আন্তর্জাতিক

বসনিয়ার জঙ্গলে মৃত্যুর মুখে বহু বাংলাদেশি, রয়েছেন বিদেশিরাও

  প্রতিনিধি ২৭ ডিসেম্বর ২০২০ , ১:৩১:৫৪ প্রিন্ট সংস্করণ

ভোরের দর্পণ ডেস্ক:

তাপমাত্রা হিমাঙ্কর নিচে। তুষারে ঢেকে গেছে বসনিয়ার সীমান্ত এলাকা। ঠাণ্ডা হাওয়ায় জেঁকে বসেছে শীত। বিপজ্জনক আবহওয়ায় বসনিয়া-ক্রোয়েশিয়ার সীমান্তবর্তী শহর ভেলিকা ক্লাদুসার একটি জঙ্গলে কয়েক মাস ধরে অবরুদ্ধ হাজারো অভিবাসনপ্রত্যাশী। বাংলাদেশ, পাকিস্তানসহ মধ্যেপ্রাচ্য থেকে আসা কয়েক দেশের নাগরিক রয়েছেন। উন্নত জীবনের খোঁজে যারা অবৈধভাবে ইউরোপে প্রবেশের স্বপ্ন বুনছিলেন তাদের এক বেলা খাবারই জোটছে না। অনেকটা রাজনৈতিক মারপ্যাঁচে পড়ে গেছেন অভিবাসনপ্রত্যাশীরা। 

গত কয়েক দিন আগে বসনিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় অঞ্চলে অভিবাসীদের অস্থায়ী লিপা আশ্রয়শিবির আগুনে পুড়ে যাওয়ায় প্রবল তুষারপাতে খোলা আকাশের নিচেই কাটছে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের জীবন। শনিবার (২৬ ডিসেম্বর) থেকে আবহাওয়ার চরম অবনতিতে মৃত্যুর মুখে তারা। যাদের লক্ষ্য ছিল ক্রোয়েশিয়া হয়ে ইউরোপে প্রবেশ করা।

সঙ্গে থাকা কম্বল এবং ব্যাগের মধ্যে ঢুকেই তীব্র শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে আসা এক হাজারের মতো অভিবাসনপ্রত্যাশী। বিভিন্ন জায়গা থেকে যেই সামন্য খাবারটুকু সহায়তা হিসেবে আসছে তা খেয়েই কোনো রকম বেঁচে আছেন তারা।

বসনিয়া সরকারও তাদের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারছে না। এখানে প্রচণ্ড তুষারপাত হচ্ছে। তাপমাত্রা প্রতিনিয়ত কমছে। শীত নিবারণের জন্য কোনো ধরনের সুযোগ-সুবিধা নেই। এক টুইটবার্তায় এমনটাই বলছিলেন বসনিয়ার আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার প্রধান পিটার ভন দুর অরায়ের্ট।  তিনি আরও যোগ করেন, জীবনযুদ্ধে এভাবে বেঁচে থাকা সম্ভব নয়। অভিবাসনপ্রত্যাশীদের জীবন বাঁচাতে সাহসী রাজনৈতিক পদক্ষেপ জরুরি।

পশ্চিম ইউরোপে পৌঁছানোর প্রত্যাশায় হাজারো অভিবাসীর পক্ষে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে বসনিয়া। বেশির ভাগ বসনিয়ার উত্তর-পশ্চিম ক্রাজিনা অঞ্চলে আটকে আছেন। কারণ জাতিগতভাবে বিভক্ত জাতিটির অন্যান্য অঞ্চল অভিবাসীদের দায়িত্ব নিতে চাইছে না।

ঠাণ্ডায় অভিবাসীদের মানবেতর অবস্থা হবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) বসনিয়াকে সতর্ক করেছে আগেই। রাজনীতিবিদদের একটি ঐকমত্যে আসারও আহ্বান জানানো হয়। তবে তারা কোনো ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারেননি এখনো।

জীবন ‘পশুর’ মতো:  

শনিবার বসনিয়ার আন্তর্জাতিক রেডক্রসের একটি দল বিপর্যস্ত অভিবাসীদের পানি এবং কিছু ত্রাণ সহায়তা দিয়েছে। খাবার বিতরণে সহযোগিতা করে সেখানে থাকা দায়িত্বরত পুলিশ।

এক পাকিস্তানি অভিবাসনপ্রত্যাশী কাছিম বলেন, ‘আমারা এখানে পশুর মতো জীবনযাপন করছি। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে একটা পশু আমাদের থেকে ভালোভাবে বেঁচে থাকে। আমারা যদিও এখন সাহায্য না পাই এখানে মৃত্যু অবধারিত। দয়া করে আমাদের বাঁচান।’

আরেকজন জানান, ‘তিন দিন ধরে আমাদের কম্বল নেই, ঘুমানোর জায়গা নেই। সবকিছু নষ্ট হয়ে গেছে। আশ্রয়শিবিরের ভেতরে তুষার পড়ছে। এভাবে চলতে থাকলে আমরা সবাই মারা যাব।’

তাদের পুনর্বাসনের জন্য বসনিয়া ও হার্জেগোভিনায়ার বিহাক শহরের মধ্যাঞ্চলের এলাকা বেছে নেওয়া হয়েছিল, তবে সেখানকার স্থানীয় বাসিন্দারা এর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করলে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের সেখানে নেওয়া সম্ভব হয়নি।

বিভিন্ন সূত্র বলছে, ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে এ বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মানব পাচারকারী চক্রের খপ্পরে পড়ে অন্তত দেড় হাজার বাংলাদেশি ইতালি যাওয়ার উদ্দেশে বলকানের চার দেশে পৌঁছান। এদের মধ্যে অন্তত এক হাজার ৩০০ বাংলাদেশি গেছেন বসনিয়ায়। আর ক্রোয়েশিয়া সীমান্তবর্তী বসনিয়ার জঙ্গলসহ আশপাশে অভিবাসীদের উপস্থিতির কথা বলা হচ্ছে, তাদের বড় অংশই বাংলাদেশের নাগরিক।

সমুদ্রপথে অবৈধভাবে ইউরোপে যাওয়া গত কয়েক বছর ধরে বিপজ্জনক হয়ে উঠায় এখন স্থলপথ বেছে নিচ্ছেন অনেকে। দালাদের খপ্পরে পড়ে অনেকে সীমান্ত হয়ে ইউরোপ ঢোকার চেষ্টা চালান। এর মধ্যে বসনিয়া হয়ে ক্রোয়েশিয়ার প্রবেশের অন্যতম একটি পথ। কিন্তু ক্রোয়েশিয়া সরকার সীমান্তজুড়ে কঠোর নজরদারির আওতায় আনায় ইউরোপে প্রবেশে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সীমান্তরক্ষীদের নির্মম নির্যাতনের মুখে পড়ছে অভিবাসনপ্রত্যাশীরা।

স্বত্ব: ভয়েস অব আমেরিকা

আরও খবর

Sponsered content