প্রতিনিধি ২৬ অক্টোবর ২০২০ , ১১:০৩:৩২ প্রিন্ট সংস্করণ
প্রেমের প্রস্তাবে রাজি না হলে যৌন হয়রানি করছে, দিচ্ছে ধর্ষণের হুমকি। নিজ বিভাগের সহপাঠীদের বিরুদ্ধে এমন গুরুতর অভিযোগ তুলেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের বেশ কয়েকজন ছাত্রী। তাদেরই সহপাঠী তিন শিক্ষার্থীর নেতৃত্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘গ্যাং কালচার’ গড়ে তোলার অভিযোগ উঠেছে। যারা ক্যাম্পাসে যৌন হয়রানি, ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপকর্ম করে। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও পুলিশ।
কোভিড-১৯ সব কোলাহল থামিয়ে দিয়েছে। কলাভবন কিংবা সামাজিকবিজ্ঞান ভবনের সামনে এখন সুনসান নীরবতা। তবে একদল ছাত্রী নীরবতা ভেঙে তাদের সঙ্গে হওয়া যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে সোচ্চার। বেশ কয়েকজন নিজ বিভাগ, প্রক্টর অফিস, কেউ কেউ আবার থানায় অভিযোগ দিয়েছেন। নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে ক্যামেরার সামনে কথা না বললেও মোবাইল ফোনে জানালেন তাদের অভিযোগের কথা।
ভুক্তভোগী এক ছাত্রী জানান, রবিন নামে এক ছেলে সম্পর্ক করার জন্য প্রস্তাব দেয়। প্রত্যাখ্যান করার কারণে সে আর পল্লব মিলে সবসময় জোর করত। ফোনে ক্যামেরা অন করে আমার সামনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ছবি তুলত। আমি মাথা নিচু করে রাখলেও ওভাবে ছবি তুলত। শরীরঘেঁষে চলাফেরা করত, হাতধরে ফেলত, ব্যাগ নিয়ে টানটানি করত। একটা সময় মনে হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের না পড়লেই ভালো হতো।
আরেক ছাত্রী জানান, উৎস প্রেমের প্রস্তাব দেয়, আমি সঙ্গে সঙ্গে প্রত্যাখ্যান করি। পরে পাবলিকলি মানুষের সঙ্গে বাজে মন্তব্য করত। পতিতা হিসেবে উল্লেখ্য করত।
ভুক্তভোগীদের বেশির ভাগই লোকপ্রশাসন বিভাগের ছাত্রী। তাদের অভিযোগের তীরও সহপাঠী একটি গ্রুপের বিরুদ্ধে। লোকপ্রশাসন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী পল্লব রানা, উৎস সরকার ও রবিন মাহমুদের নামই আসছে ঘুরে ফিরে। ভুক্তভোগীরা বলছেন, প্রেমের প্রস্তাবে রাজি না হলে তারা নানাভাবে হুমকি ও যৌন হয়রানি করেন। ধর্ষণের হুমকিও দেয়া হয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে পল্লব রানা তার বন্ধুদের ওপর দোষ চাপিয়ে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন। উৎস সরকার ও রবিন মাহমুদের মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
অভিযুক্ত পল্লব রানা বলেন, উৎস সরকার সরাসরি এসে ধর্ষণের হুমকি দেয়। আমি যাদেরকে চ্যাট করেছি; কাউকে হুমকি দেয়নি।
‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নিরাপত্তা মঞ্চ’ নামে, শিক্ষার্থীদের নানা সমস্যা ও আইনি সহায়তা নিয়ে কাজ করে বিশ্ববিদ্যালয়েরই একদল শিক্ষার্থী।
তারা বলছেন, শুধু তিনজন নয়। তাদের সংঘবদ্ধ একটি চক্র আছে যারা নানা ধরনের অপকর্মে জড়িত। ‘নিশাচর ২’ নামে একটি মেসেঞ্জার গ্রুপে অপরাধের পরিকল্পনা করে চক্রটি।
সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদের শাস্তি ও নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবি সাধারণ শিক্ষার্থীদের।
এক ছাত্রী জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো জায়গা হ্যারেজমেন্টের মুখোমুখি হব এটা আসলে প্রত্যাশা করতে পারি না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী বলেন, তিনজনের একটি তদন্ত কমিটি করতে বলা হয়েছে। দ্রুত সে কমিটি রিপোর্ট দিলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
হয়রানির শিকার হলেও লজ্জায় আরও অনেকে গ্যাংটির বিরুদ্ধে কথা বলছেন না বলে মনে করেন ভুক্তভোগীরা।