দেশজুড়ে

বাউফলে বিলুপ্তির পথে ঐতিহ্যবাহী ডোঙ্গা 

  প্রতিনিধি ২৮ অক্টোবর ২০২৪ , ৩:৫৩:০৬ প্রিন্ট সংস্করণ

বাউফলে বিলুপ্তির পথে ঐতিহ্যবাহী ডোঙ্গা

কে যাসরে… ভাটির গাঙ বাইয়া.. আমার ভাইজানরে কইও  নাইর দিতো বলইলা…. তোরা কে যাস…. একসময়  গ্রামে নাইর(নতুন বধূ) নেওয়ার একটি ঐতিহ্যবাহী ও মন মাতানো দৃশ‍্য ছিল ডোঙ্গা।  ডিজিটাল যুগে আধুনিকতার ছোঁয়ায় হারিয়ে যাচ্ছে কৃষি প্রধান বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী অনেক কিছুই যার সাথে রয়েছে বীর বাঙ্গালীর চিরচেনা ইতিহাস ও সংস্কৃতি ।

গ্রামীণ ঐতিহ্যর সাথে এদেশের মানুষের রয়েছে গভীর মিতালি । কালের বিবর্তনে গ্রামীণ ঐতিহ্যর মধ‍্য বিলুপ্তির পথে মানব সভ্যতার সোনালী অতীত ঐতিহ্যবাহী তাল গাছের তৈরি ডোঙ্গা। নৌকার বিকল্প হিসেবে বেশ সমাদৃত ছিল এটি। গাছের আকার আকৃতির ভিত্তিতে একটি ডোঙ্গা ০৮ থেকে ১০ফিট লম্বা হত। বতর্মান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে এগুলো যেন শুধুই স্মৃতি ও ইতিহাস এমনটাই সরেজমিনে দেখা গেছে শিক্ষিত জনপদ খ‍্যাত পটুয়াখালী বাউফল উপজেলায়। অত্র উপজেলার  সদর ইউনিয়ন, মদনপুরা, নওমালা, চন্দ্রদ্বীপ, কালিশুরি, ধুলিয়া, কাছিপাড়া, আদাবাড়িয়া, সূর্যমনি, কালাইয়া ও বগার কৃষকদের বর্ষাকালের একমাত্র বাহন ছিল শখের ডোঙ্গা।  

চদ্রদ্বীপ ইউনিয়নের কৃষক মামুন বলেন,  ডোঙ্গা ও কলা গাছের ভ‍্যালাই একসময় আমাদের বর্ষাকালের ভরসা ছিল। আমার বাবা, দাদা ও এলাকায় শিংহভাগ কৃষকই ডোঙ্গায় করে ফসল কেটে ঘরে তুলে আনত। এখন আর সেই ডোঙ্গা তৈরির যন্ত্রপাতি ও কারিগর নেই।

এ বিষয়ে বাউফল সদর ইউনিয়নের কৃষক জেন্নাত আলী সিকদার বলেন, আমাদের বাপ-দাদারা গরু-মহিষ দিয়া আগে আল(হাল চাষ) করত এহোন আমরা ওই সময় কোলায় ডোঙ্গায় কইর‍্যা ভাত নেতাম  ধান দাইয়া(কেটে) বাড়ি আনতাম। তিনি আরও বলেন, টিউবওয়েল অনেক দূরে থাকায় অধিকাংশ গ্রামের মানুষ  এই ডোঙ্গায় করে খাবার পানি আনত।

কালাইয়ার কৃষক আবদুল লতিফ হাওলাদার জানান, আগে মানষে গরু-মহিষ দিয়া হাল চাষ করার সময় ডোঙ্গা ব‍্যবহার করত। ডোঙ্গায় করে বীজের কোচা নিত।

অধিকাংশ কৃষকের অভিমত  কালের বিবর্তনে হারিয়ে গেছে  মানব সভ্যতার সোনালী অতীত-ঐতিহ্য গ্রাম-বাংলার সেই চিরচেনা তাল গাছের তৈরি  ডোঙ্গা চালানোর  দৃশ্য। 

ডোঙ্গা এখন শুধুই স্মৃতি। এক সময় দেখা যেত সেই কাক ডাকা ভোরে কৃষকরা গরু ও কাঁধে লাঙল-জোয়াল নিয়ে বেরিয়ে যেত মাঠের জমিতে হালচাষ করার জন্য। বর্তমানে আধুনিকতার স্পর্শে ও বিজ্ঞানের নতুন নতুন আবিষ্কারের ফলে কৃষকদের জীবনে এসেছে নানা পরিবর্তন। আর সেই পরিবর্তনের ছোঁয়াও লেগেছে কৃষিতে। তাই আর সকালে কাঁধে লাঙল-জোয়াল নিয়ে মাঠে যেতে আর দেখা যায় না কৃষকদের।

এ বিষয়ে বাউফল সরকারি কলেজের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক মো. ইব্রাহিম খলিল জানান, আমরা ছোটবেলায় এটিতে চড়ে অনেক মজা করতাম।শহরের লোকদের কাছে অপরিচিত হলেও গ্রামের সিংহভাগ মানুষের কাছে ডোঙ্গা অনেকটাই পরিচিত। কিন্তু  ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে এটি শুধু স্মৃতি হিসেবেই রয়ে যাবে।

আরও খবর

Sponsered content