দেশজুড়ে

বিভক্তির বিরোধের অনলে জ্বলছে উপজেলা বিএনপি 

  প্রতিনিধি ১৪ জানুয়ারি ২০২৫ , ৭:৩৭:১৫ প্রিন্ট সংস্করণ

বিভক্তির বিরোধের অনলে জ্বলছে উপজেলা বিএনপি 

দলীয় অন্তকোন্দলে দুভাগে বিভক্ত হয়ে মাঠে রয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলা বিএনপির নেতাকর্মীরা। কেন্দ্রীয় কর্মসূচি পালনেও তাদের বিভক্তি হয়ে  পৃথক পৃথক কর্মসূচী পালন করতে দেখা যায়। এদিকে উপজেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটি রয়েছে দুইটি। একটি জেলা বিএনপির অনুমোদিত অপরটি সাবেক আহবায়ক বিলুপ্তি কমিটি। তারা উভয় তাদের নিজস্ব নেতাকর্মী ও সমর্থক নিয়ে কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে। এতে করে নির্বাচনী মাঠের পরিবেশ ধোঁয়াশা তৈরী হচ্ছে। দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে একপ্রকার অস্বস্তি দেখা দিচ্ছে। 

তবে দেশের চলমান পরিস্থিতিতে উপজেলা পর্যায়ে অন্যান্য রাজনৈতিক দলের বিচরণ না থাকলেও বিএনপির রাজনীতি সক্রিয় রয়েছে। এদিকে উপজেলা বিএনপির দুভাগের বিভক্তির বিষয়টি এতদিন প্রকাশ না পেলেও গত ১১ জানুয়ারীর পর তাদের দলীয় অন্তকোন্দলের বিষয়টি জনস্মুখে প্রকাশ পেয়েছে। এতে করে সাধারণ জনগণের মধ্যে আলোচনা ও সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে দাঁড়িয়েছে।  

জানা গেছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ (সদর-বিজয়নগর) নির্বাচনী আসন। সদর উপজেলা ভেঙে বিগত ২০১০ সালে বিজয়নগর উপজেলা যাত্রা শুরু হয়। নতুন উপজেলা ঘোষণা ও কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর থেকে তিতাস পূর্বাঞ্চল ( বিজয়নগর) উপজেলায় রাজনৈতিক নতুন ধারায় শুরু হয়। বিগত সরকারের আমলে আ.লীগের কমিটি জাকঝমকপূর্ণ ভাবে করলেও বিএনপি নানা কূল ও প্রতিকূলতার মাঝে কোন কমিটি কাউন্সিল করে আনুষ্ঠানিক ভাবে করতে পারেনি। কাউন্সিল ব্যতিত বিজয়নগর উপজেলা বিএনপির কমিটি গঠিত হয়ে রাজনৈকি কর্মকান্ড পরিচালিত হয়ে আসছে। উপজেলা হওয়ার ১৪ বছরের মধ্যে উপজেলা বিএনপির আনুষ্ঠানিক ভাবে কোন কমিটি গঠন হয়নি। এদিকে দলীয় কোন্দল থাকায় মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীরা পড়েছে দু-টানায়। এতে করে ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মধ্যে নিষ্কৃয়তা দেখা দিচ্ছে। বিজয়নগর উপজেলা বিএনপির সাবেক আহয়াবক জমির হোসেন দস্তগীর , সদস্য সচিব ইমাম হোসেনের কমিটি বিগত সময়ে আন্দোলন সংগ্রামে দৃশ্যমান ভূমিকা না থাকায় এবং  দলীয় কার্যক্রম নিষ্ক্রিয় থাকার কারণে ২০২৪ সালে ১৯ মার্চ বিলুপ্তি ঘোষণা করা হয় । এ কমিটি বিলুপ্তি ঘোষণার একদিন পর মহসীন আহমেদ ভূঞাকে আহবায়ক ও জাকির হোসেন শাহআলমকে সদস্য সচিব করে ৩১ সদস্য নতুন আহবায়ক কমিটি অনুমোদন করেন জেলা বিএনপি। এদিকে পূর্বের কমিটি বিলুপ্তি ঘোষণা করলেও তারা নিজেদের পদ পদবী ঠিক রেখে দলীয় কর্মকান্ড নিয়মিত ভাবে চালিয়ে যাচ্ছেন। 

