প্রতিনিধি ২৯ মে ২০২৪ , ৫:৩৭:০৯ প্রিন্ট সংস্করণ
মুসলিম সম্প্রদায়ের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব আসন্ন ঈদুল আযহা কে সামনে রেখে খামারিদের মাঝে চলছে ব্যাপক প্রস্তুতি। চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার একটি পৌরসভাসহ ১৪টি ইউনিয়নে খামারিরা তাদের গরু-ছাগল কোরবানির জন্য প্রস্তুতে এখন ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন।
উপজেলার ছোট বড় মিলে দুগ্ধজাত খামার ছাড়া দুই শতাধিক খামারি প্রায় ৬২ হাজার কোরবানির গবাদিপশু প্রস্তুত করেছে আসন্ন কোরবানির জন্য। কোনো রকম রাসায়নিক খাবারের পরিবর্তে খামারের পশুগুলোকে প্রাকৃতিক খাবার ভুসি, খৈল ও ঘাস খাইয়েই মোটাতাজা করা হচ্ছে বলে দাবি করেন খামারিরা।
বাঁশখালী উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর এই উপজেলায় কোরবানির জন্য পশুর চাহিদা রয়েছে প্রায় ৪৬ হাজারের মতো। কিন্তু খামারিরা প্রস্তুত করেছেন প্রায় ৬২ হাজারের মতো পশু, যা চাহিদার চেয়ে পনেরো হাজারেরও বেশি। তাই, এবার উপজেলার চাহিদা মিটিয়ে পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন অঞ্চলে বাঁশখালীর খামারিদের প্রস্তুত করা পশু সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
সূত্রটি আরও জানায়, বাঁশখালী উপজেলায় গরু মোটাতাজাকরণ খামার রয়েছে ৬৩টি, ছাগলের খামার রয়েছে ১২৫টি ও ভেড়ার খামার রয়েছে ৩০টি। এ ছাড়াও উপজেলার গ্রাম-গঞ্জে প্রায় বাড়িতেই রয়েছে ৮ থেকে ১০টি করে বিক্রির উপযুক্ত গরু ও ছাগল। এ বছর কোরবানির ঈদে বিক্রির উপযোগী গরুর সংখ্যা ৪১ হাজার ৯শ, মহিষ ৫ হাজার ৪শ, ছাগল ১০ হাজার ৩শ, ভেড়ার সংখ্যা ৪ হাজার ২শ। বাঁশখালী উপজেলায় কোরবানির জন্য যে পরিমাণ পশু রয়েছে তাতে চাহিদা মিটিয়ে প্রায় ১৬ হাজারের অধিক পশু উদ্বৃত্ত থাকবে।
খামারিদের সাথে কথা বললে তারা জানান, আর কয়েকদিন পরই পুরোদমে শুরু হবে কোরবানির পশু কেনা-বেচা। তাই আগাম প্রস্তুতি হিসেবে পশুর পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। যে পরিমাণ দেশি গরু ও ছাগল প্রস্তুত করা হয়েছে, এগুলো দিয়েই বাঁশখালী উপজেলার মানুষের কোরবানির চাহিদা মেটানো সম্ভব। খামারিরা আরও জানান, আসন্ন ঈদুল আযহা উপলক্ষ্যে পর্যাপ্ত দেশি জাতের গরু ও ছাগল পালন করা হয়েছে।
গরুকে খাবার হিসেবে কাঁচা ঘাস, খৈল, ভুট্টা এবং ধানের কুড়াসহ প্রাকৃতিক খাবার খাওয়ানো হচ্ছে। পশুখাদ্যের দাম বেশি হওয়ায় গরু পালনে খরচ অনেকটা বেড়েছে। উপজেলার পূর্ব গুনাগরির এম.এম এগ্রো’র মালিক ফরহাদুল ইসলাম জানান, ‘কোরবানির জন্য পালন করা ৬০টি গরু ভাল দাম পেয়ে গত একমাস আগে বিক্রি করে দিয়েছি। বর্তমানে ৮ থেকে ১০ টি দুগ্ধজাত গাভি আছে। দু’একদিন পর কোরবানির জন্য আবারো গরু তুলবো খামারে।
শীলকূপের মাইজপাড়া এলাকার তৌহিদুল ইসলাম বলেন,’বর্তমানে বিক্রির উপযোগী আমার ৩টি গরু আছে। যার মূল্য হাঁকিয়েছে ১৩ লক্ষ টাকা। আরো ভাল দাম পেলে বিক্রি করে দিবো।’ সরলের কাহারঘোনা এলাকার আল্লাহ্ মালিক ফার্মের স্বত্বাধিকারী মো. জমির উদ্দিন বলেন, ‘আমার ফার্মে ৩০টি গাভি আছে। মূলত আমারটা দুগ্ধজাত খামার। প্রতিদিনই ১৫০ লিটার দুধ বিক্রি করি।’ আরো বেশকয়েকজন খামারিদের সাথে কথা হয়।
তারা জানান, শেষ মুহূর্তে বাজারে ভারতীয় গরু চলে আসলে আমাদের পথে বসা ছাড়া উপায় থাকবে না, লোকসানে পড়তে হবে। তাই সরকারের কাছে আমাদের আকুল আবেদন থাকবে ভারতীয় গরু যাতে প্রবেশ করতে না পারে সেই বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার। খামারিরা আরো বলেন,এবার পশুর সঠিক দাম পেলে আগামীতে গরুর খামার আরো বাড়বে।
‘বাঁশখালী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. সুপন নন্দী বলেন, ‘এবার বাঁশখালী উপজেলায় গরু ছাগল রয়েছে চাহিদার তুলনায় অনেক বেশি। আমাদের ভেটেরিনারি মেডিকেল টিম প্রতিনিয়ত খামারিদের নানাভাবে পরামর্শ ও সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। কোনো প্রকার রাসায়নিক খাবার ছাড়া সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক দানাদার খাবার, কাঁচা ঘাস এসবই খাওয়ানো হচ্ছে।
উপজেলায় এবার ৪৬ হাজার পশু কোরবানির চাহিদা আছে। তার বিপরীতে এবার পশু রয়েছে প্রায় ৬২ হাজার। উদ্বৃত্ত থাকবে ১৬ হাজারের মতো গবাদি পশু। আমার এখানে ৩০০ থেকে ৮০০শ কেজি ওজনের পর্যন্ত গরু রয়েছে। আশা করছি এ বছর খামারিরা ভাল দাম পাবে।’