ঢাকা

বরফের দেশের টিউলিপ চাষ হচ্ছে শ্রীপুরে

  প্রতিনিধি ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১ , ৭:৩৫:০২ প্রিন্ট সংস্করণ

 এমদাদুল হক, শ্রীপুর (গাজীপুর) :

বাংলাদেশের আবহাওয়ায় দ্বিতীয়বারের মতো বরফের দেশের ফুল টিউলিপ ফোটাতে সক্ষম হয়েছেন ফুলচাষী দেলোয়ার হোসেন। প্রথমবার গবেষণামূলক টিউলিপ চাষের পর এ বছর পুরোটাই বাণিজ্যিকভাবে শুরু করেছেন। চলতি ফেব্রæয়ারী মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে তার বাগানে টিউলিপ ফুটতে থাকে। এখন প্রতিদিন তাঁর বাগানে টিউলিপ ফুটছে। প্রতিদিন দর্শণার্থীরা তার বাগানের টিউলিপ ফুল পরিদর্শন করতে আসছেন। কেউ ফুল কিনছেন আবার কেউ ছবি তোলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিচ্ছেন। চাষী দেলেয়োর হোসেন বলেন, ২০২০ সালে সর্বপ্রথম তাঁর বাগানে টিউলিপ ফোটে।

প্রথম বছর বাণিজ্যিকভাবে টিউলিপের চাষ করার কথা ভাবেননি। যখন তিনি ফুল ফোটাতে সক্ষম হয়েছেন তখন তিনি নিজেও অভিভূত হয়েছেন। সে বছর দর্শণার্থীদের জন্য তাঁর টিউলিপ বাগান উম্মুক্ত করে দেন। একটি ফুলও কারও কাছে বিক্রি করেননি। তিনি বলেন, তার বাগানে টিউলিপ ফুটেছে দেখে অন্যদের চেয়ে তিনিই বেশি খুশি হয়েছেন।

ফুল চাষ শুরুর কথা জানাতে গিয়ে তিনি বলেন, প্রায় ১৬ বছর আগে থেকে ফুল চাষ শুরু করেন। আর ২০১৯ সালের শেষদিকে নেদারল্যান্ডস থেকে টিউলিপ ফুলের এক হাজার বাল্ব (কন্দ) এনে রোপণ করেন। রোপনের ২২ দিনের মাথায় তার বাগানে টিউলিপ ফুল ফোটে। সেবছর তার বাগানে এমনকি দেশের মধ্যে বিরল প্রজাতির টিউলিপ ফুল ফোটে।

এ বছর বাণিজ্যিকভাবে টিউলিপের চাষ শুরু করেছেন। ২০ হাজার বাল্ব দেশের চুয়াডাঙ্গা ও ঠাকুরগাঁওসহ মোট তিনটি জায়গায় রোপন করেছেন। এবছরও টিউলিপ চাষকে গবেষণা পর্যায়ে রেখেছেন। বাণিজ্যিকভাবে ততটা বড় আকারে যাচ্ছেন না। আবহাওয়া এবং বিদেশ থেকে বাল্ব আনায় ট্যাক্সের প্রতিবন্ধকতা রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রতিটি বাল্ব নিয়ে আসতে সব মিলিয়ে সরকারকে ১৫ টাকা ট্যাক্স দিতে হয়। যার কারণে বড় আকারে এগুলো আনতে পারছেন না।

চুয়াডাঙ্গার জীবননগরে এক চাষীর মাধ্যমে তাঁর তত্বাবধানেই টিউলিপ বাগান করেছেন। ঠাকুরগাঁওয়ে অপর একজন চাষীর মাধ্যমে ৫ হাজার বাল্ব দিয়েছেন। শ্রীপুরসহ তিনটি জায়গাতেই এখন টিউলিপ ফুল ফোটছে। ঠাকুরগাঁওয়ের আবহাওয়া টিউলিপের জন্য বেশ ভাল বলে দাবী তাঁর। ফুল চাষী দেলোয়ার হোসেন বলেন, টিউলিপ গাছের ফলন ও ফোটার জন্য কমপক্ষে ৯ ডিগ্রী সেলসিয়াসের নিচে তাপমাত্রার প্রয়োজন। সেখানে আমাদের এলাকায় সর্বনিন্ম ১৩ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা থাকে। এর মধ্যেই স্বপ্নের এ ফুলটি ফোটেছে। অনেকে ৮০ টাকা পিস কিনে নিতে চেয়েছিলেন, বিক্রি করিনি।

দেশে ফলনে যেহেতু এবারই এবং আমার বাগানেই প্রথম সেহেতু, আমি বিক্রি করব না। অনেক দর্শণাথী এসে ফুলগুলো দেখছেন। এটি আমাদের অর্জন, দেখতে ভাল লাগে, মানুষ আসছে দেখার জন্য। এতেই আমাদের আনন্দ। ফুলটি না ফুটলে হয়তো এ আনন্দ আমি টাকা দিয়ে কিনতে পারতাম না। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের গাজীপুরের উপ-পরিচালক মাহবুব আলম বলেন, বাংলাদেশে টিউলিপ চাষ সফলভাবে করা সম্ভব। চাষী দেলোয়ার হোসেন তা করে দেখিয়েছেন।

বাংলাদেশের মাটিতে তিনিই প্রথম টিউলিপ ফুল ফোটালেন। সাধারণত বরফ প্রধান দেশসমূহে টিউলিপ ফুলের চাষ হয়। ইউরোপের দেশ সমূহে প্রচন্ড ঠান্ডা থাকায় সেসব দেশে টিউলিপের অহরহ চাষ হয়ে থাকে। দ্বিতীয়বারের মতো টিউলিপ ফুলের সফল চাষ করে চাষী দেলোয়ার হোসেন অবাক করে দিয়েছেন। ভবিষ্যতে বাংলাদেশ রপ্তানীযোগ্য পণ্য হিসেবে টিউলিপ ফুলের চাষ করতে পারবে।

আরও খবর

Sponsered content