প্রতিনিধি ১৫ মে ২০২৪ , ৭:৪৮:০৫ প্রিন্ট সংস্করণ
সোমালিয়ার জলদস্যুদের হাতে জিম্মি হওয়ার পর ভেবেছিলাম মা-বাবাসহ আত্মীয়স্বজনদের আর দেখা হবে না। তখন নামাজ পড়তাম আর আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতাম হে আল্লাহ তুমি আমাদের বাবা-মায়ের বুকে ফিরিয়ে দাও। এভাবেই মৃত্যুর দুয়ারে বসে রাত-দিন কাটাতে হয়েছে ৩৩ দিন।
পরে ১৩ এপ্রিল ভোরে মুক্তিপণের বিনিময়ে জলদস্যুদের হাত থেকে মুক্তি মেলে। আল্লাহ আমাদের কথা শুনেছেন। তবে জলদস্যুরা জাহাজ ছেড়ে গেলে মৃত্যুর ভয় কাটলেও তৎক্ষণাৎ মায়ের কোলে ফেরার কোনো উপায় ছিল না। তাই মুক্তির পর থেকে শুরু হয় মা-বাবার বুকে ফেরার অপেক্ষা।
আজ মা-বাবা তাদের বুকের মানিককে ফিরে পেয়ে দারুণ খুশি। বারবার কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছেন আল্লার দরবারে। বুধবার (১৫) সকালে সোমালিয়ার জলদস্যুদের হাতে জিম্মি হওয়ার ৬৭ দিন পর বাড়ি ফিরে মা-বাবাকে জড়িয়ে ধরে এ কথা বলেন এমভি আব্দুল্লাহর নাবিক সিরাজগঞ্জের কামারখন্দে উপজেলার চর-নুরনগর গ্রামের নাজমুল হক হানিফ। আবু সামা ও নার্গিস খাতুন দম্পত্তির বাড়িতে দেখা যায়, নাবিক নাজমুল মা-বাবাকে বুকে টেনে নিয়ে আদর-ভালোবাসায় জড়িয়ে থাকেন অনেকক্ষণ।
ছেলেকে কাছে পাওয়ার স্বস্তি রূপ নেয় আনন্দ-উচ্ছ্বাসে। তাদের উচ্ছ্বাসে যেন খুশির বাঁধ ভেঙেছে। ছেলের দুই গালে ভালোবাসার চুমুতে ভরিয়ে দেয় তারা। এক পর্যায়ে আত্মীয়স্বজনসহ নাজমুলের গ্রামের মানুষেরা ভির করে। পরিচিত মানুষদের কাছে পাওয়ায় খণ্ড খণ্ড খুশির দৃশ্য। আত্মীয় স্বজন এবং গ্রামবাসী তাকে বরণ করে নেয়। তার ফেরার মধ্য দিয়ে স্বজন-পরিবারের দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটেছে।
নাজমুলের বাবা আবু সামা বলেন, সুস্থভাবে আমার ছেলেসহ ২৩ নাবিককে দেশে ফিরিয়ে আনায় বাংলাদেশ সরকার ও জাহাজ কর্তৃপক্ষের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।ছেলেকে বুকে নিয়ে মা নার্গিস খাতুন বলেন, দিন-রাত ছেলের ছবি এবং মোবাইলে কোনো সংবাদ এলো কিনা এই চিন্তায় বসে থেকেছি। প্রতীক্ষার প্রহর যেন শেষ হতে চাইছে না। নাজমুল অপহৃতের পর থেকেই অসুস্থ হয়ে পড়ে নাজমুলের বাবা। আজ ছেলেকে ফিলে পেয়েছি। ঈদের দিন কীভাবে কেটেছে বলতে পারবো না। ছেলে বাড়িতে ফিরে এসে। আমি ঈদের সকল কিছু আজ রান্না করবো। ছেলেকে নিয়ে এক সঙ্গে খাওয়া দাওয়া করবো।
মা-বাবার পাশে দাঁড়ানো নাজমুল হক বলেন, জিম্মিকালে প্রতিটি মুহূর্ত কেটেছে মৃত্যুর আতঙ্কে। বন্দুক হাতে টহল দিত জলদস্যুরা। ৩৩ দিন যে কীভাবে কেটেছে, তা ব্যাখ্যা করতে পারব না। আজ এই আনন্দ প্রকাশের ভাষা ছিল না আমার। শুধু বলতে চাই, মা-বাবাকে কাছে পাব, এর চেয়ে আর বড় সুখ কী হতে পারে। এই দিনের অপেক্ষায় ছিলাম। আল্লাহ আমাদের কথা শুনেছেন।
প্রসঙ্গ, গত ১২ মার্চ সোমালিয়ান জলদস্যুদের হাতে ভারত মহাসাগর থেকে জিম্মি হন বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহর ২৩ জন নাবিক। এদের মধ্যে বন্দি জাহাজের ক্রু হিসেবে ছিলেন সিরাজগঞ্জের নাজমুল হক। জাহাজটি অপহরণের পর থেকে নাজমুলের ফিরে আসার অপেক্ষায় ছিলেন মা-বাবা, বোনসহ স্বজনেরা।
গত (১৪ এপ্রিল) ভোরে জলদস্যুদের কবল থেকে মুক্ত হন এমভি আব্দুল্লাহ জাহাজসহ ২৩ নাবিক। এরপর জাহাজটি পৌঁছে দুবাইয়ের আল হামরিয়া বন্দরে। সেখান থেকে মিনা সাকার নামের আরেকটি বন্দরে চুনা পাথর ভর্তি করার পর চট্টগ্রাম বন্দরের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। সব মিলিয়ে ৬৫ দিন পর মুক্ত নাবিকরা বাংলাদেশে ফিরেছেন।