প্রতিনিধি ২১ নভেম্বর ২০২০ , ৬:০১:৪৪ প্রিন্ট সংস্করণ
খায়রুল কবির, ব্রাহ্মণবাড়িয়া : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোতে দিন দিন বাড়ছে মাদক ব্যবসা ও মাদক সেবন। প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে করছে রমরমা ব্যবসা। জেলার সীমান্তবর্তী এলাকায় স্থানীয় প্রভাবশালী ও জনপ্রতিনিধিদের সহযোগিতায় চলছে রমরমা মাদকের ব্যবসা। করোনা মহামারীর সুযোগে যা আগে থেকে বেড়ে গেছে দিগুণ। জেলার কসবা, আখাউড়া ও বিজয়নগরের সীমান্তবর্তী এলাকার বেশ কয়েকটি গ্রামে চলছে এই ব্যবসা। আইন শৃংখলা বাহিনীকে ফাঁকি দিয়ে মেরাসানি, নোয়াবদি, নলগড়িয়া, সিংগারবিলসহ সীমান্তবর্তী গ্রামগুলো থেকে রীতিমত পাচার হচ্ছে গাঁজা, ফেন্সিডিল, ইয়াবা, স্কফ, বিদেশি মদ, বেয়ারসহ নানা প্রকার মাদকদ্রব্য। মাদক দ্রব্য চান্দুরা-আখাউড়া সড়ক, আখাউড়া-ব্রাহ্মণবাড়িয়া সড়ক হয়ে পৌঁছে যাচ্ছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সর্বত্র, ঢাকাসহ ছড়িয়ে পড়ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।
সরে জমিনে সিঙ্গারবিল ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামে ঘুরে দেখা যায় সেখানে মাদকের গডফাদার মামুন মেম্বারের দাপটে গ্রাম ছাড়া হয়েছে অনেক নিরীহ গ্রামবাসী। কেউ তার কথা না শুনলেই তাকে মাদকের মামলায় ফাঁসিয়ে দেয়ার অভিযোগও উঠেছে এলাকাবাসীর। তবে ভুক্তভোগী এলাকাবাসীর দাবী মাদক নির্মুলে প্রশাসন তৎপর নয়। এলাকাবাসী জানান, মামুন মেম্বারের ইশারায় কোনো কোনো সময় প্রভাবশালী মাদক কারবারীদের বাঁচাতে নিরীহদের ফাঁসাচ্ছে প্রশাসনও।
অভিযোগ অস্বীকার করে মামুন মেম্বার বলেন, “আমার পূর্বপুরুষ কেউ মাদকের সাথে জড়িত নয়, আমি চৌধুরী পরিবারের ছেলে, আমাদের পরিবারের একটা ঐতিহ্য আছে। যেহেতু আমি স্থানীয় মেম্বার সেহেতু এলাকাবাসী বিপদে পড়লে আমার কাছে আসলে আমি যাই। আপনি মাদক কারবারীদের জন্য নিরাপদ আশ্রয়স্থল, তাদেরকে আপনি তদবিরের মাধ্যমে মোটা অংকের টাকা নিয়ে ছাড়িয়ে আনেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, আমি কোন মাদক ব্যবসায়ীর জন্য তদবির করি না। কারো থেকে টাকাও নেই না।
অভিযোগ উঠেছে এ ব্যবসায় জড়িয়ে আছে বিজয়নগর উপজেলার অর্ধশতাধিক নারী পুরুষ। তার মধ্যে সিঙ্গারবিল ওসমান, সেন্টু, ফরইসলামসহ ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর শহেরর গোকর্ণঘাটের মনির হোসেনের স্ত্রী চম্পা বেগম, নুরু মিয়া, কাজল মিয়া এ ব্যবসায় জড়িত আছে বলে এলাকাবাসী জানান।
এ বিষয়ে “মাদকমুক্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়া চাই” সংগঠনের সভাপতি গোকর্ণঘাটের মাহফুজুর রহমান পুষ্প জানান, আমরা মাদকমুক্ত সমাজ চাই, মাদক এখন সমাজের আনাচে কানাছে ছড়িয়ে পড়েছে। নষ্ট হচ্ছে যুব সমাজ। তিনি মাদক নির্মূলে প্রশাসনের সঠিক পদক্ষেপের দাবী জানান।
অভিযুক্ত চম্পা বেগম বলেন, আমার স্বামী এক সময় নেশা করতো, তাকে অনেক চেষ্টা করেও নেশা থেকে ফিরিয়ে আনতে পারিনি তাই স্বামীর ওপর জিদ করেই মাদকের ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ি। বর্তমানে আমি মাদকের পেশায় জড়িত নই।
এ বিষয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা পুলিশ সুপার আনিসুর রহমান ভোরের দর্পণের প্রতিনিধিকে জানান, মাদকের বিরুদ্ধে আমাদের জিরো টলারেন্স। বর্তমানে শহরের বিভিন্ন পাড়া মহল্লায় ছড়িয়ে পড়েছে মাদক বেঁচা কেনা। আমাদের বাহিনী দিনরাত পরিশ্রম করে মাদকের বিরুদ্ধে কাজ করে যাচ্ছে। তারা সর্বদায় চিহ্নিত জায়গাগুলোতে টহল দিচ্ছে। গত মাসের থেকে এই মাসে আরো বেশি মাদক মামলা হয়েছে। মাদক মামলার আসামীদের ধরতে আমরা সব সময় তৎপর। কোনো আসামিকে ছাড় দেয়া হবে না।