি অনাবাদি অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা গেছে। আবাদ না হওয়ায় জমির মাটি চলে যাচ্ছে ইটভাটাতে। ওই ক্ষেতের সয়াবিন চাষী আনোয়ার হোসেন বলেন, এ জমিগুলোতে পানি সেচ দেওয়ার কোন ব্যবস্থা নেই। আবার বৃষ্টি হলে পানি নামারও ব্যবস্থা থাকে না। তাই বেশিরভাগ জমি আবাদ করা হয়নি।
তিনি বলেন, এ ক্ষেতে আমার তিন একর জমি রয়েছে। কিছু জমিতে সয়াবিনের চাষাবাদ করেছি। তবে ভয়ে আছি, অসময়ে বৃষ্টি হলে ফসল নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
তিনি জানান, ক্ষেতের পূর্ব পাশ দিয়ে একটি খাল আছে, সেখানে পর্যাপ্ত পানি নেই। তবে কোন কোন কৃষক নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সেচ দিয়ে খালপাড়ের কিছু জমিতে বোরো ধানের আবাদ করেছে।
একই এলাকার কৃষক নুর মোহাম্মদ বলেন, আমাদের এলাকার বিস্তৃর্ণ জমি চলতি মৌসুমে অনাবাদি পড়ে আছে। জন্মের পর থেকেই দেখে আসছি, এসব জমিতে এক মৌসুমে ফসল হয়। বাকী মৌসুমে আবাদ হয়না। একদিকে জমিগুলোতে পানি সেচ দেওয়ার কোন ব্যবস্থা নেই। আবার বৃষ্টি হলে পানি আটকা থাকে। শুষ্ক মৌসুমে অনেক ক্ষেত মালিক জমির উপরিভাগের মাটি ইটভাটায় বিক্রি করে দেয়। এতে কিছু জমি উঁচু থাকে, আবার কিছু জমি নীচু হয়ে যায়।
রফিক উল্যা বলেন, আমার ৭৫ শতাংশ কৃষি জমি আছে। গেল মৌসুমে আমি সয়াবিনের আবাদ করেছি, অসমের বৃষ্টি সব নষ্ট হয়ে গেছে। তাই এবার সয়াবিনের আবাদ করিনি। সামান্য কিছু জমিতে ডালের আবাদ করেছি। তবে ফলন ঘরে তোলা নিয়ে ভয় আছে। আমার মতো সব কৃষক ফসলহানির আশঙ্কায় থাকে।
তিনি জানান, দিঘলী থেকে কাঠালী পোলের গোড়া পর্যন্ত সড়কের পশ্চিম পাশ দিয়ে ‘গবি উল্যা’ খাল রয়েছে। এটি ওয়াপদা খালের সংযোগ খাল। খালটি দীর্ঘ সময় ধরে খনন না করার কারণে বড়খাল থেকে পানি আসতে পারে না। আবার বর্ষা মৌসুমে খাল দিয়ে সহজে পানি নিষ্কাশন হতে পারে না। এ খালটি আমাদের এলাকার ফসল উৎপাদনে ব্যাপক ভূমিকা রাখতে পারে।
সেচ প্রকল্প স্থাপনের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, বিশ্বব্যাপী খাদ্য সংকটের কারনে আমাদের সরকার শস্য উৎপাদনে জন্য সকল জমি আবাদের আওতায় আনার নির্দেশ দিয়েছেন। ইচ্ছে থাকা স্বত্তেও আমরা জমিতে ধান বা রবিশস্য চাষাবাদ করতে পারছি না। তিন থেকে চার কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের খালটি খনন করে সরকারীভাবে এখানে সেচ প্রকল্প স্থাপন করলে এক থেকে দেড় হাজার একর জমি বোরো আবাদের আওতায় আসবে। সরকার যাতে এ জমিগুলোর দিকে নজর দেয়, আমি সে দাবি জানাচ্ছি।
একই কথা জানালেন স্থানীয় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুল মালেক। তিনি বলেন, আমাদের পরিবারের প্রায় একশ একর কৃষি জমি আছে। এতে শুধুমাত্র আমন ধানের চাষ হয়। কিন্তু ল²ীপুরের প্রায় সবখানে আমন ধানের পর সবজি, সয়াবিন, ডাল বা বোরো ধানের আবাদ হচ্ছে। কিন্তু আমাদের এলাকার জমিগুলোতে পানির অভাবে বোরো ধানের আবাদ করা যাচ্ছে না। আবার বৃষ্টি হলে পানি না নামার কারণে অসময়ে ক্ষেতে পানি জমে থাকে। এ কারণে সয়াবিন বা রবিশস্যের আবাদও করা যাচ্ছে না। বিএডিসি এবং কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে বিস্তৃর্ণ এ জমিগুলোর দিকে নজরদারি দিলে এ এলাকার কৃষকেরা সোনালী ফসল উৎপাদন করতে পারবে।
একই এলাকার কৃষক নুর আলম বলেন, বেশিভাগ জমি অনাবাদি পড়ে আছে। মোট জমির ১০ থেকে ২০ ভাগ জমিতে সয়াবিন বা ডালের আবাদ করলেও বিস্তৃর্ণ জমি খালি থাকায় গরু ছাগলে ক্ষেতের ফসল নষ্ট করে ফেলে। তাই রবি মৌসুমে কৃষকরা শস্য আবাদে অনাগ্রহ হয়ে পড়েছে।
অনাবাদি জমির বিষয়ে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) ল²ীপুর (সদর-রামগঞ্জ ইউনিট) এর উপসহকারী প্রকৌশলী আবদুল্লাহ আল মামুনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, যে এলাকার কৃষকরা সেচ প্রকল্প নিতে আগ্রহী হয়, ওইসব এলাকায় বিএডিসির পক্ষ থেকে খাল খনন এবং সেচ প্রকল্প নির্মাণ করে দেওয়া হয়। তবে কুশাখালীর ওই অঞ্চল থেকে কোন কৃষক আমাদের সাথে যোগাযোগ করেনি। সরেজমিন পরিদর্শন করে আগামী বোরো মৌসুমে অগ্রধিকার ভিত্তিতে সেখানে সেচ প্রকল্প দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হবে।
জেলার একটি এলাকায় বিস্তৃর্ণ আবাদযোগ্য জমি অনাবাদি থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে ল²ীপুর জেলা কৃষি স¤প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক ড. মো. জাকির হোসেন গণ্যমাধ্যকে জানান, আবাদযোগ্য জমি অনাবাদি থাকার বিষয়টি জানা ছিলো না। খোঁজ খবর নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানান তিনি।
উল্লেখ্য, গেল বছরের ১৩ সেপ্টেম্বর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রধানমন্ত্রী দেশের আবাদযোগ্য সব জমি আবাদের আওতায় আনার নির্দেশনা দিয়েছেন। এ সময় তিনি বলেন, ‘জমির সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। কোনো জমিই আবাদের বাইরে রাখা যাবে না।
এছাড়া গেল ৮ নভেম্বর একনেকসভায় প্রধানমন্ত্রী দেশের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অনাবাদি জমি খুঁজে বের করতে নির্দেশ দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী কেবিনেট সচিবকে একই নির্দেশা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ডিসিরা যেন অনাবাদি জমি খুঁজে বের করেন। জমিতে যেন উৎপাদন বাড়ানো হয়। ফেলে রাখা যাবে না এক ইঞ্চি জমিও। বিভিন্ন ফসলের চাষাবাদ করতে হবে জমিতে।

আরও খবর

Sponsered content