প্রতিনিধি ৭ ডিসেম্বর ২০২২ , ৮:১১:০৩ প্রিন্ট সংস্করণ
শাহ্ আলম ভূঁইয়া, নান্দাইল (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি:
ব্রিটিশ ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশন (বিবিসি) ২০২২ সালে বিশ্বের অনুপ্রেরণাদায়ী ও প্রভাবশালী ১০০ নারীর তালিকা প্রকাশ করেছে। এই তালিকায় মিউজিশিয়ান, ফার্স্ট লেডি, অভিনেত্রী, নারী অ্যাথলেট, সাংবাদিক, রাজনৈতিকবিদের মতো ব্যক্তিত্বদের নাম রয়েছে। ওই তালিকায় একমাত্র বাংলাদেশি হিসেবে সানজিদা ইসলাম (ছোঁয়া) নামে এক ছাত্রী স্থান পেয়েছেন।
সানজিদা ইসলাম ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার আচারগাঁও ইউনিয়নের ঝাউগড়া গ্রামের বাসিন্দা। তিনি ওই গ্রামের মো. আমিনুল ইসলাম ভূঁইয়া সোহেল ও মোছা. লিজা আক্তার দম্পতির একমাত্র মেয়ে। সানজিদা কিশোরগঞ্জের গুরুদয়াল সরকারি কলেজে ম্যানেজমেন্ট বিষয়ে সম্মান প্রথম বর্ষের পড়ছেন। নান্দাইল পাইলট বালিকা বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী থাকাকালীন তিনি তাঁর ছয় সাহসী সহপাঠিকে নিয়ে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ অন্দোলন গড়ে তুলে সাড়া ফেলেছিলেন।
চলতি বছর বিবিসির প্রভাবশালী নারীদের তালিকায় উঠে এসেছে নান্দাইলের সেই সানজিদা ইসলামের নাম। তাঁর আগে রয়েছে ভারতে প্রখ্যাত অভিনেত্রী প্রিয়াংকা চোপড়া জোনস। ওই তালিকায় রয়েছে ইউক্রেনের ফার্স্টলেডির নামও।
এ খবর পেয়ে গতকাল বুধবার বিকালের দিকে এ প্রতিবেদক সানজিদা ইসলামের বাড়িতে যান। সেখানে গিয়ে সানজিদাকে পাওয়া যায়। তিনি জানান, অষ্টম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় নান্দাইলের ওয়ার্ল্ড ভিশন এডিপির শিশু ফোরাম ঘাসফুলের সদস্য হয়েছিলেন। আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থাটি বাল্য বিবাহ প্রতিরোধ ও নারীর প্রতি সহিংস আচরণের কীভাবে প্রতিবাদ জানাতে হয় সে সম্পর্কে তিনিসহ তাঁর কয়েকজন সহপাঠি প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন। পরে দেখতে পান শ্রেণি কক্ষে তাঁর অনেক সহপাঠি অনুপস্থিত। খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন অনেকের বাল্য বিয়ে হয়ে গেছে। সানজিদা ভাবলেন এভাবে চলতে থাকলে তিনি একদিন সহপাঠি শূন্য হয়ে পড়বেন। তাই প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সহপাঠিদের সাথে নিয়ে ২০১৫ সালে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ আন্দোলন শুরু করলেন। এই আন্দোলন নান্দাইলের আনাচে-কানাছে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য ছয়জন সহপাঠিসহ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আবদুল খালেক, তৎকালীন নান্দাইল উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. হাফিজুর রহমান ও স্থানীয় কয়েকজন গণমাধ্যমকর্মীকে পাশে পেয়েছেন।
বাল্যবিবাহ প্রতিরোধের উদ্দীপনা পেয়েছেন মাকে দেখে। তাঁর মায়ের কম বয়সে বিয়ে হয়। এ কারণে তিনি নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগতেন। তিনি সেই উপলব্ধি করেছেন। সেটি তাঁকে বাল্য বিবাহ প্রতিরোধে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছেন।
সানজিদা জানান, স¤প্রতি বিবিসির এক নারী সাংবাদিক তাঁর সাথে কথা বলে স্কুলে ছাত্রী থাকাকালীন সময়ে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ আন্দোলনের খুঁটিনাটি জেনে নিয়েছেন। গত মঙ্গলবার তিনি জেনেছেন বিবিসির তালিকায় তাঁর নাম ছাপা হয়েছে। এ কারণে তিনি আনন্দিত। তাঁর মা লিজা আক্তার ও ছোটভাই সাদমান হাফিজ (লিখন) খুবই খুশি হয়েছে। খুশি প্রতিবেশীরাও। সানজিদা জানান, বিবিসির তালিকায় তাঁর নাম উঠলেও তিনি তাঁর ছয় সহপাঠির কথা ভুলেননি। লেখপড়ার কারণে একে অপরের সাথে তাঁরা বিচ্ছিন্ন হয়ে রয়েছেন। তাঁর সেই ছয় সহপাঠির নাম উল্লেখ করার জন্য সানজিদা এ প্রতিবেদককে অনুরোধ করেন। তাঁরা হচ্ছেন তুলি দেবনাথ, স্নেহা বর্মণ, লিজুয়ানা তাবাসসুম, জান্নাতুল ইসলাম, জীবননিসা খানম, জান্নাতুল আক্তার।
জানতে চাইলে নান্দাইল উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা মো. আবুল আহমেদ বলেন, এটা খুশির সংবাদ। এ ধরনের কর্মকান্ডে আমার কোন রকম সহযোগিতার প্রয়োজন হলে আমার পক্ষ থেকে করা হবে।