প্রতিনিধি ৬ অক্টোবর ২০২০ , ১২:৫৫:২০ প্রিন্ট সংস্করণ
বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ রাব্বীকে নির্মম হত্যার এক বছর পূর্ণ হলো। এই লগ্নে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া আশ্বাসের কথা মনে করিয়ে দিলেন আবরারের মা রোকেয়া খাতুন।
গত বছরের ৬ অক্টোবর রাতে বুয়েটের শেরেবাংলা হলে আবরারকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় দেশব্যাপী নিন্দার ঝড় ওঠে। এর কিছুদিন পর গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন আবরারের বাবা-মা। তখন প্রধানমন্ত্রী তাদের আশ্বস্ত করেছিলেন, মায়ের আসন থেকে আবরার হত্যার বিচার করবেন। সেই আশ্বাসেই আছে আবরারের পরিবার।
সোমবার (৫ অক্টোবর) মুঠোফোনে আলাপকালে একথায় জানান আবরারের মা রোকেয়া খাতুন।
তিনি বলেন, ‘আমরা যেদিন গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাৎ করি সেদিন তিনি আমাদের বলেছিলেন, আপনারা যেন সুষ্ঠু বিচার পান সেই ব্যবস্থা করবো। ’ মায়ের আসন থেকে আবরার হত্যার বিচার করার আশ্বাস দেন তিনি।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে রোকেয়া খাতুন বলেন, ‘এক বছর হয়ে গেল আবরারকে হারিয়েছি। যারা আমার ছেলে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করেছে আমি তাদের ফাঁসি চাই। সন্তান হারিয়ে আমি কি কষ্ট পাচ্ছি ঘাতকদের মায়েরা তা বুঝুক।’
তিনি বলেন, ‘গত বছর এ সময় সে আমার কাছে ছিল। ৫ অক্টোবর ঢাকা যায়। হলে পৌঁছে আমাকে ফোন দেয়। তাকে খেয়ে নিতে বলি। ১১ টার দিকে আমি তাকে ফোন দেই। তখন সে ফোন ধরে না। ছোট ছেলে আবরার ফায়াজকে বলি দেখতো তোর ভাইয়া ফোন ধরছে না কেন। তখন সে আমাকে বলে, আম্মু ভাইয়া ফেসবুকে এ্যাকটিভ আছে। এরপর আমি ঘুমিয়ে পড়ি। সকালে আমাকে ফোন দিয়ে আবরারের মৃত্যুর খবর জানানো হয়। এরপর বুঝেছি ওই ছেলেরা তার ফেসবুক, মোবাইল চেক করতেছিল। কি নিষ্ঠুরভাবেই না তাকে মেরেছে, সেটা তো সবাই জানে। এদের ফাঁসি হওয়া উচিত। বুয়েট ওদের বহিষ্কার করেছে। এরা যদি বের হয়ে আসে তখন এরা কি করবে। সন্ত্রাস করবে, মানুষ খুন করবে।’
আবরারের ছোট ভাই ফায়াজ আবরারের মতো মেধাবী। মা তাকে নিজের কাছে রেখেই পড়াশোনা করাতে চান। শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠে পড়ানোর ইচ্ছা তার নেই। তিনি বলেন, বড় ছেলেকে হারিয়েছি। ওই আমাদের এখন অবলম্বন। ওকে হারাতে চাই না। ওর বেঁচে থাকাটা আমাদের কাছে সবচেয়ে বড়।
এদিকে ছেলে হত্যার বিচার পেতে কুষ্টিয়া থেকে বর্তমানে ঢাকায় অবস্থান করছেন আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ। তিনি বলেন, ছেলেটাকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করেছে। এটা একটা অমানবিক, গর্হিত কাজ। সভ্য জগতে এ ধরনের ঘটনা বিরল। অন্ধকার জগতে এ ধরনের ঘটনা ঘটতো।
বরকত উল্লাহ বলেন, ‘করোনার কারণে মামলার বিচার পিছিয়ে গেল। এর জন্য কিছু করার ছিল না। করোনার প্রভাব না পড়লে মামলাটির বিচার শেষ হয়ে যেতো। এখন আর যেন বিচারটা বিলম্ব না নয় সেই প্রত্যাশা করছি। আশা করছি, দ্রুততার সঙ্গে মামলার বিচার শেষে রায় হবে এবং আসামিদের সর্বোচ্চ সাজা হবে। দৃষ্টান্তমূলক সাজা হলে পরবর্তীতে আর কেউ এমন নৃশংসকাজ করার সাহস পাবে না।’
এদিকে সোমবার (৫ অক্টোবর) ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামানের আদালতে মামলাটিতে সাক্ষ্য দেওয়া শুরু করেছেন আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ। আদালতে তিনি বলেন, ‘আসামিরা পূর্বপরিকল্পিতভাবে আমার ছেলেকে হত্যা করেছে। আমি ন্যায়বিচার চাই।’
গত বছরের ৬ অক্টোবর রাতে বুয়েটের শেরেবাংলা হলের দ্বিতীয় তলার সিঁড়ি থেকে অচেতন অবস্থায় আবরার ফাহাদকে উদ্ধার করা হয়। দ্রুত তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। ওই রাতে হলের ২০১১ নম্বর কক্ষে আবরার ফাহাদকে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা পিটিয়ে হত্যা করেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে।
এ ঘটনায় ১৯ জনকে আসামি করে পরের দিন ৭ অক্টোবর চকবাজার থানায় একটি হত্যা মামলা করেন আবরার ফাহাদের বাবা বরকত উল্লাহ। গত বছরের ১৩ নভেম্বর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক (নিরস্ত্র) মো. ওয়াহিদুজ্জামান ২৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। গত ১৫ সেপ্টেম্বর ২৫ আসামির বিরুদ্ধে চার্জগঠন করেন আদালত।
আবরার বুয়েটের তড়িৎ প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের (১৭ ব্যাচ) শিক্ষার্থী ছিলেন।