বাংলাদেশ

প্রধানমন্ত্রীর আর্থিক সহায়তা পেতে ঘুষ দিতে হয়েছে: টিআইবি

  প্রতিনিধি ১০ নভেম্বর ২০২০ , ৩:৫৯:৫৩ প্রিন্ট সংস্করণ

ভোরের দর্পণ ডেস্ক:

করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত আর্থিক সহায়তা পেতে ঘুষ দিতে হয়েছে উপকারভোগীকে। দুই হাজার ৫০০ টাকার নগদ সহায়তা পেতে দিতে হয়েছে ২২০ টাকা ঘুষ। আর সহায়তার তালিকাভূক্তিতে অনিয়ম ও দুর্নীতির শিকার হয়েছে ১২ শতাংশ মানুষ।

মঙ্গলবার (১০ নভেম্বর) ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) করোনা ভাইরাস সংকট মোকাবিলয়ায় চ্যালেঞ্জ: দ্বিতীয় পর্বের গবেষণা প্রতিবেদন’ প্রকাশের ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে এসব জানানো হয়।

প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন টিআইবির রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি বিভাগের ডেপুটি ম্যানেজার মো. জুলকারনাইন।

গবেষণায় সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির উপকারভোগীদের নগদ অর্থ প্রণোদনায় ও ওএমএস কার্ডর অনিয়মের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করে টিআইবি। এর মধ্যে দেশের ৩৫টি জেলার এক হাজার ৫০ জনের কাছ থেকে নগদ সহায়তার বিষয়ে এবং ৩২ জেলার ৯৬০ জনের মতামত নেওয়া হয়েছে ওএমএস কার্ডের অনিয়মের বিষয়ে।

চলতি বছরের ১৬ জুন থেকে ৩১ অক্টোবর ২০২০ পর্যন্ত টিআইবির এ গবেষণা করে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জরিপে নগদ সহায়তা উপকারভোগীদের ১২ শতাংশ তালিকাভুক্ত হতে অনিয়ম ও দুর্নীতির শিকার হয়েছিল। অনিয়মের মধ্যে তালিকাভু্ক্ত করতে প্রভাবশালী সুপারিশ, বারবার অনুনয়-বিনয় ও তালিকাভুক্তির জন্য ঘুষ লেনদেনের ঘটনা রয়েছে।

অন্যদিকে জরিপে  ওএমএস প্রকল্পের ১০ টাকা কেজি দরে চল সহায়তায় পেতে ১০ শতাংশ উপকারভোগীকে দুর্নীতির শিকার হতে হয়েছে।

জরিপে নগদ সহায়তায় উপকারভোগীদের ৫৬ শতাংশ সহায়তা পেতে অনিয়ম ও দুর্নীতির শিকার হয়েছিল। এক্ষেত্রে অনিয়ম ও দুর্নীতির ধরনের মধ্যে তালিকায় নাম থাকা সত্ত্বেও এখনো টাকা না পাওয়া (৬৯ দশমিক শূন্য শতাংশ), মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্ট কর্তৃক কমিশন/ফি কেটে রাখা (২৬ দশমকি ৬ শতাংশ) ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। নগদ টাকা তুলতে মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্ট কমিশন/ফি বাবদ গড়ে ৬৮ দশমিক ২০ টাকা করে কেটে রাখে। এক প্রতিবেদন হতে জানা যায়, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কর্তৃক মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে নগদ অর্থ সহায়তা কর্মসূচির উপকারভোগীদের কাছ থেকে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা করে আদায় করা হয়।

জরিপে ওএমএস (চাল) সহায়তায় উপকারভোগীদের ১৫ দশমিক শূন্য শতাংশ চাল পেতে অনিয়ম ও দুর্নীতির শিকার হয়েছিল। এক্ষেত্রে অনিয়ম ও দুর্নীতির ধরনের মধ্যে ছিল, পরিমাণে কম দেওয়া (৩৬ দশমিক ৮ শতাংশ), তালিকায় নাম থাকা সত্ত্বেও চাল কিনতে না পারা (২০ দশমিক ৬ শতাংশ), ওজন না করে বালতিতে অনুমান করে চাল দেওয়া (১৯ দশমিক ৯ শতাংশ) ইত্যাদি।

নগদ সহায়তা কার্যক্রমে অনিয়ম-দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছে স্থানীয় সংসদ সদস্য, মেয়রসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা। বিশেষ ওএমএস (চাল) বিতরণ কার্যক্রমে অনিয়ম ও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের মধ্যে সংসদ সদস্য, মেয়র, ইউপি চেয়ারম্যান/মেম্বার/কাউন্সিলর (৬৫ দশমিক ৭ শতাংশ) ও স্থানীয় প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতার (৪০ দশমিক ১ শতাংশ) সম্পৃক্ততা ছিল বলে জানায় সুবিধাভোগীরা। করোনাকালীন যেসব জনপ্রতিনিধির বিরুদ্ধে দুনীতির প্রমাণ মিলেছে, তাদের ৯০ জনই ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত ছিল। একটি প্রতিবেদন হতে জানা যায়, দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সরাসরি ও হটলাইনের মাধ্যমে প্রতিনিয়ত জনপ্রতিনিধির বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয় যে, তারা প্রকৃত দুস্থদের বঞ্চিত করে করোনাকালে সরকারের দেওয়া ত্রাণ ও নগদ অর্থ সহায়তাসহ বিভিন্ন সামাজিক নিরাপত্তামূলক কর্মসূচির অর্থ আত্মসাৎ করেছেন।

করোনাকালীন মানবিক সহায়তা কার্যক্রমে অনিয়ম ও দুর্নীতি রোধে এ পর্যন্ত শতাধিক জনপ্রতিনিধিকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সাময়িক বরখাস্ত করে। তবে জনপ্রতিনিধিদের অনেকেই (অন্তত ৩০ জন) উচ্চ আদালতে রিটের মাধ্যমে স্বপদে ফিরে এসেছে। এর কারণ হিসেবে অনেকক্ষেত্রে আদালতে জোরালোভাবে তথ্য উপস্থাপন না করা, সরকারপক্ষের আইনজীবীর আদালতে উপস্থিত না হওয়া, আসামিপক্ষ বা বরখাস্ত চেয়ারম্যানদের পক্ষের আইনজীবীদের জোরালোভাবে বরখাস্তের বিরুদ্ধে তাদের অবস্থান তুলে ধরার পরিপ্রেক্ষিতে আদালত সরকারের বরখাস্ত আদেশ স্থগিত করে রায় দেয়।

সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রম প্রক্রিয়ায় অনিয়ম ও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত সাময়িক বরখাস্ত জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় তথ্য-প্রমাণসহ মামলা পরিচালনা করতে হবে। এসব জনপ্রতিনিধিদের পরবর্তী যেকোনো নির্বাচনে অংশ নেওয়ার যোগ্যতা বাতিল ঘোষণা করতে হবে।

অনুষ্ঠানে স্বাগত ও সমাপনী বক্তব্য দেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান।

আরও খবর

Sponsered content