শিল্প-সাহিত্য

বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিম প্রয়াণের ১১ বছর পূর্ণ

  প্রতিনিধি ১২ সেপ্টেম্বর ২০২০ , ১:১১:৫৭ প্রিন্ট সংস্করণ

শিল্প-সাহিত্য ডেস্ক:

‘সখি কুঞ্জ সাজাও গো, আজ আমার প্রাণনাথ আসিতে পারে`, ‘বন্দে মায়া লাগাইছে, পিরিতি শিখাইছে, কিংবা ‘কোন মেস্তরী নাও বানাইলো কেমন দেখা যায়, ঝিলমিল ঝিলমিল করে রে ময়ুর পঙ্খী নাও’- অসংখ্য জনপ্রিয় গানের স্রষ্টা বাউল সম্রাট শাহ আবদুল করিম। এ গুণী সাধকের ১১ তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ।

 

একুশে পদকপ্রাপ্ত এই বাউল সম্রাট ২০০৯ সালের ১২ সেপ্টেম্বর ৯৩ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন।

তার জন্ম ১৯১৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার উজানধল গ্রামে অতি সাধারণ পরিবারে। মৃত্যুও এখানে। মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তিনি মানুষকে আনন্দ দেয়ার পাশাপাশি, সমাজ ও রাষ্ট্রের নানা অসংগতির কথা গানে গানে জানিয়ে গেছেন। মৃত্যুর পর সর্বস্তরে বিশেষ করে সাধারণের কাছে আরো বেশি জনপ্রিয় হয়ে উঠেন এই মরমী সাধক।

তার আফতাব সঙ্গীত, গণসঙ্গীত, কালনীর ঢেউ, ধলমেলা, ভাটির চিঠি, কালনীর কূলে ও শাহ আব্দুল করিম রচনা সমগ্র নামে জনপ্রিয় সব গানের বই আমাদের জন্য অমূল্য সম্পদ।

তাকে বলা হয়, সমাজ পরিবর্তনের চারণকবি।  গ্রামের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বাউলা গানে মেহনতী মানুষের অধিকার আদায়, প্রেম, বিরহ, স্রষ্টার সৃষ্টি দর্শন নিয়ে গান গাইতে গাইতে নিজেকে চিনিয়ে গেছেন তিনি।  পুরো ভাটি অঞ্চল ছাড়িয়ে তার নাম ছড়িয়ে পড়েছে বাংলা ভাষাভাষি সকল মানুষের কাছে। তিনি ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধকালে গণসংগীত গেয়ে গেয়ে মানুষকে দেশপ্রেমে উজ্জীবিত করেছেন।

কর্মের স্বীকৃতি হিসেবে অর্জন করেন একুশে পদক, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি সম্মাননা, সিটিসেল-চ্যানেল আই মিউজিক এ্যাওয়ার্ডসহ দেশ বিদেশের অসংখ্য পুরস্কার।

 

শাহ আবদুল করিমের স্মৃতি বিজড়িত নানা নিদর্শন, স্মারক, পদক ও বিভিন্ন সম্মাননা রাখার জন্য হয়েছে যাদুঘর। তবে তার নিজের হাতে প্রতিষ্ঠিত শাহ আব্দুল করিম সংগীতালয়টি আজো চালু করা যায়নি। বহু আশ্বাসের পরও কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হয়নি এখনো।

এদিকে বাউল সম্রাটের প্রয়াণ দিবসে এবার নেই কোনো কর্মসূচি। তবে উদীচী দিরাই উপজেলা শাখার আয়োজনে আজ (১২ সেপ্টেম্বর) রাতে গানে গানে ফেইসবুক লাইভে তাকে স্মরণ করা হবে।

শাহ আব্দুল করিম পরিষদ দিরাই শাখার সভাপতি আপেল মাহমুদ বলেন, শাহ আব্দুল করিমের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এবার কোনো কর্মসূচি নেই। বাউল সম্রাটের জন্ম অথবা মৃত্যুবার্ষিকীতে সরকারি কোনো উদ্যোগ থাকে না।

লালন সাঁইর মতো সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় শাহ আব্দুল করিমের জন্ম অথবা মৃত্যুবার্ষিকী পালন করার দাবি জানান তিনি।

শাহ আবুল করিম এর একমাত্র সন্তান শাহ নূর জালাল জানান, এবার করোনা পরিস্থিতির কারণে শাহ আব্দুল করিমের মৃত্যুবার্ষিকী নিয়ে কোন কর্মসূচি নেই । তবে তার নিজ বসত ভিটা উজানধলে শাহ্ আব্দুল করিমের বাড়ীতে পারিবারিক পরিমন্ডলে কিছু আয়োজন (মিলাদ-মাহফিল ও করিমগীতি পরিবেশনা) থাকছে আজ সন্ধ্যায়।

একাডেমিক কমপ্লেক্স ভবন নিয়ে জেলা প্রশাসক ও জেলা শিল্পকলা একাডেমির সভাপতি মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ জানান, বাউল শাহ আব্দুল করিম কমপ্লেক্স তৈরির প্রকল্প প্রস্তুত করে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।

‘আগে কী সুন্দর দিন কাটাইতাম, ‘গাড়ি চলে না চলে না, চলে না-রে গাড়ি চলে না, ‘গ্রামের নওজোয়ান হিন্দু-মুসলমান, মিলিয়া বাউলা গান, ঘাঁটু গান গাইতাম, ‘কেন পিরিতি বাড়াইলারে বন্ধু ছেড়ে যাইবা যদি,  ‘কেমনে ভুলিবো আমি বাঁচি না তারে ছাড়া, ‘আমি কূলহারা কলঙ্কিনী, ‘আমি বাংলা মায়ের ছেলেসহ অসংখ্য জনপ্রিয় গানে আর সুরে আমাদের মাঝে অনন্তকাল থাকবেন এই বাউল সম্রাট।

আরও খবর

Sponsered content