এদিকে বিজয়নগর উপজেলা বিএনপির একাংশের আংশিক কমিটি আনুষ্ঠানিক ভাবে ঘোষণা করেছেন কেন্দ্রীয় বিএনপির অর্থনৈতিক বিষয়ক সম্পাদক ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া -৩(সদর-বিজয়নগর) আসনে ধানের শীষ প্রতীকের মনোনীয়ন প্রত্যাশী ইঞ্জিনিয়ার খালেদ হোসেন মাহবুব শ্যামল। গত ১১ জানুয়ারি বিকালে উপজেলার চম্পকনগর স্কুল এন্ড কলেজ মাঠে এক জনসমাবেশে কাউন্সিলের মাধ্যমে একাংশের মৌখিক ভাবে আংশিক কমিটির সভাপতি মো. জমির হোসেন দস্তগীর ও সাধারণ সম্পাদক এ্যাড. ইমাম হোসেন নাম ঘোষণা করেন। এসময় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি হাফিজুর রহমান মোল্লা কচি, সাবেক সাধারণ সম্পাদক জহিরুল হক খোকন, জেলা বিএনপির নেতা এবিএম মমিনুল হক, এ্যাড. গোলাম সারোয়ার খোকন, সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি এ্যাড তারিকুল ইসলাম রুমা সহ জেলা বিএনপির ও তার অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দ। এদিকে জেলা বিএনপির আহবায়ক এ্যাড. আব্দুল মান্নান ও সদস্য সচিব মো. সিরাজুল ইসলাম সিরাজ উক্ত সম্মেলন ও কাউন্সিলের উপস্থিত ছিলেন না। আংশিক কমিটি মৌখিক ভাবে হওয়ার তার কোন লিখিত অনুমোদন নেই। এ কমিটি প্রকাশের পর কমিটি নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় বিএনপির নেতাকর্মীদের নানা রকম আলোচনা ও সমালোচনা জন্ম দিয়েছে। এদিকে নতুন আহবায়ক কমিটি নিয়ে ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসে উপজেলা বিএনপির সাবেক নেতা কাজী রফিকুল ইসলাম লিখেন “বিজয়নগর বিএনপি রাজনৈতিক ভাবে অসুস্থ। জরুরী কবিরাজ ডাকা প্রয়োজন” 

উপজেলা বিএনপির আহবায়ক মো. মহসীন আহমেদ ভূঞা বলেন, সম্মেলন ও কমিটি সম্পর্কে আমরা জানি না। আমাদেরকে বলা হয় নাই। কমিটি হলেও তো কমিটির সিস্টেমে যাবে। এটা আমাদের বোধগম্য নয়।

বিজয়নগর উপজেলা বিএনপির আংশিক কমিটি গঠনের বিষয়ে জেলা বিএনপির সদস্য সচিব মো. সিরাজুল ইসলাম  সিরাজ গত সোমবার রাতে দলীয় প্যাডে তার  স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানান, ১১ জানুয়ারী বিজয়নগর উপজেলা বিএনপির তথাকথিত  সম্মেলনের কোন সাংগঠনিক ভিত্তি নেই। সম্পূর্ণটাই বিভ্রান্তিকর। পূর্বে ৩১ সদস্য বিশিষ্ট আহবায়ক কমিটি বিদ্যামান। সকল নেতাকর্মীদেরকে তথাকথিত সম্মেলনে বিভ্রান্তি না হওয়ার আহবান করেন।