প্রতিনিধি ৯ নভেম্বর ২০২০ , ১১:৩৮:৫৭ প্রিন্ট সংস্করণ
ভোরের দর্পণ ডেস্ক:
প্রাথমিক ফলাফলে যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন ডেমোক্রেট দলীয় প্রার্থী জো বাইডেন। তার জয়ে স্বস্তি ফিরেছে গোটা বিশ্বেই। এতে খুশি বাংলাদেশিরাও। বিশেষত দেশটিতে অধ্যয়নরত বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা ‘মুক্তি পাচ্ছেন’ বলে মনে করছেন। বাইডেনের জয়ের ফলে তারা সব ধরনের ভোগান্তি এবং অনিশ্চয়তা থেকে মুক্তি পাবেন বলে আশা করছেন। এমনকি দেশটিতে কর্মরত বাংলাদেশিরাও ফেলছেন স্বস্তির নিঃশ্বাস।
যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত একাধিক বাংলাদেশির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমল শুধু বাংলাদেশেরই নয়, বিশ্বের অধিকাংশ দেশের শিক্ষার্থীদের জন্য ছিল এক ধরনের বিভীষিকা। ইচ্ছা হলেও তারা কিছু করতে পারছিলেন না, বলার সুযোগও ছিল না। করোনা পরিস্থিতিতে তাদেরকে আরও কঠিন অবস্থার মধ্যে পড়তে হয়েছে। এ অবস্থায় কী করবেন ভেবে পাচ্ছিলেন না অনেকে, কারোর নিকট থেকে কার্যকর সমাধান বা পরামর্শও পাচ্ছিলেন না।
দেশটিতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরতরাও স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন বাইডেনের জয়ে। তারা বলছেন, ডেমোক্রেটরা ক্ষমতায় ফেরায় স্বস্তি ফিরেছে বাংলাদেশিদের মধ্যে। একটি শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা থেকে মুক্তি মিলছে। এখন বাইডেন সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করলে তারা কিছু অমিমাংসিত বিষয় থেকে মুক্তি পাবেন বলে আশা করছেন। তাদের মতে, এবার বাইডেনের জয়ের চেয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের পরাজয়টা তাদের কাছে বেশি খুশির খবর।
পিএইচডি গবেষণার কাজে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত বাংলাদেশি শিক্ষার্থী খায়রুল ইসলাম দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘এতদিন আমাদের বেশ কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়েই যেতে হয়েছে। চাইলেও অনেক কিছু করা যেত না। তবে জো বাইডেন অভিবাসী বান্ধব। যদিও পরবর্তীতে কী ঘটতে যাচ্ছে তা বলা কঠিন। তবে আমাদের মধ্যে স্বস্তি ফিরেছে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। শুধু বাংলাদেশি কিংবা বিদেশী শিক্ষার্থীরাই নয়, আমেরিকানরাও কঠিন পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেতে যাচ্ছেন।’
শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, করোনাকালে বিদেশি শিক্ষার্থীদেরকে অনলাইনে ক্লাস করানোর নির্দেশনা দিয়েছিলেন ট্রাম্প। অবশ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো থেকে এর তীব্র বিরোধীতা করা হয়। পরে আদালত এ নির্দেশনা বাতিল করে দেন। এতে কিছুটা স্বস্তি ফিরে আসে। তবে বিদেশীদের নিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিপরীতমুখী অবস্থান অব্যাহত থাকায় তাদের অনিশ্চয়তা মোটেও কাটছিল না। এখন সে অবস্থা থেকে মুক্তি পথ তৈরি হবে বলে তারা আশা প্রকাশ করেন।
নির্বাচনের আগে থেকেই সেখানকার সার্বিক পরিস্থিতির দিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত একজন বাংলাদেশি গবেষক। তিনি দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেছিলেন, ‘এবারের নির্বাচন নিয়ে বাংলাদেশি সবাই বেশ উদ্বিগ্ন ছিলেন। বাইডেনের জয় হলে সবার মধ্যে একটু স্বস্তি ফিরবে।’ তবে তিনি একথা যখন বলছিলেন, তখনও জো বাইডেনের জয় নিশ্চিত হয়নি, তবে ইলেকটোরাল ভোট বেশি বেশি পেয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের তুলনায় এগিয়ে ছিলেন তিনি।
জো বাইডেনের জয়ের পর গুগলে কর্মরত বাংলাদেশি জাহিদ সবুর ফেসবুকে লিখেছেন, ‘২০০৭ সালে গুগলে চাকরি পাওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্র আমার আরেকটি বাড়ির মতো। আমি ভদ্রতা, উদারতা, ন্যায়পরায়ণতায় আকর্ষণেই এখানে এসেছি। তবে চার বছর আগে মনে হচ্ছিল যুক্তরাষ্ট্র তা হারিয়েছে। এখন আমার আবার মনে হচ্ছে, আমি আবার সেই বাড়ি ফিরে পেয়েছি, যুক্তরাষ্ট্রও এসব ফিরে পেয়েছে।’
নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটি স্কুল অব মেডিসিনের সিনিয়র সাইন্টিষ্ট ড. জাহিদ দেওয়ান শামীম দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘এবার পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছিল যে, সবার লক্ষ্য ছিল জো বাইডেনকে জয়ী করার চেয়ে ট্রাম্পকে পরাজিত করা। জো বাইডেন বাদে অন্য কেউ নির্বাচনে দাঁড়ালেও এবার জয়ী হতেন। ডোনাল্ড ট্রাম্প অর্থনীতির অনেক উন্নতি করেছেন সত্য, তবে অন্য সব জায়গাতেই পরিস্থিতি ছিল ভয়াবহ। তার পরাজয়ে শুধু যে অভিবাসীরা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছে সেটি নয়, যুক্তরাষ্ট্রের মানুষও মুক্তি পেয়েছে। সবমিলিয়ে, সবার জন্যই জো বাইডেনের জয় স্বস্তির।’
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান দলীয় ডোনাল্ড ট্রাম্পকে হারিয়ে জয়ী হয়েছেন ডেমোক্রেট দলীয় প্রার্থী জো বাইডেন। বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় সব গণমাধ্যম জানাচ্ছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ২৭০ ইলেক্টরালের লক্ষ্যমাত্রা পার হয়ে জয়ী হয়েছেন বাইডেন। ফক্স নিউজ জানিয়েছে, বাইডেন পেয়েছেন ২৯০ ইলেকটোরাল কলেজ ভোট। আর ডোনাল্ড ট্রাম্প পেয়েছেন ২১৪ ভোট।